মরুর বুকে ‘ছিন্নভিন্ন’ বাংলাদেশের ক্রিকেট

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। পাকিস্তানে যেতে আরব আমিরাতে থামতে হবে বাংলাদেশকে। বিসিবিও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগে খানিকটা প্রস্তুতির জন্যই আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের ব্যবস্থা করে। অথচ র‌্যাঙ্কিংয়ের পিছিয়ে থাকা দলটির কাছে বাংলাদেশকে হতে হলো বিধ্বস্ত। মরুক বুকে আরব আমিরাতের ক্রিকেটারদের সামনে ‘ছিন্নভিন্ন’ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে ফিরেছে লিটন দাসের দল। সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে হারের ‘ইজারা’ নেওয়া বাংলাদেশ এবার যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেলো!

দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দ্বিতীয় ম্যাচের আগেই রূপ নেয় তিন ম্যাচের। ১৯১ রান করে প্রথম ম্যাচ জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ২০৫ রান করেও হেরে যায় বাংলাদেশ। আইসিসির প্রথম সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে সংস্থার পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০+ রান তাড়া করে জেতার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করলো আরব আমিরাত। বুধবার শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো। এনিয়ে টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে গৌরবের ইতিহাস গড়লো আমিরাত। ২০২১ সালে তারা জিতেছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।

আগের ম্যাচে ২০৫ রান করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই শারজার ছোট মাঠে ১৬২ রান করে জয়ের স্বপ্ন দেখাটা বোকামি। তবুও সম্ভাবনা থাকতো যদি কিনা বাংলাদেশের বোলাররা তাদের স্বাভাবিক বোলিংটা করতে পারতেন। এতোদিন ধরে যে বোলাররা প্রশংসা পেয়ে আসছিলেন, তারাই কিনা ম্যাচে ভিলেন হয়ে গেলেন! পরপর দুই ম্যাচে ছন্নছাড়া বোলিং করে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের রান করাটা সহজ করে দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম-হাসান মাহমুদ-তানজিম হাসান সাকিবরা। তৃতীয় ম্যাচেও যে পরিকল্পনায় বোলিংয়ের প্রয়োজন ছিল, তার ধারেকাছে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। সবাই কম বেশি আলগা বল দিয়েছেন। হাসান-সাকিব তো প্রায়ই বোলিংয়ে নিজেদের জায়গা খুঁজেই পাননি। এই সুযোগে আলিশান শরাফু ও আসিফ খান বিস্ফোরক ব্যাটিং করে ম্যাচ বের করে নেন। বোলিংয়ে মোস্তাফিজের অভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। স্লো বোলিংয়ে বোলাররা সফল হলেও বোলাদের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ঘাটতি দেখা গেছে। 

বোলিং তো গত দুই ম্যাচ ধরে খারাপ হলেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা ব্যাটিংয়ের তল খুঁজে পাচ্ছেন না লম্বা সময় ধরেই। প্রথম ম্যাচে ১৯১ রান করলেও সেখানে অবদান ছিল পারভেজ হোসেন ইমনের। তার একার সেঞ্চুরিতেই রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটাররা মোটামুটি রান পেলেও শেষ ম্যাচে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ইমন আজ গোল্ডেন ডাক মেরেছেন। তাওহীদ হৃদয়, লিটন দাসরা বিব্রতকর ব্যাটিং করে হতাশ করেছেন। ফিনিশার খ্যাত শামীমে পাটোয়ারী, অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান ব্যাটিংয়ে কোনও অবদান রাখতে পারেননি। ৮৪ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর জাকের আলী অনিক ও লেট অর্ডার হাসান ও শরিফুলের দায়িত্বশীল ব্যাটিং বাংলাদেশের স্কোরকে নিয়ে যায় ১৬২ রানে। 

মামুলি এই সংগ্রহের পর জয়ের প্রত্যাশা কেউই আশা করেনি। তবুও প্রত্যাশা ছিল কেউ না কেউ মিরাকল ঘটাবেন! কিন্তু সেটি হয়নি। উল্টো আমিরাত ইতহাস গড়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামনেই। আর তাতে মরুর বুকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়েই বাংলাদেশ দল ২৪ তারিখে পাকিস্তানে যাবে। সেখানে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়বে। এমন ‘মানহীন’ পারফরম্যান্সের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ফলাফলটা কী হয় সেটার অপেক্ষার বাংলাদেশি ভক্তরা?