প্রথম ম্যাচে বরিশালকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারানোর পর সামাজিক মাধ্যমে খোঁচা দিয়ে রংপুর লিখেছিল, ‘বরিশালের লঞ্চে ধাক্কা, আতঙ্কে যাত্রীরা।’ সে ধাক্কার জবাব বেশ ভালো করেই দেওয়ার সুযোগ ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের। কিন্তু কাইল মায়ার্সের শেষ ওভারে ৩টি করে ছক্কা ও চারে ৩০ রান তুলে রংপুরকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন নুরুল হাসান সোহান।
রংপুরের জিততে শেষ দুই ওভারে ৩৯ রানের প্রয়োজন ছিল। খুশদিল প্রথম দুই বলে ছক্কা মেরে ব্যবধান কমান ২৭ রানে। এরপর মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে খুশদিলকে ফেরান জাহানদাদ খান। একই ওভারে শেখ মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আউট হন। জাহানদাদকে রিটার্ন ক্যাচ দেন মেহেদী, সেই ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অন্যপ্রান্তে থাকা ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানের বাঁধার মুখে পড়েন বোলার। ফিল্ডারদের আপিলের প্রেক্ষিতে থার্ড আম্পায়ার মেহেদীকে আউট দেন। কেন না জাহানদাদের ক্যাচ ফেলতে ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের ব্যাটারের প্রভাব ছিল! ওই ওভারে আরও এক রান খরচ করে জাহানদাদ তুলে নেন আরও একটি উইকেট। সবমিলিয়ে ১৯তম ওভারে তিন উইকেট শিকার করেন বরিশালের এই বোলার।
বরিশালকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরানোর পরও মায়ার্সের নখদন্তহীন বোলিংয়ে জন্য হার মানতে হয়েছে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। ক্রিজে সোহান। বাংলাদেশি ব্যাটারদের এমন কোনও ইতিহাস নেই শেষ ওভারে এত রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানোর। সোহান যেন আজ বাজি ধরেই নেমেছিলেন। ছয় বলে তিনটি চার আর তিনটি ছক্কা মেরে দলকে টানা ষষ্ঠ জয়ের আনন্দে ভাসান রংপুরের অধিনায়ক। ৭ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫৭.১৪ স্ট্রাইকরেটে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
শুরু থেকেই অবশ্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল রংপুরের হাতে। বরিশালের দেওয়া ১৯৮ রানের জবাবে খেলতে নেমে তৌসিফ খান তুষারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু পায় গতবারের রানার্সআপরা। যদিও আগের ম্যাচগুলোর পারফর্মার অ্যালেক্স হেলস (১) ও সাইফ হাসান (২২) দ্রুত বিদায় নিলে কিছুটা চাপ পড়ে। তবে সেই চাপকে দূর করেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটার ইফতেখার আহমেদ ও খুশদিল। ইফতেখার ৩৬ বলে খেলেন ৪৮ রানের ইনিংস এবং খুশদিল ২৪ বলে সমান রান করেন। ১৭তম ওভারে পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি দারুণ বোলিং করে বরিশালকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন। ১৮ ও ১৯তম ওভারে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেও শেষ ওভারে হতাশ করে।
বরিশালের বোলারদের মধ্যে জাহানদাদ সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন। একটি করে উইকেট নেন তানভীর আহমেদ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, ফাহিম আশরাফ ও রিশাদ হোসেন।
এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় ফরচুন বরিশাল। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে দারুন জুটি গড়েন। ৬১ বলে ৮১ রানের এই জুটি ভাঙে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে শান্ত আউ্ট হলে। টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থ ম্যাচে দ্যুতি ছড়ান তিনি। ৩০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার মারে ৪১ রান করেন শান্ত। সঙ্গীকে হারিয়ে একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন তামিমও। ৩৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এদিন টি-টোয়েন্টিতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তামিম।
তৃতীয় উইকেটে নেমে ঝড় তোলেন মায়ার্স ও তাওহীদ হৃদয়। তাদের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন আকিফ জাভেদ। ১৮ বলে ১ ছক্কা ও ১ চারের মারে ২৩ রান করে ক্যাচ দেন হৃদয়। এরপর ক্রিজে নেমে সাইফউদ্দিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৪ বলে ২ রানে থামে তার ইনিংস। তবে চমক দেখান ফাহিম। মায়ার্সের সঙ্গে জুটি গড়ে চড়াও হন রংপুরের বোলারদের ওপর। শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে ৬ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারের খেলেন ২০ রানের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া মায়ার্স হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ২৭ বলে। শেষ পর্যন্ত ২৯ বলে ৭ ছক্কা ও ১ চারের মারে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ঝড়ো ব্যাটেই মূলত ১৯৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বরিশাল।
রংপুরের পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আকিফ। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিলেও ৩ ওভারে ৪৭ রান খরচ করেছেন কামরুল ইসলাম।