১৭ উইকেট পড়ার দিনে হার চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে

চতুর্থ দিনের সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ ওভারে ১০৯/৭ (জাকের ১৫*, হাসান ০*, তাইজুল ৪, মিরাজ ৪৫, লিটন ২২, মুমিনুল ১১, দিপু ৪, জয় ৬, জাকির ০), লক্ষ্য ৩৩৪ রানের। দরকার ২২৫ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬.১ ওভারে ১৫২/১০ (সিলস ১*, রোচ ১২, শামার ৪, আলজারি ১৭, ডা সিলভা ২২, গ্রিভস ২, আথানেজ ৪২, হজ ১৫, ব্র্যাথওয়েট ২৩, কার্টি ৩, লুইস ৮)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৯৮ ওভারে ২৬৯/৯ (শরিফুল ৫*, তাসকিন ১১*, জাকের ৫৩, তাইজুল ২৩, মিরাজ ২৩, লিটন ৪০, মুমিনুল ৫০, দিপু ১৮, জাকির ১৫, জয় ৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ১৪৪.১ ওভারে ৪৫০/৯ (গ্রিভস ১১৫*, শামার ১১*, সিলস ১৮, রোচ ৪৭, আলজারি ৪, ডা সিলভা ১৪, ব্র্যাথওয়েট ৪, কার্টি ০, লুইস ৯৭, হজ ২৫, আথানেজ ৯০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা নিশ্চয় হতাশ, তবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বোলারদের উইকেট উৎসবের দিনে আরেকটা দিন হাতে পেলেন তারা। ১৭ উইকেট পড়েছে অ্যান্টিগা টেস্টের চতুর্থ দিনে। আলো কেড়েছেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। ছয় উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংস। কিন্তু প্রথম ইনিংসে বিশাল পুঁজির উপকারিতা মিলেছে। ৩৩৩ রানের লিড পেয়েছে তারা।

তারপর কেমার রোচের গতির ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ২৩ রানের মধ্যে চার উইকেট নেই তাদের, যার তিনটিই ক্যারিবিয়ান পেসারের। এরপর আলজারি জোসেফ ও জেইডেন সিলস বল হাতে আগুন ধরান। যা একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা দেখা গেছে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৬ রানের জুটিতে। লিটন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ রানে আউট হওয়ার পর জাকের আলীকে নিয়ে ৪৩ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়ে আউট হন মিরাজ। ৪৬ বলে ৪৫ রান করে থামেন তিনি।

প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে জাকেরের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি তাইজুল। সপ্তম ব্যাটার হয়ে সিলসের তৃতীয় শিকার হন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থ দিনেই জয় পেতে মরিয়া ছিল। কিন্তু আলোর স্বল্পতা বাধ সাধে। তাতে বাংলাদেশ আরও একটি দিন খেলার সুযোগ পেলো। ৭ উইকেটে ১০৯ রান তাদের। হাতে আছে তিন উইকেট, জিততে করতে হবে ২২৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

সিলস ও রোচ স্বাগতিকদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন।

সিলসের তৃতীয় শিকার তাইজুল

জেইডেন সিলস তার তৃতীয় উইকেট তুলে ‍নিলেন। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে তাইজুল ইসলামের মিডল স্টাম্প ভাঙলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার। ১০৮ রানে সাত উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে হার।

বাংলাদেশের স্কোর একশ ছাড়ানোর পর আউট মিরাজ

৩৩৪ রানের লক্ষ্যে নেমে একের পর এক উইকেট হারিয়ে হারের দোরগোড়ায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে লড়াই করছিল তারা। কিন্তু জেইডেন সিলসের বলে উইকেটকিপার জশুয়া ডা সিলভার অসাধারণ ক্যাচে তাকে থামতে হলো। ৪৬ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৪৫ রানে আউট হয়েছেন তিনি। দলীয় স্কোর একশ পার করার পর মাঠ ছাড়তে হলো মিরাজকে। ২৭.৩ ওভারে ১০২ রানে ছয় উইকেট হারালো বাংলাদেশ। 

লিটনের বিদায়ে বড় বিপদে বাংলাদেশ

অ্যান্টিগা টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো শামার জোসেফের কাছে উইকেট হারালেন লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে বোল্ড হয়েছিলেন বাংলাদেশি ব্যাটার। এবার আলজারি জোসেফকে ক্যাচ দেন মাত্র ২২ রান করে। ২৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর ক্রিজে নেমে হাল ধরতে পারেননি তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়েন লিটন। বাংলাদেশ ৫৯ রানে হারালো পঞ্চম উইকেট।

রোচের তোপে চার উইকেট নেই বাংলাদেশের

৩৩৪ রানের লক্ষ্যে নেমে চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। ২৩ রানে নেই তাদের চার ব্যাটার।

চার ওভারে সাত রানের মধ্যে দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়কে হারায় বাংলাদেশ। জাকিরকে শূন্যতে বোল্ড করেন কেমার রোচ। জয় ৬ রানে জেইডেন সিলসের শিকার। শাহাদাত হোসেন দিপুও বেশিক্ষণ টেকেননি। রোচের বলে জশুয়া ডা সিলভাকে ক্যাচ দেন তিনি ৪ রানে। উইন্ডিজ পেসারের তৃতীয় শিকার হন মুমিনুল হক, তাকেই ফিরতি ক্যাচ দেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড ৩৩৩ রানের

আট নম্বর উইকেট পেয়ে গেলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় ১৪৪ রানে আলজারি জোসেফ আউট হলেন। ১৭ রান করে তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের বলে জাকের আলীর ক্যাচ হন। এরপর শামার জোসেফকে আউট করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তাসকিন। কেমার রোচকে নিজের ষষ্ঠ শিকার বানান বাংলাদেশি পেসার। ১৫২ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাসকিন পান ছয় উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড ৩৩৩ রানের। 

তাইজুলের শিকার ডা সিলভা

তাইজুল ইসলামের বলে ইনিংসের একমাত্র ছক্কা মারেন জশুয়া ডা সিলভা। তিন বল পর কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে বদলি ফিল্ডার হাসান মুরাদের ক্যাচ হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার। ১৮ বলে দুই চার ও এক ছয়ে ২২ রানে বাংলাদেশি স্পিনারের শিকার হলেন তিনি। ১২৪ রানে সাত উইকেট পড়লো স্বাগতিকদের।

প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান গ্রিভসকে আউট করলেন তাসকিন

প্রথম ইনিংসে দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে রেখেছিলেন জাস্টিন গ্রিভস। দ্বিতীয় ইনিংসে অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে তিনি হাল ধরতে পারেননি। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তার চতুর্থ শিকার হলেন এই ব্যাটার। মাত্র ২ রান করে বোল্ড হন তিনি। ৯৫ রানে ৬ উইকেট হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

হজের পর আথানেজও আউট

লাঞ্চের আগে জুটি বাঁধেন, দ্বিতীয় সেশনে কাভেম হজ ও আলিক আথানেজ ক্রিজে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৫০ রানের এই জুটি ভেঙে দিয়ে তাসকিন আহমেদ ব্রেকথ্রু আনেন। হজ বিদায় নেন। তারপর মেহেদী হাসান মিরাজ আথানেজকে ৪২ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। চার রানের ব্যবধানে দুটি উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯৩ রানে নেই তাদের পাঁচ উইকেট।

তাসকিনের তৃতীয় শিকার হজ

কাভেম হজকে কয়েকবার ভড়কে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। অবশেষে পেয়ে যান তার উইকেট। আউটসাইড এজ হয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটার। ৮৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারালো স্বাগতিকরা। আলিক আথানেজের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৫০ রানের।

রিভিউ নিয়ে টিকে গেলেন আথানেজ

লাঞ্চের পর তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারেই আলিক আথানেজের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন করেন। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আঙুল তুলে দেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটার রিভিউ নিতে একটুও দেরি করেননি। ডিআরএসে উইকেট মিসিং হওয়ায় বেঁচে যান আথানেজ। পরের ওভারে কাভেম হজের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আপিল করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আম্পায়ার নিতিন মেনন নাকচ করলে বাংলাদেশ রিভিউ নেয়, এবারও তাদের বিরুদ্ধে রায় আসে। রিভিউ হারায় সফরকারীরা।

প্রথম সেশন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড ২৪২ রানের

খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তখনও ১৮১ রানে পিছিয়ে তারা, হাতে ছিল এক উইকেট। সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না। নতুন বল হাতে চমক দেখান তাসকিন আহমেদ। ১০ রানের ব্যবধানে তিনি দুই উইকেট তুলে নেন। 

তাসকিনের বলে তৃতীয় ওভারেই দুই ওপেনার বিদায় নিতে পারতেন। তার দ্বিতীয় বলে ব্র্যাথওয়েটের সহজ ক্যাচ ছাড়েন শাহাদাত হোসেন দিপু। পরের বলে লু্ইসের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আপিল করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু আম্পায়ার দেননি। অথচ রিভিউ নিলে উইকেটটি পেতো তারা, রিপ্লেতে তেমনটাই দেখা গেছে।

২৫ রানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন তাসকিন। মিকাইল লুইসকে (৮) লিটন দাসের ক্যাচ বানান। তারপর ব্র্যাথওয়েটকে ২৩ রানে মাহমুদুল হাসান জয় স্লিপে ক্যাচ নেন। কিসি কার্টিকে (৩) দলীয় ৩৯ রানে শরিফুল ইসলাম ফেরান। এই ক্যাচও নেন জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে আলিক আথানেজ ও কাভেম হজ স্বাগতিকদের লিড বাড়িয়ে নিতে শুরু করেছেন। ৮২ বলে তাদের ২২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে প্রথম সেশন শেষ করেছে উইন্ডিজ। এই জুটি আরও আগে ভাঙতে পারতো। শর্ট কাভারে আথানেজের ক্যাচ ছেড়ে দেন মুমিনুল হক। প্রথম সেশন শেষে ক্যারিবিয়ানদের লিড ২৪২ রানের। 

এবার জয়ের ক্যাচ হলেন ব্র্যাথওয়েট

এবার জয়ের ক্যাচ হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ৩৫ বলে ২৩ রান করে শরিফুল ইসলামের শিকার হলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারালো স্বাগতিকরা।

তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার কার্টি

সপ্তম স্টাম্প বরাবর ভালো লেংথের বল করলেন তাসকিন আহমেদ, পুরস্কারও পেয়ে গেলেন। কিসি কার্টিকে তৃতীয় স্লিপে মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্যাচ বানালেন বাংলাদেশের পেসার। ৩৫ রানে ২ উইকেট হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩ বল খেলে ৩ রানে থামলেন কার্টি। ১০ রানের ব্যবধানে তাসকিন দুটি উইকেট আদায় করলেন।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ভোগানো লুইস ৮ রানে আউট

প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপর্যয় সামাল দেওয়ার নায়ক মিকাইল লুইস এবার দুই অঙ্কের ঘরেই পৌঁছাতে পারলেন না। আগের ইনিংসে ৯৭ রান করে উইন্ডিজ ওপেনার এবার ৮ রানে বিদায় নিলেন। তাসকিন আহমেদের বলে পঞ্চম ওভারে লিটন দাসের ক্যাচ হন তিনি। বাংলাদেশের কট বিহাইন্ডের আপিলে আম্পায়ার আঙুল তুললেও রিভিউ নেন এই ব্যাটার। তবে বাঁচতে পারেননি লুইস, ১৮ বলের ইনিংস শেষে হাঁটতে হয়েছে প্যাভিলিয়নে।

তৃতীয় ওভারেই দুই ওপেনার বিদায় নিতে পারতেন। তাসকিনের দ্বিতীয় বলে ব্র্যাথওয়েটের সহজ ক্যাচ ছাড়েন শাহাদাত হোসেন দিপু। পরের বলে লু্ইসের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আপিল করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু আম্পায়ার দেননি। অথচ রিভিউ নিলে উইকেটটি পেতো তারা, রিপ্লেতে তেমনটাই দেখা গেছে।

চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে না নেমে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা

অ্যান্টিগা টেস্টে ফলো অন এড়ানোর পর সোমবার চতুর্থ দিনে আর ব্যাটিংয়ে নামেনি বাংলাদেশ। ১৮১ রানে পিছিয়ে থেকেই ইনিংস ঘোষণা করেছে তারা। ৯ উইকেটে ২৬৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল। নতুন দিনে বোলিং শুরু করেছে সফরকারীরা।

২ উইকেটে ৪০ রানে রবিবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে এদিন তারা আরও ৭ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ২২৯ রান। মুমিনুল হক ৫০ রান করে নজর কাড়েন। লিটন দাস (৪০) অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি করতে ব্যর্থ হন। জাকের আলী দ্বিতীয় ফিফটি করে ৫৩ রানে আউট হন। তাইজুল ইসলাম তার সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬৮ রানের জুটি গড়েন। তাদের জুটিতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসকে চতুর্থ দিনে নিতে পারে। তবে আর ব্যাটিং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।