রজত জয়ন্তীর দিনে হোম অব ক্রিকেটে অনার্স বোর্ড

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভেন্যুতে অনার্স বোর্ড থাকে। সেখানে ক্রিকেটের নানা অর্জন লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের কোনও ভেন্যুতেই এমন কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের টেস্টের রজত জয়ন্তীর দিনে ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো স্থাপন করা হলো অনার্স বোর্ড। তবে এটি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নয়, বরং তাদের পথচলার সূচনালগ্নকে সম্মান জানাতে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাতটি বিভাগে গত এক সপ্তাহ ধরেই নানা আয়োজন চলেছে। তবে মূল আকর্ষণ ছিল আজই। দেশের প্রথম টেস্ট স্কোয়াডের ১৬ সদস্যকে যারা ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে ইতিহাস গড়েছিলেন। তাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের অভিজাত টেস্ট যাত্রা। তাদের প্রত্যেককে ফুল দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি ব্লেজার পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ১৬ ক্রিকেটারের মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন না। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাবেক সহ-অধিনায়ক আকরাম খান, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট, সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আল শাহরিয়ার রোকন।

অনুষ্ঠানে ক্রিকেটাররা প্রাণবন্ত সময় কাটান। যেন বুলবুল, অপি, শান্তরা পুরানো দিনে ফিরে গেলেন। সবাই সবার সঙ্গে প্রাণবন্ত আড্ডায় মাতেন। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। তার নেতৃত্বেই পুরো দল স্টেজে উঠে। একসাথে ছবিও তোলে।

বুলবুল স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সবকিছুর প্রথম ছিলাম আমরা। প্রথম অনুভূতি, প্রথম হারা, প্রথম জেতা, প্রথম কষ্টগুলো সহ্য করা। আমাদের হয়তো বোলিং–ব্যাটিং এভারেজ এত স্ট্রং (ভালো) নয়। কিন্তু  (প্রথম টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের) আপনাদের অবদান বাংলাদেশের সারাজীবন মানুষ মনে রাখবে।’

টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির দিনে প্রথমবারের মতো বিসিবি টেস্ট অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের নাম সংবলিত একটি অনার্স বোর্ড স্থাপন করেছে। ২০০০ সালে দেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে অভিষেক পাওয়া খেলোয়াড়দের দিয়ে শুরু ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০৭ জন ক্রিকেটারের নাম এই বোর্ডে যুক্ত করা হয়েছে। নতুন এই অনার্স বোর্ডের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও বিসিবির সভাপতি বুলবুল। অনার্স বোর্ডটির পাশেই তৈরি করা হয়েছে স্মারক ক্যাবিনেট। যেখানে জাতীয় দলসহ বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের অর্জিত ট্রফিগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের সম্ভাবনা ভালো জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। হয়তো এই ২৫ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের হার অনেক কম। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে যারা খেলছে, তাদের প্রথম ২৫ বছরের যেই সাফল্য, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আগামীর দিনগুলোতে আমাদের সম্ভাবনা আছে। আশা করবো সামনে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন কিছু অপেক্ষা করছে।’ 

শুরুতে এসেছিলেন টেস্টে বাংলদেশের হয়ে প্রথম বল খেলা শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, ‘বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট বল খেলা অবশ্যই আমার জন্যে স্মরণীয়। আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। অনেক বছর পর পুরো দলটা একসঙ্গে হলো। সেই পুরানো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে।’ 

মেহরাব হোসেন অপি বলেছেন, ‘আমাদের নিয়ম ছিল প্রাকটিস কিট পরে থাকতে হবে। কিন্তু আমার জার্সি একটা বল বয়কে দিয়ে দিয়েছিলাম। এই জন্যে ৫০০ টাকা জরিমানা করার কথা। পরে আমাদের কোচ সারোয়ার ইমরান স্যারের ডাবল এক্সেল জার্সি এল বানিয়ে আমি পরে ফেলি।’ 

প্রথম ফিফটি করা হাবিবুল বাশার সুমন বলেছেন, ‘আমরা আসলে দেখেছিলাম পুরো বাংলাদেশ কীভাবে একটা ম্যাচকে ঘিরে আনন্দে মেতে উঠেছিল। এটা খুব আনন্দ দিয়েছিল।’

রাজিন সালেহ বলেন, ‘আমি প্রথম টেস্ট খেলতে পারিনি। কিন্তু পরিবর্তিত ফিল্ডার হিসেবে নেমে তিনটি ক্যাচ নিয়েছিলাম। যা আমাকে এখনও গর্বিত করে।’