অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা, কারা থাকবেন?

২৬ জুন, ২০০০—বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি দিন। আইসিসির সদস্যপদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের পথচলা। লর্ডসের সভাকক্ষ থেকে ঘোষিত সেই স্বীকৃতি ছিল কোটি বাঙালির ক্রিকেট স্বপ্নের জয়গান। সেই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে রজত জয়ন্তীর উৎসব। ২৬ জুন বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ এই আয়োজন। 

রজত জয়ন্তী উৎসবের মূল আকর্ষণ হিসেবে সংবর্ধনা জানানো হবে দেশের প্রথম টেস্ট স্কোয়াডের ১৬ সদস্যকে—যারা ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে ইতিহাস গড়েছিলেন। তাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের অভিজাত টেস্ট যাত্রা। তবে নানা কারণে এই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন অন্তত পাঁচজন—বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাবেক সহ-অধিনায়ক আকরাম খান, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট, সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আল শাহরিয়ার রোকন।

যদিও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস নিশ্চিত করেছেন, দুর্জয়সহ ১৬ জনকেই আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, ‘অভিষেক টেস্ট স্কোয়াডে যারা ছিলেন, তাদের সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কারা আসবেন, সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’

সবচেয়ে বেশি আলোচনা প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে ঘিরে। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকার পতনের পর তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে। বিসিবির পরিচালনা পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক কারণে দুর্জয়ের এই অনুষ্ঠানে আসাটা প্রায় অসম্ভই বটে। নাঈমুরকে দাওয়াত দেওয়া নিয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ‘অবশ্যই দাওয়াত দিয়েছি, কলও করা হয়েছে।’ 

দুর্জয় ছাড়া আকরাম খান আছেন থাইল্যান্ডে, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন তিনি। তিনি বোর্ড পরিচালক হিসেবে এই মুহূর্তে বোর্ডের অংশ হলেও ২৬ তারিখে তার দেশে ফেরা হচ্ছে না। আর আল শাহরিয়ার রোকন দীর্ঘদিন ধরেই নিউজিল্যান্ড প্রবাসী। তার জন্য এই অনুষ্ঠানে আসাটা সম্ভব নয়। এছাড়া ব্যক্তিগত কারণে আসতে পারছেন না মঞ্জুরুল ইসলাম। খালেদ মাসুদ এখন আছেন জার্মানিতে। কয়েকদিন আগে ছেলের কনভোকেশন প্রোগ্রামে অংশ নিতে এ মাসেই গিয়েছিলেন কানাডায়। ফলে তারও ২৬ তারিখের সংবর্ধনায় থাকা সম্ভব নয়।

বিসিবি সূত্রে জানা গেছে রজত জয়ন্তী উপলক্ষে অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটারদের নতুনভাবে বিশেষ ব্লেজার প্রদান করা হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন ক্রিকেট উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। উৎসব হবে দুই ঘণ্টার, যেখানে সংবর্ধনার পাশাপাশি থাকবে স্মৃতিচারণ, ছবি প্রদর্শনী এবং বিশেষ সম্মাননা পর্ব।

রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের আগের ক্রিকেটাররা যারা ছিলেন, ফারুক ভাই ছিলেন, আতাহার আলী ভাই ছিলেন, নান্নু ভাই ছিলেন— অনেক ক্রিকেটার ছিলেন যারা টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি। আমরা ওই সময়টায় নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করতাম যে প্রথম টেস্টে আমরা খেলতে পেরেছিলাম। যদিও আমাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ছিলাম, তারপরও আমরা মনে করি ভাগ্যবান। যেহেতু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম, প্রথম টেস্টটা খেলেছিলাম। সেই স্কোয়াডে যারা এভেইলেবল আছে, সবাইকে কালকে আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে দাওয়াত দিয়েছি। মূলত আমাদের পূর্বের সেই ২৫ বছরের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া। আমাদের সেই ক্রিকেটের বন্ধুত্ব, যাতে অটুট থাকে এবং তাদেরকে সম্মাননা জানানো।’

২৫ বছর পূর্তির দিনটি ঘিরে যে আয়োজন, তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং আবেগময়। তবু অভিষেক টেস্ট স্কোয়াডের পাঁচ সদস্যের অনুপস্থিতি যেন স্মৃতির পাতায় একটি হালকা বিষাদের রেখা টেনে দেয়। ইতিহাসের সাক্ষী যারা, সেই শুরুর কাণ্ডারিদের না থাকা কিছুটা হলেও রজত জয়ন্তীকে অপূর্ণতা দেবে!