সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে গত ৫ নভেম্বর নিয়োগ দেওয়া হয় দেশি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। প্রথম পরীক্ষাতে মোটামুটি সফলই বলা যায় সালাউদ্দিনকে। জাতীয় দলে বাংলাদেশের এই কোচ মূলত ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলেও ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে উন্নতির ছাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। অধিনায়ক লিটন দাসও মনে করিয়ে দিলেন, সালাউদ্দিন থাকায় তরুণরা চাপমুক্ত হয়ে ক্রিকেটটা খেলতে পারছে। যদিও সালাউদ্দিন নিজে কোনও কৃতিত্ব নিতে চাইলেন না। সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে দেশে ফেরার আগে লিটনের ফর্ম ছাড়াও দলের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে লিটন দারুণ করছেন। কিন্তু তার ব্যাটে রান নেই, আপনি নিশ্চয়ই কাজও করছেন। কোথায় সমস্যা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়?
সালাউদ্দিন: দেখুন, যে কোনও ব্যাটারের খারাপ সময় আসতেই পারে। টেকনিক্যালি ওর খুব একটা সমস্যা নেই। আমার মনে হয় এটা থেকে সে খুব তাড়াতাড়ি বের হবে। সে আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার, যে কোনও ফরম্যাটেই বলেন। এটা খুব বেশি চিন্তা করারও বিষয় না, আমি এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না।
ব্যাটিংটা নিয়ে আমি মনে করি অত চিন্তা করতে হবে না। কারণ যখন একজন ব্যাটার রান না করে সেটা খেলোয়াড়ের না যত খারাপ লাগে, আমরা যারা সঙ্গে কাজ করি তাদেরও অনেক খারাপ লাগে। এরকম খারাপ সময়ে মানসিকভাবে আর একটু রিল্যাক্স থাকলে ভালো খেলবে এবং এই সময় থেকে বেরিয়ে যাবে।
অধিনায়ক হিসেবে লিটনের পারফরম্যান্স কতটা উপভোগ করেছেন?
সালাউদ্দিন: অধিনায়কের কথা যদি বলেন, অসাধারণ। গত বছর আমরা হয়তো কুমিল্লাতে লিটনকে অধিনায়ক প্রথমেই বানিয়েছিলাম। হয়তো এ নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি যখন কোনও সিদ্ধান্ত নিই, অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিই। কারণ একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা, খেলা সম্পর্কে ধারণা এবং খেলা সম্পর্কে কতটা দূরদর্শী এসব ভেবে কিন্তু আমি অনেক সিদ্ধান্ত নিই। আমার কাছে মনে হয়েছে সে অধিনায়ক হওয়ার মতো। স্বাভাবিক যখন খেলা চলে তখন সে খেলার চেয়ে ৩-৪ ওভার আগে থাকে। একজন অধিনায়কের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে খেলা থেকে আগে থাকে কিনা, সে বুঝতে পারে কিনা ঘটনা কী ঘটছে, দুই ওভার পরে কী ঘটনা ঘটতে পারে। আমার মনে হয় এটা ওর ভালো গুণ। আপনারাই দেখেছেন আমরা স্বল্প পুঁজিতে দুইটা ম্যাচ বের করছি এবং আজকেও ফিল্ড সেটআপ থেকে শুরু করে বোলারদের ব্যবহার করা। অধিনায়কত্বের জন্য তার অসাধারণ একটা গুন আছে।
সবাই বলছে আপনি কোচ হিসেবে থাকায় তরুণ জাকের আলী কিংবা শেখ মেহেদীরা সাহস নিয়ে খেলতে পারছেন...
সালাউদ্দিন: না, এরকম কিছুই না। আমার মনে হয় জাকের, ব্যাটার হিসেবে সে যথেষ্ট পরিণত। এটা আমি অনেক আগেও বলছি। সে খেলা বুঝে ক্রিকেট খেলে, এটা যে কোনও পরিস্থিতিতেই হোক। বাকি যারা আছে তারা হয়তো দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে খেলেছে, একটা কমফোর্ট জোন আছে। অন্য যে ছেলেরা আছে, আমি মনে করি তারা হয়তো আমার সঙ্গে অনেক কমফোর্ট সবকিছুতেই। শেয়ার করতে পারে, হয়তো তারা কথা বলতে পারে। আমি বলবো যে, দলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলের যে পরিবেশটা ছিল, প্রধান কোচ সিমন্স আমার মনে হয় এ ব্যাপারে অনেক উদার মনের। সবসময় ইতিবাচক চিন্তাই করতো। এটা পুরো দলেরই সাফল্য এখানে ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে আমি মনে করি পুরো দল আমরা একটা সঠিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিলাম। এই কারণে আমি মনে করি ভালো করেছে।
আপনার পিতৃতুল্য আচরণ পেয়ে তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে কিনা?
সালাউদ্দিন: না, এটা স্বাভাবিক। যেহেতু আমি দেশি। আমার কাছ থেকে আদরটা তারা হয়তো একটু বেশি পেতেই পারে। এটা নতুন কিছু না। ছেলেরা যখন খারাপ খেলে, খারাপ সময়ে ছেলেদের পাশে বেশি থাকা উচিত ভালো সময়ের চেয়ে। আমার মনে হয় ওটা একটা কোচের বেশি জরুরি। কারণ ভালো যারা খেলে তাদের জন্য সবাই আছে।
পুরো সিরিজে জাকের দারুণ ব্যাটিং করেছে। আপনিও তাকে বহুদিন ধরে চেনেন। অন্যদের থেকে তিনি কোন জায়গায় আলাদা?
সালাউদ্দিন: দেখুন, জাকেরকে আমি অনেকদিন ধরেই চিনি। আমার মনে হয় সে অনেক সেন্সেবল, সে সেভাবেই গড়ে উঠেছে। ঢাকা লিগ বলেন, বিপিএল বলেন সে বিভিন্ন পজিশনে খেলে অভ্যস্ত এবং সে জানে কোন ভূমিকায় তাকে কীভাবে খেলতে হয়। এটা তার নিজস্ব যোগ্যতায় হয়েছে, ওইভাবে চিন্তা করেই বড় হয়েছে এবং সে জানে কখন কী করতে হবে। এই ম্যাচুরিটিটা আমার মনে হয় আমাদের অন্যান্য ব্যাটারদের মাঝে আসবে। এটা যদি আরও সবার মাঝে আসে আরও ভালো দল হবো।
ভবিষ্যতে জাকেরকে কোথায় দেখতে চান?
সালাউদ্দিন: জাকেরের কথা পরে, আমি আসলে প্রত্যেকটা ছেলেকেই ভালো অবস্থায় দেখতে চাই এবং ভবিষ্যতে যেন তারা আরও ভালো অবস্থায় যায়। এখানে পুরো দলটাই তো আমার, এখানে নির্দিষ্ট কেউ নিজের খেলোয়াড় না। জাকের যেভাবে খেলছে, ব্যাটার হিসেবে যে ম্যাচুরিটিটা আছে, পরিস্থিতি বুঝে যে ক্রিকেট খেলা বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার যে সামর্থ্যটা আছে, সেটা তাকে হয়তো বহুদূর নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সবারই উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। আমরা চেষ্টা করি দল হিসেবে। ব্যক্তিগতভাবে সবাই উন্নতি করবে এবং সেই সঙ্গে দল হিসেবে যেন আমরা আরও ভালো হতে পারি। কারণ এই সফর শুরুর আগেই আমার একটা কড়া কথা ছিল, আমরা কেউ ব্যক্তিগত চিন্তা করবো না, দল নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো। এটা আমরা টেস্ট থেকেই শুরু করেছি। এ কারণে হয়তো ফলাফল পাচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও ভালো করার সুযোগ আছে।
প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সফল। দেশি কোচ হিসেবে প্রমাণের কিছু কি আছে?
সালাউদ্দিন: দেখুন, প্রমাণ করার কিছু নেই। আমার কাজ হলো ছেলেদের উন্নতি হচ্ছে কিনা, ছেলেরা ঠিক মতো খেলছে কিনা। কে কী ভাবলো সেটা নিয়ে আমি... কেউ যদি পারফর্ম নাও করতো যদি ছেলেদের উন্নতি আমার চোখে পড়ে সেটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। মানুষের ভাবনা দিয়ে তো আমার কিছু হবে না।
ভবিষ্যতে প্রধান কোচ হতে রাজি আছেন কিনা?
সালাউদ্দিন: এখন এই নিয়ে কথা বলতে চাই না। কারণ আমার মনে হয় আমি যে রোলে আছি, সেটা উপভোগ করছি। আমি যদি ছেলেদের সহযোগিতা করতে পারি তাহলে আমার জন্য সেটাই যথেষ্ট।