সাকিব প্রসঙ্গ বারবার আসতেই তাইজুল বললেন, ‘খেলি তো আমি’

তাইজুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলন মানেই সাকিব আল হাসান অবধারিতভাবে আসবেনই! ম্যাচে সাকিব থাকুক বা না থাকুক, তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সাকিব-তাইজুল একসঙ্গে খেলেছেন, এমন ম্যাচে তাইজুল ভালো পারফরম্যন্স করে সংবাদ সম্মেলনে এলেও সাকিব প্রসঙ্গ উঠে আসতো। আবার একা খেলেছেন, সেইসব ম্যাচেও থাকতো বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে নিয়ে প্রশ্ন। সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে তাইজুল ছিলেন বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠলে বাঁহাতি স্পিনার স্পষ্ট বার্তায় উত্তর দিলেন, ‘খেলি তো আমি।’

সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে খেলতে নেমে তাইজুলের ঘূর্ণি জাদুতে ৬ উইকেটে ১৪০ রানে দিন শেষ করে প্রোটিয়ারা। সফরকারীদের চাপে রাখতে তিনি দারুণ ভূমিকা রাখলেন। অথচ সাকিব থাকলে হয়তো তার খেলাই হতো না। খুব কম ম্যাচেই বাংলাদেশ দুই জন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছে। স্বাভাবিকভাবেই সাকিবের বিদায় তাইজুলের ক্যারিয়ারের জন্য স্বস্তিকর!

তাইজুলের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তার কথা, ‘জিনিসটা কী, সাকিব ভাই থাকলেও তার কারণে আমি উইকেট পাই, তিনি না থাকলেও তার কারণে আমি উইকেট পাই। মানে বিষয়টি এই রকম আরকি? খেলি তো আমি। সত্যি কথা বলতে কোনও সময় আমার আক্ষেপের কিছু নেই। আমার ভালো লাগছে, বড় বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে পারাটা আনন্দের বিষয়, সেটা যেই হোক। তাদের অভিজ্ঞতা আছে- সাকিব ভাই বলেন, তামিম ভাই বলেন কিংবা মুশফিক ভাই অথবা রিয়াদ ভাই। আমাদের দেশে মূল্যায়ন কতটুকু করে জানি না। একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে নেওয়ার অনেক কিছু আছে।’

সাকিবের কারণে নিয়মিত খেলতে পারেননি তাইজুল। এক ম্যাচ খেলেছেন তো, আরেক ম্যাচে বেঞ্চে বসে ছিলেন। এতদিন কি নিজেকে বঞ্চিত মনে করেছেন তাইজুল? তার পাল্টা প্রশ্ন, ‘বঞ্চিত বলতে… আপনার প্রশ্নটা একটু কেমন যেন হয়ে গেলো! বঞ্চিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বে অনেকে আছে, বড় খেলোয়াড় ছিল, তারা খেলার সময় অন্যরা সুযোগ কম পেতো। মুরালিধরনের সময় হেরাথ খেলতে পারেনি। হেরাথ অনেক উইকেট পেয়েছে, দীর্ঘদিন খেলেছে। আমিও ইনশাআল্লাহ… সামনে দেখি ভালো কিছু হয় নাকি।’

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব। তার পরেই আছেন তাইজুল। সোমবার ৫ উইকেট নিয়ে ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ ছুঁয়েছেন। এই মুহূর্তে তার উইকেট সংখ্যা ২০১। নিজের ক্যারিয়ারকে মোটেও খারাপ মনে করেন না বাঁহাতি এই স্পিনার, ‘ক্যারিয়ার যে খুব খারাপ আছে তাও বলবো না। আলহামদুলিল্লাহ ক্যারিয়ার ভালো আছে। সব কন্ডিশনে সব সময় তিন স্পিনার খেলাতে পারবেন না। অনেক জায়গায় এক স্পিনার থাকে। এরকম হয়নি যেখানে তিন স্পিনারের জায়গায় ১-২ জন খেলিয়েছে। কখনও দলে থাকা, কখনও বাদ পড়া… আমার যতদিনের ক্যারিয়ার, তাতে ম্যাচ আরও বেশি হওয়া উচিৎ ছিল। সে জায়গা থেকে হয়নি আরকি।’

সাকিবের সঙ্গে নিজের মৌলিক পার্থক্য বলতে গিয়ে তাইজুল বলেছেন, ‘পার্থক্য একটা বিষয়ে- আমি অনেক সময় ধরে বল করতে পারি। আমাকে যদি বলে টানা ১৫-২০ ওভার করতে, আমি করতে পারবো।’ 

২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে অভিষেক তাইজুলের। অভিষেক ম্যাচেই তিনি আলো ছড়িয়েছিলেন। ১০ উইকেটে ম্যাচ হারলেও বাঁহাতি এই স্পিনার নেন ৫ উইকেট। অভিষেক রাঙানোর পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটু একটু করে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। সোমবার ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। দেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুইশ উইকেট ছিল কেবল সাকিবের। ৫৪ ম্যাচ খেলে তিনি এই মাইলফলকে পৌঁছান, তাইজুলের লাগলো ৪৮ ম্যাচ।

নিজের অর্জন নিয়ে তাইজুল বলেছেন, ‘না আসলে অনুভূতি তো অবশ্যই ভালো লাগার। বিশ্বে হয়তো অনেক বোলারই আছে, যাদের ২০০ উইকেট আছে বা ৩০০-৪০০ আছে। আমরা অনেক বেশি টেস্ট খেলি না বলে সংখ্যাটা কম। তারপরও যে ২-১ জন আছি, তার মধ্যে আমি একজন।’