আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাওয়ার পরামর্শ

ষড়যন্ত্রের শিকার তাসকিন!

তাসকিনশনিবার অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। এর মধ্যে পেসার তাসকিন আহমেদকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনেকেই বাঁকা চোখে দেখছেন।
বিসিবির আইন উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খানের মতে, তাসকিন পুরোপুরি ‘ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ে’র শিকার। তাকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি উল্টো নিজেদের গঠনতন্ত্রের নিয়ম ভেঙেছে বলে অভিযোগ তার। আইসিসির প্রতিবেদনের বেশ কিছু অসামঞ্জস্য তুলে ধরেছেন তিনি। একইসঙ্গে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখাও করেছেন তিনি।
নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, যেই ম্যাচে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পয়াররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেই ম্যাচে তাসকিনের কোনও নির্দিষ্ট ডেলিভারির কথা তারা সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করেননি, শুধু বলেছেন তারা খুব 'উদ্বিগ্ন'।




আইসিসির পরীক্ষায় তাসকিনের স্টক ডেলিভারি ও ইয়র্কারে কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার সময় তার ৯টা বাউন্সারের মধ্যে মাত্র ৩টিতে সমস্যা পাওয়া গেছে। ব্যাপার হচ্ছে, এই নয়টা বাউন্সার তাসকিনকে করতে হয়েছে মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে! ধর্মশালা থেকে চেন্নাই দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তির পর এই অবৈধ বাউন্সার ৩টি ছিল তুলনামূলক কম গতির। অথচ ম্যাচ কন্ডিশনে কোনও বোলারকেই এত কম সময়ে এত বেশি বাউন্সার করতে হয় না! 

001


002

003

রিপোর্টে বলা হয়েছে ম্যাচ অফিসিয়াল বা আম্পায়ার সন্দেহ প্রকাশ করেন কিন্তু তারা কোথাও, কেন তারা সংশয়  প্রকাশ করেছেন সেটি বলা হয়নি। তাসকিনের দোষ বা ত্রুটি কী— তারও ব্যাখা দেওয়া হয়নি। কোন সন্দেহ বা সংশয়ের ভিত্তিতে তাসকিনকে অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট দিতে হলো—তার উল্লেখ্য আইসিসির রিপোর্টে নেই।

এই আইনজীবী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই ম্যাচে তাসকিন অভিযুক্ত হয়েছেন, সেই ম্যাচে তিনি কোনও বাউন্সার করেননি। যে সন্দেহজনক ডেলিভারি তিনি ম্যাচ কন্ডিশনে করেননি, সেই ডেলিভারি ল্যাবে তাকে করতে বলার কথা নয়। করলেও তার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যায় না।

তাসকিনের বাউন্সারে যদি সমস্যা থেকেও থাকে, নিয়ম হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে বোলারকে সতর্ক করে দেওয়া, যে ভবিষ্যতে ম্যাচ কন্ডিশনে এমন ডেলিভারি করলে তাকে নিষিদ্ধ করা হবে! কিন্তু তাসকিনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যা আইনসঙ্গত নয়। এটি সন্দেহাত‌‌‌ীতভাবে সত্য যে তাকে বাউন্সার দেওয়ার জন্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। তাহলে তাকে পরীক্ষায় কেন ৯টি বাউন্সার করতে বলা হলো?

আইসসি ২.২.৬ ধারা অনুযায়ী পরীক্ষার সময় ছয়টি বাউন্সার দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু তাকে ৯টি বাউন্সার করানো হয়েছে, যা আইসিসির ধারাবিরোধী। যদি তাসকিনের গুড লেন্থ আর ইয়ার্কার ডেলিভারি বৈধ হয় আর বাউন্সরের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র যদি অবৈধ হয় তাহলে তো এটি স্পষ্ট যে তাকে বোলিং অ্যাকশনের জন্য তাকে নিষিদ্ধ করার কিছু নেই। ধারা অনুসারে তাসকিন অবৈধ অ্যাকশনে বোলিং করছেন কি না—সেটি ধরার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে স্টক ডিলিভারি ও ইয়ার্কারের ক্ষেত্রে বোলিং ডেলিভারি বৈধ থাকে তাহলে তাকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে।

আইসিসির ধারা ২.২.১৩ বলে যদি কোনও খেলোয়াড়কে পর্যবেক্ষণের সময় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তার নির্দিষ্টি কোনও ডেলিভারিতে সমস্যা রয়েছে কিন্তু স্টক ডেলিভারিতে কোনও সমস্যা নেই তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেওয়া যেতে পরে। তবে তাকে সতর্ক করা যেতে পারে এ ধরনের ডেলিভারি তিনি করতে পারবেন না।

যেহেতু তাসকিনের স্টক ডেলিভারি বৈধ এবং ৯টির মধ্যে মাত্র তিনটি বাউন্সার অবৈধ সেহেতু তার শাস্তি হতে পারে সতর্কতা, নিষিদ্ধ নয়। তাই বিসিবির এখন উচিত এটি পুনর্বির্বেচেনার আবেদন করা এবং যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করে সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত 'কোর্ট অব আরব্রিটেশন ফর স্পোটর্স' এ মামলা করা।

/আরএম/এমআর/এমপি/এমএনএইচ/