শান্তকে লম্বা রেসের ঘোড়া মনে করেন মাশরাফি

তুমুল প্রতিভাবান হয়েও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পরও টিম ম্যানেজমেন্ট তার ওপর আস্থা রাখতো নিয়মিত। এই নিয়ে শান্ত ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবিকে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে নিয়মিত। নিখাদ ক্রিকেটীয় সমালোচনার সীমারেখা ছাড়িয়ে যা অনেক সময় রূপ নেয় ব্যক্তিআক্রমণে। চটকদার সব ট্রলের শিকার হয়ে চাপে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মম ট্রলের শিকার হওয়া ক্রিকেটারের একজন শান্ত।

বিপিএলে ৭ ম্যাচে ৫৬.২০ গড়ে শান্তর রান ২৮১। সর্বশেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৬৬ বলে অপরাজিত ৮৯ রান করেছেন সিলেটেরই এই ওপেনার। সম্প্রতি ব্যাটে রান পেলেও শান্ত এখনও মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেননি। তবে শান্তর কাঁধে হাত রেখেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক মনে করে লম্বা রেসের ঘোড়া হবে শান্ত, ‘যদি বিশ্বকাপ দেখেন, শান্ত কিন্তু পুরো দেশের, আমাদের সবার বিপক্ষে গিয়ে প্রায় দুইশ রান করে এসেছে। পরে আবার স্ট্রাগল করেছে, এখন আবার রান করছে। শান্তকে কিছুটা এসবের ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমি সবসময় যেটা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্ট্রাগলিং পার্ট থাকতে পারে কিছুদিন। মানসিকভাবে শক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যেটা শান্তর ক্ষেত্রে আমি দেখেছি যে, লিটনের মতোই বাইরের জিনিসগুলো ওকে বদার করে না। সেইক্ষেত্রে আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় যে এই ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। আমি বিশ্বাস করি, এই ছেলেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিতে পারবে।'

মাশরাফি মনে করেন তাদের সময় সামাজিক মাধ্যমের ইমপ্যাক্ট অতোটা না থাকায় অনেকের ক্যারিয়ারই লম্বা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে হাতেগোনা একজন-দুজন বা সর্বোচ্চ তিনজন ক্রিকেটার পেতে পারেন, যারা এই ধরনের আক্রমণ ছাড়াই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে লম্বা সময় টিকে থেকেছে। ওই সময় যদি সোশ্যাল মিডিয়া থাকতো (এখনকার মতো), তামিম তাহলে তামিম হতে পারতো না। মুশফিক আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। মাহমুদউল্লাহও একই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি দেখেন, যারা ১০-১২ বছর খেলেছে, এভাবেই (পারফরম্যান্সের উঠা নামার মধ্য দিয়ে) থিতু হয়েছে।'

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটন ভীষণরকম ট্রলের শিকার হয়েছিলেন। তার ধর্ম নিয়েও করা হয় আক্রমণ। এমনকি বিভিন্ন পণ্য বিক্রির পেজে লিটনের রান প্রতি ডিসকাউন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। লিটনের প্রসঙ্গে টেনে মাশরাফি বলেছেন, ‘লিটনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস। তাকে তার ধর্ম টেনেও অনেক কিছু বলা হয়েছে একটা সময়। এইসব চলেছেই। এসবের ভেতর দিয়েই ক্রিকেটারদের খেলতে হবে, কিছু করার নেই। কারণ আপনি তো আরেকজনকে বদলাতে পারবেন না। যেটা করতে পারবেন, তা হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এসব থেকে দূরে থাকা। কারণ এখানে শুধু যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়েই হয়, তা নয়। যখন যাকে মনে হয়… দুটি কমেন্ট করে গেলো, দুটি লাইক পেলো…। এই দেশে লোকে নেতিবাচকগুলোই বেশি পিক করে, পজিটিভ কিছু লিখে তো ফেসবুকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না। এজন্য পজিটিভ জিনিসগুলো ফেসবুকে কম পাবেন, ব্যক্তি আক্রমণের ক্ষেত্রে।’

মাশরাফি আরও বলেছেন, ‘লিটনের কিন্তু এটাই হয়েছে। আজকে সবাই ওকে বাহবা দিচ্ছে। শুরুতে তো সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও জঘন্য অবস্থায় ছিল ও। আজকে বাংলাদেশ দলে থিতু হয়েছে। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন বিশ্বাস করতাম, লিটনের যে বেসিক আছে…(বড় কিছু করবে) আজকে অনেকেই বলেন যে, লিটন যতক্ষণ ব্যাটিং করে, টিভির সামনে থেকে উঠতে ইচ্ছে হয় না… কিন্তু ওই সময় (চণ্ডিকা) হাথুরুসিংহে ছিলেন, আমি অধিনায়ক ছিলাম, আমরা বিশ্বাস করতাম যে এই ছেলেটা বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ।’