ক্যারিয়ারের শুরু থেকে একটা বড় সময় পর্যন্ত তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান ছিলেন হরিহর আত্মা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমাতে একে অন্যের মুখ দেখা দূরে থাক, কথা বলাও বন্ধ! গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে সাকিবের ইন্টারভিউ ও তামিমের ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও নিয়ে হুলুস্থুল ব্যাপার ঘটে গেছে। বিশ্বকাপে দল হয় ব্যর্থ, তৈরি হয় বিভাজন। সবমিলিয়েই বর্তমান বাংলাদেশ দল। দলের এই অবস্থার জন্য দু’জনের ঝগড়া বড় প্রভাব ফেলেছে। যদিও এতদিন কেউই এসব স্বীকার করেননি। শনিবার নট আউট নোমানে প্রকাশিত এক ইন্টারভিউতে সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন খোলামেলা অনেক কথা বলেছেন। সেখানেই তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিভাজন তৈরি করেছে সাকিব-তামিমের দূরত্ব! যদিও তামিম সমস্যা মিটমাটের উদ্যোগ বেশ কয়েকবার নিলেও সাকিব তাতে সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ দলে বিভাজনের যে সুর সেটি কি তাহলে তামিম-সাকিবের কারণে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেছেন, ‘অবশ্যই। খুবই স্বাভাবিক। এটা সবাই বোঝে। দু’জনই বাংলাদেশ দলর গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। দলের মধ্যে অনেক ক্রিকেটার আছে, কারও তামিমমের প্রতি ভালো লাগা, কারও আবার সাকিবের প্রতি। যখন সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো, তখন থেকেই মূলত জাতীয় দলে বিভাজন শুরু হয়েছে। তামিম যখন দল থেকে বাদ পড়ে গেলেন, তখন একই ড্রেসিংরুমে তামিমের ফ্যানরা অস্বস্তি নিয়ে সাকিবদের ফ্যানদের সঙ্গে মিশতে হতো। এগুলোতো সহজ সমীকরণ। এগুলোর প্রভাবতো পড়েছেই!’
সাকিব-তামিমের এই দ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরেই। যদিও প্রকাশ্যে ছিল না খুব বেশি। নাজমুল হোসেন পাপন দায়িত্ব থাকা অবস্থাতে একবার সংবাদ মাধ্যমকে এ ব্যাপারে বলে দেন। তখন থেকেই মূলত সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করে। বিষয়টি স্বীকার করে নেন সাবেক অধিনায়ক সুজন, ‘হয়তোবা তাই। আমার মনে হয় ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে বোর্ডের মাথা ঘামানো উচিত নয়। সাকিব-তামিম পেশাদার, তারা দলে চান্স পেলে খেলবে, না পেলে খেলবে না। যখন কথাগুলো অনেক বেশি ছড়িয়ে গেলো, তখন আমি ওদের সঙ্গে কথা বলি।’
তবে দুইজনকে এক করতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন সুজন, ‘‘তাদের দু’জনকে আমি অনুরোধও করেছি। ভাই তোদের কারণে কিন্তু দলের মধ্যে অনেক সমস্যা হচ্ছে। কেননা দলের মধ্যে সাকিবের যেমন ফ্যান আছে, তেমনি তামিমেরও ফ্যান আছে। আমি স্পষ্ট করেই বলবো, বাংলাদেশ দলে বিভাজন কেবল ওদের দুইজনের কারণেই হয়েছে। আমি তাদেরকে বলছিলাম, ‘তোরা ছোটবেলার বন্ধু, ঝগড়াঝাটি হতেই পারে…..তোরা মিলে যা।’ কারণ ওরা এক না হলে বাংলাদেশ দল এক হবে না। কিন্তু একজন বলছে, ‘সম্ভব না। আরেক জন বলছে বসতে পারি।’’
সুজন আরও বলেছেন, ‘‘যেহেতু দু’জনের সঙ্গেই আমি অনেক বেশি ক্লোজ। তাদের অনুরোধ করেছি, ‘তোরা দু’জন মিলে যা।’ হয়তো এমন কিছু আছে, যেটা তাদেরকে আর এক করতে পারেনি। আমি বড় ভাই, সাবেক অধিনায়ক হিসেবে চেষ্টা করেছি। মূলত সাকিব চায়নি মিটমাট করতে। সাকিব আমাকে স্পষ্ট বলেছে, ‘না ভাই এইটা হবে না, আমাকে অনুরোধ কইরেন না। কেন হবে না, এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না বা দিতে পারবো না।’ তবে তামিম খুব করে চেয়েছে, বেশ কয়েকবার চেষ্টাও করেছে।’’