শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বুধবার শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। কিন্তু এবারের শুরুটা একেবারে ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে নেই অভিজ্ঞদের ছায়া—সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজার কেউই নেই এই স্কোয়াডে। অর্থাৎ ১৮ বছর পর এই প্রথম পঞ্চপাণ্ডববিহীন ওয়ানডে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস।
পাণ্ডবহীন নতুন এই অধ্যায়ের নেতৃত্বে মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটে-বলে অবদান রাখা এই অলরাউন্ডারের কাঁধে এখন দলের ভার। তবে বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ নেমে গেছে ১৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে—দশ নম্বরে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কলম্বোতে শুরু হতে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সিরিজ হয়ে উঠতে পারে আশার আলো। র্যাঙ্কিংয়ে চারে থাকা শ্রীলঙ্কাকে যদি অন্তত একটি ম্যাচেও হারাতে পারে মিরাজের দল, তাহলে ফিরবে নবম স্থানে। সিরিজ জিতলেও নয়েই থাকবে মিরাজরা। হোয়াইটওয়াশ করলেও জায়গা অপরিবর্তিত থাকবে, তবে ৮৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আটে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবধান কমানো সম্ভব হবে। এই সিরিজ কেবল জয় –পরাজয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এটা আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করার মিশনও। আর সেই গল্প লিখতে নামছে একঝাঁক তরুণের নেতৃত্বে নতুন এক বাংলাদেশ।
অবশ্য ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মিরাজ জানালেন সিনিয়রদের মিস করার কথা, ‘প্রথমত আমরা অবশ্যই সিনিয়র খেলোয়াড়দের মিস করবো। তারা অনেক বছর আমাদের দেশের জন্য খেলেছেন। হ্যাঁ, আমরা মিস করবো। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, একটা সময় না একটা সময় প্রত্যেককেই অবসরে যেতে হবে। তারা অবসরে গিয়েছে। ভালো মুহূর্ত, আমার মনে হয় নতুন অনেকে এসেছে, তাদের সামনে সুযোগ নিজেদের মেলে ধরার।’
এর পরেই মিরাজ জানালেন, শ্রীলঙ্কা সিরিজে নিজেদের মূল লক্ষ্যের কথা, ‘প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। যেহেতু বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ আট দল বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে। আমরা এখন যে পর্যায়ে আছি, লক্ষ্য থাকবে যেন সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারি। তার জন্য আমাদের ম্যাচ ও সিরিজ জিততে হবে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শ্রীলঙ্কা কঠিন প্রতিপক্ষ। তার মধ্যে এই ফরম্যাটের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান হতাশাজনক বাংলাদেশের। সবশেষ ১১ ওয়ানডের ৮টিতে হেরেছে! তবে একই পরিসংখ্যানে আবার স্বস্তির হাওয়াও বইছে। যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে দুটি এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজটি জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এটাই আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে মিরাজকে, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে জিতেছিলাম। ওটা থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। আমরা প্রেমাদাসার কন্ডিশনটা সম্পর্কে জানি, অভিজ্ঞতা আছে, যদি কাছে লাগাতে পারি তাহলে ভালো করতে পারবো।’
যদিও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো যাচ্ছে না। তারপরও লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা মনে করেন, এই ফরম্যাটে শক্ত প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, ‘না, না। আমি এ-রকমটা মনে করি না। বাংলাদেশ অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ, তারাও অনেক ভালো ক্রিকেট খেলছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ সিরিজে আমাদের বিপক্ষে তারা জিতেছে। ফলে এবার হোম সিরিজে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পরাজয় ছাপিয়ে এই সিরিজ বাংলাদেশের কাছে হতে পারে ভবিষ্যতের ভিত গড়ার মঞ্চ। মিরাজের নেতৃত্ব কেমন হয়, তরুণরা কতটা দায়িত্ব নেয়—সবকিছুর উত্তর মিলবে এই সিরিজেই। এবারের শুরুটা যেন এক নতুন সম্ভাবনার!