২০০০ সালের ২৬ জুন—বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। এই দিনে টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত ক্লাবে দশম সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সম্মিলিত ভোটে মিলেছিল এই মর্যাদা। যাত্রাটা শুরু হয় আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাঈমুর রহমান, মোহাম্মদ রফিকদের হাত ধরে; যারা কঠিন পথ মাড়িয়ে স্বপ্নকে ছুঁতে চেয়েছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসে। এরপর সেই স্বপ্ন বয়ে নিয়ে যান মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজারা। সময়ের আবর্তে ব্যাটন এখন নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজদের হাতে।
টেস্ট প্রাপ্তির এই অর্জনটা মোটেও সহজ ছিল না। ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয় ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় এই স্বপ্নপূরণে গতি আনলেও তা যথেষ্ট ছিল না। এর পেছনে ছিল অনেক কূটনৈতিক যুদ্ধও। যার নেতৃত্বে ছিলেন তখনকার বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, যার দূরদৃষ্টি ও কৌশলী পরিকল্পনায় সফল হয়েছিল টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির মিশন। ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার, আন্তর্জাতিক সংগঠক ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সাবেক যুগ্ম সচিব সৈয়দ আশরাফুল হক, যিনি এশিয়ার দেশগুলোর সমর্থন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির প্রায় সাড়ে চার মাস পর সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পথচলা শুরু ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় টস করতে নেমেছিলেন ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে। প্রথম টেস্ট ৯ উইকেটে হারলেও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি বাংলাদেশের জন্য ছিল বিশাল প্রাপ্তি। এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ তৈরি করেছে অনেক গল্প—গৌরব, হতাশা আর সাফল্যের মিশেলে। ১৫৪টেস্ট খেলে জয় মাত্র ২৩ ম্যাচে। বাকি ১১১টিতে হার ও ১৯ টিতে ড্র। পরিসংখ্যান হতাশাজনক হলেও পথচলার গল্পটা শুধুই সংখ্যার নয়—এখানে আছে সংগ্রামী ইতিহাসও। এই ২৫ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট তুলে এনেছে সাকিব, মুশফিক, তামিম, এবাদত, মিরাজ কিংবা তাসকিনদের মতো লড়াকু নাম। যাদের ব্যাটে-বলে ঐতিহাসিক কিছু জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে ১০ নভেম্বরের আগে ২৬ জুনের ঐতিহাসিক সেই সিদ্ধান্ত না এলে ২৫ বছরের এই জার্নির শুরুটা হতোই না। আজ সেই দিন। টেস্টের রজত জয়ন্তীর দিনে বিসিবির সভাপতিও প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এক বছর আগেও বুলবুলের কণ্ঠে ছিল অভিমান। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে খোলাসা করেছিলেন, দেশের ক্রিকেটের ঐতিহাসিক অর্জনগুলো যথাযথভাবে উদযাপন না হওয়ার কষ্টগুলো। আর আজ? সেই আক্ষেপের ঠিক এক বছর পর, তিনিই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। দায়িত্বের ভার হাতে নিয়েই যিনি নতুন করে জাগিয়ে তুললেন স্মৃতি, গৌরব আর স্বপ্নের আলো। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর পূর্তিতে আয়োজন হচ্ছে দেশের সাতটি বিভাগে।
আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল চারটায় মিডিয়া প্লাজার সামনে সম্মান জানানো হবে অভিষেক টেস্টের নায়কদের। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বুলবুলের হাতেই থাকবে প্রেরণার পতাকা—যেখানে অতীতের আক্ষেপ মিলিয়ে যাবে ভবিষ্যতের আশায়। এ যেন নিজেরই ছায়াকে অতিক্রম করে ফিরে আসার গল্প। যেখানে একসময়ের ক্ষোভ আজ দায়িত্বে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারে।