গলে ১২ বছর পর টেস্ট ড্র

সংক্ষিপ্ত স্কোর, পঞ্চম দিন

শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ ওভারে ৭২/৪ (কামিন্দু ১২*, ধনাঞ্জয়া ১২*, নিসাঙ্কা ২৪, উদারা ৯, ম্যাথুজ ৮, চান্ডিমাল ৬)

ফল: টেস্ট ড্র।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৭ ওভারে ২৮৫/৬, ডিক্লে. (শান্ত ১২৫*, নাঈম ৭*, জাকের ০, লিটন ৩, মুশফিক ৪৯, সাদমান ৭৬, এনামুল ৪, মুমিনুল ১৪)

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ১৩১.২ ওভারে ৪৮৫/১০ (প্রবাথ ১১*; উদারা ২৯, চান্ডিমাল ৫৪, ম্যাথুজ ৩৯, নিসাঙ্কা ১৮৭, ডি সিলভা ১৯, কুশল ৫, মিলান ৩৯, কামিন্দু ৮৭, থারিন্দু ০, আসিথা ৪)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৫৩.৪ ওভারে ৪৯৫/১০ (হাসান ৭*; তাইজুল ৭, জাকের ৮, নাঈম ১০, লিটন ৯০, এনামুল ০, সাদমান ১৪, মুমিনুল ২৯, শান্ত ১৪৮, মুশফিক ১৬৩, নাহিদ ০)

বাংলাদেশ ২৯৬ রানের লক্ষ্য দিলে শেষটা জমিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। তার ঘূর্ণিতে ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিল লঙ্কান দল। অবশ্য বাংলাদেশ দেরিতে ইনিংস ঘোষণা করায় আরও চাপ তৈরির সুযোগ ছিল না। শেষ দিকে কামিন্দুর ক্যাচও হাতছাড়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে ৫ ওভার আগে ড্র মেনে নেন শান্ত। তাতে ১২ বছর ও ২৬ টেস্টে পর ড্র দেখেছে গল স্টেডিয়াম। 

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন তাইজুল। ২৯ রানে একটি নেন নাঈম হাসান।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শুরুটা করেছিলেন ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ষষ্ঠ ওভারে লাহিরু উদারাকে ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন তাইজুল। পরের ওভারে নাঈমের বলে নিসাঙ্কাও আউট হলে চাপে পড়ে স্বাগতিক দল। তার পর ড্রয়ের জন্য শেষ সেশনে মূল প্রতিরোধটা গড়েন দিনেশ চান্ডিমাল ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। রানের চেয়ে টিকে থাকাই ছিল তাদের লক্ষ্য। ৮১ বল স্থায়ী জুটি ভেঙে শেষ দিকে ম্যাচটা জমিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল। শুরুতে শেষ টেস্ট খেলতে নামা ম্যাথুজকে ফিরিয়েছেন। তার পর চান্ডিমালকে বিদায় দিয়ে লঙ্কানদের বিপদে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষে আর বিপদ হতে দেননি কামিন্দু ও ধনাঞ্জয়া।  ম্যাচসেরা হয়েছেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত। 

ব্যর্থ রিভিউ শেষে ড্র মেনে নিলেন শান্ত

৩২তম ওভারের শেষ বল। বোলার তাইজুল। ক্যাচের জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। অধিনায়ক শান্ত রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। ব্যর্থ রিভিউ শেষ শান্ত ইঙ্গিত দেন ড্র মেনে নিচ্ছেন তিনি। তখনও ওভার বাকি ৫টি। 

কামিন্দুর ক্যাচ হাতছাড়া মুশফিকের

লঙ্কানদের আরও চেপে ধরার সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। ২৯.৩ ওভারে তাইজুলের বলে মেরে খেলার চেষ্টা করেছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। বল বাতাসে ভেসে গেলেও মিডঅফে মুশফিকুর রহিম ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি।  

চান্ডিমালকে ফিরিয়ে টেস্টের শেষটা জমিয়ে দিলেন তাইজুল

শেষ দিকে এসে টেস্টটা জমিয়ে দিয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ম্যাথুজকে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটির প্রতিরোধ ভেঙেছেন। কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গী দিনেশ চান্ডিমালকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন বামহাতি স্পিনার। তার বাতাসে ভাসানো বল চান্ডিমাল ঠিকমতো বুঝতেই পারেননি। ৪৪ বল খেলা ব্যাটার ফিরেছেন ৬ রানে। এটি ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুলের তৃতীয় শিকার।      

ম্যাথুজকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙলেন তাইজুল

ড্রয়ের লক্ষ্যে শেষ সেশনে প্রতিরোধ গড়ে খেলছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ১৩ রান আর ৮১ বল স্থায়ী ছিল দু’জনের জুটি। ম্যাথুজকে ফিরিয়ে এই প্রতিরোধ ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। সিলি পয়েন্টে মুমিনুলের ক্যাচে পরিণত হয়েছেন ম্যাথুজ। 

তাতে শেষ টেস্ট খেলতে নামা লঙ্কান ব্যাটার ৮ রানে বিদায় নিয়েছেন। খেলেছেন ৪৫ বল। শেষবারের মতো ম্যাথুজের সাজঘরে ফেরার পথে বাংলাদেশের সব খেলোয়াড় এসে তাকে বিদায় জানিয়েছেন।   

ম্যাথুজ-চান্ডিমালের জুটিতে শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ

শেষ সেশনে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও দিনেশ চান্ডিমাল প্রতিরোধ গড়েছেন। ৩৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তারা জুটি বেঁধেছেন। এই সেশনে খেলা হবে ২৯ ওভারের।

গলে জিততে শেষ সেশনে বাংলাদেশের চাই ৮ উইকেট

২৯৬ রানের লক্ষ্যে নেমে শ্রীলঙ্কা ৩৪ রানে দুই উইকেট হারিয়েছে। খানিকটা হলেও চাপে পড়েছে তারা। ৮ ওভারে দুই উইকেটে ৩৪ রানে চা বিরতিতে গেছে লঙ্কানরা। ‍দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের ঘূর্ণি জাদু বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এজন্য ৮ উইকেট দরকার বাকি ২৯ ওভারের খেলায়।

তাইজুল-নাঈমের আঘাতে দুই ওপেনারের বিদায়

৩ বলের মধ্যে ২ রানের ব্যবধানে দুই ওপেনার লাহিরু উদারা ও পাথুম নিসাঙ্কা আউট হলেন। ষষ্ঠ ওভারে তাইজুল ইসলামের বলে ৯ রানে স্টাম্পিং হন উদারা। পরের ওভারে নাঈম হাসান দ্বিতীয় বলে নিসাঙ্কাকে (২৪) নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান। ৩২ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ৩৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো শ্রীলঙ্কা।

শান্তর সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে ২৯৬ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের

টানা দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কিছুক্ষণ পরে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬ উইকেটে ২৮৫ রানের পর এই সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক। সফরকারীদের লিড ২৯৫ রানের। স্বাগতিকদের ২৯৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ।

১৯০ বলে শতকের পর তিন ছক্কা মারেন শান্ত। তার ১৯৯ বলে ১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ৩ ছয়। খেলার আর বাকি ৩৭ ওভার। নাঈম ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।

গলে শান্তর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি

প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে এলিট লিস্টে নাম লেখালেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে মাত্র ১৬তম ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন শান্ত। প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি।

৮৫তম ওভারে থারিন্দুর বলে সিঙ্গেল নেন শান্ত। ১৯০ বলে করেন সেঞ্চুরি।

জাকেরও থারিন্দুর শিকার

থারিন্দু রত্নায়েকে টানা দ্বিতীয় ওভারে উইকেট পেলেন। লিটন দাসের পর জাকের আলীকে ফেরালেন লঙ্কান স্পিনার। ৭ বলে ২ রানে স্টাম্পিং হন তিনি। ২৪৯ রানে ৬ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

তিন ঘণ্টা পর খেলার শুরুতেই লিটন আউট, জীবন পেলেন শান্ত

বৃষ্টিতে তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর আবার মাঠে গড়ালো। নতুন ব্যাটার লিটন দাস ৫ বলে ৩ রান করে থারিন্ডু রত্নায়েকের বলে বোল্ড হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪১ রানে ৫ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

পরের ওভারের প্রথম বলে নাজমুল হোসেন শান্ত জীবন পান। স্কয়ার লেগে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে লাহিরু উদারা বল ধরতে তো পারেনইনি, আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন।

ফিফটির জন্য সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউট মুশফিক, বৃষ্টিতে বন্ধ খেলা

৭৬তম ওভারে প্রবাথ জয়াসুরিয়ার শেষ বলে সিঙ্গেল নিলেন ঝুঁকি নিয়ে। মিড অন থেকে থারিন্দু রত্নায়েকের সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প গেলো ভেঙে। অনফিল্ড আম্পায়ার টিভি আম্পায়ারের দ্বারস্থ হন। বল যখন স্টাম্প ছুঁয়েছে, তখন সামান্য দূরে ছিল মুশফিকের ব্যাট। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন বাংলাদেশি ব্যাটার। ১০২ বলে চারটি চারে ৪৯ রান তার। দলীয় ২৩৭ রানে চার উইকেট পড়লো বাংলাদেশের। তার আউটের পর বৃষ্টিতে খেলা থেমে গেছে। শান্তর সঙ্গে ১৯১ বলে ১০৯ রানের জুটি তার। 

শান্ত-মুশফিক জুটির সেঞ্চুরি

গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও মুশফিক ও শান্তর জুটি তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে। ১৬৭ বলে তাদের জুটি সেঞ্চুরি করেছে। ৭২ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৮ রান বাংলাদেশের, লিড ২৩৮ রানের। ৪৬ রানে মুশফিক ও ৮৩ রানে শান্ত অপরাজিত খেলছেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দুইশ

৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম শেষ দিন ব্যাটিংয়ে নামেন। দলের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৭৭ রান। দুজনের অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে দুইশ করেছে। ৬৪তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলকে দুইশর ঘরে নেন মুশফিক।

জয়ের বিশ্বাস নিয়ে শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কা চায় সকালের সেশনে তাড়াতাড়ি বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে ম্যাচ জিততে। আর বাংলাদেশের বিশ্বাস, বড় সংগ্রহ করতে পারলে ম্যাচ জেতা সম্ভব। এখনও একটি দলেরই দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়নি। বাংলাদেশ ১৭৭ রান করেছে ৩ উইকেট হারিয়ে। ম্যাচের অবস্থা বলছে, ড্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে নিজেদের দিনে দুই দলই যে কোনও কিছু করতে পারে। ৫৬ রানে শান্ত ও মুশফিক ২২ রানে অপরাজিত আছেন।

বাংলাদেশ ১৮৭ রানের লিড নিয়েছে। হাতে আছে আরও সাত উইকেট। শেষ দিনের প্রথম সেশনে দ্রুত আরও রান তুলতে পারলে বাংলাদেশের জেতার সুযোগ আছে মনে করেন নাঈম, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের জেতার জন্য যাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা যদি খুব ভালো একটা টোটাল করি এবং এরপর যদি ছাড়ি...। ইনশাআল্লাহ, পঞ্চম দিনের উইকেটে অনেক কিছু হয়। জেতার সুযোগ আছে।’

ডানহাতি এই অফ স্পিনার আরও যোগ করেন, ‘দেখুন, আসলে পঞ্চম দিনে অনেক কিছু হয় উইকেটে। যদি আমরা ভালো টোটাল দিতে পারি, তখন ওরা চাপে থাকবে। যখন আপনার নরমাল ক্রিকেট খেলা এক জিনিস আর চাপে থেকে খেলা অন্য জিনিস। তখন ওদের ম্যাচ হারানোর ভয় থাকবে। তো অনেক কিছু করা সম্ভব। যদি আমরা ইনশাআল্লাহ্‌ ভালো টোটাল দিই, আমাদের জন্য ভালো।’