জয়ের মঞ্চটা নিজেরাই ভেঙে দিলেন ব্যাটাররা

বোলাররা প্রাণপণে লড়লেন, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে অলআউট করলেন। তাসকিনের আগুন ঝরানো স্পেল, তানজিম হাসান সাকিবের সাহসী বো- সবমিলিয়ে ম্যাচটা যেন ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই। কিন্তু ব্যাট হাতে নামাতেই যেন সর্বনাশ। একে একে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। কেউ থিতু হয়েও ইনিংস গড়ার চেষ্টা করলেন না, আবার কেউ বলের গায়ে ব্যাটই লাগাতে হলেন ব্যর্থ! যেন জয়ের মঞ্চটা নিজেরাই ভেঙে দেওয়ার শপথ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ২৪৫ রানের লক্ষ্য খুব কঠিন মনে না হলেও হঠাৎ এক ব্যাটিং বিপর্যয়ে সেই লক্ষ্যই পাহাড়সম হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের সামনে। শুরুটা হয়েছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিমের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর শান্তর সঙ্গে জুটিতে আসে গতি। ৭১ রানের জুটি গড়ে দলকে ভরসা দিয়েছিলেন শান্ত ও জুনিয়র তামিম। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। দ্রুত দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় রানআউট হয়ে যান শান্ত। তখন দলের রান ১০০। এরপর যেন এলো ঝড়। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ! জাকের আলী একপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে গেলেও একা কিছু করার ছিল না তার পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানের ব্যবধানে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।

দুই বছর আগে এই প্রেমাদাসাতেই ভারতকে হারানোর স্মৃতি আজ যেন বিবর্ণ হয়ে গেলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন এক আত্মঘাতী ব্যাটিংয়ে। এখানেই ২৬৫ রান তুলে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে আজ জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ২৪৫ রানের টার্গেট দিলো শ্রীলঙ্কা। কিন্তু প্রশ্নাতীত ব্যাটিংয় ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৬৭ রানে। শান্তর রান আউটের পর বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন কে কার আগে ড্রেসিংরুমে ফিরতে পারেন। ৫ রানে ৭ উইকেট পতনের পর আরেক অভিষিক্ত তানভীর ইসলামকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন জাকের। কিন্তু ২০ রানের জুটির পর তানভীর বিদায় নিলে শেষ উইকেট হিসেবে ক্রিজে নামেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাকে একপ্রান্তে রেখে জাকের আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। শুরুতে স্লো ব্যাটিং করা জাকের শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ৫১ রান করে আউট হন। তিনি আউট হতেই স্বাগতিকদের গ্যালারিতে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। তিন ম্যাচ সিরিজে লঙ্কানরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো! 

বাংলাদেশের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন লঙ্কান দুই স্পিনার। ব্যাটিং লাইনআপ ভাঙনের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল তাদের। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার লেগস্পিন আর কামিন্দু মেন্ডিসের অফস্পিনে নাস্তানাবুদ হতে হয় সফরকারীদের। দুজন মিলে তুলে নিয়েছেন সাতটি উইকেট। হাসারাঙ্গা ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ধ্বংসাত্মক ছিলেন, আর কামিন্দু ১৯ রানে শিকার করেছেন তিনটি উইকেট। স্পিনারদের ঘূর্ণিতেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংসের প্রতিরোধ।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা মোমেন্টাইম ক্যারি করতে না পারা। দারুণ অবস্থায় থাকা দলটির ২ রান নেওয়া খুব জরুরি ছিল না। তবুও অপ্রয়োজনীয় দুই রান নিতে গিয়ে শান্ত দলকে বিপদে ঠেলে দিলেন। তার রান আউটের পরই ব্যাটিংয়ে ধস নামে। অথচ ম্যাচটা জেতা যেতো অনায়াসেই। যেভাবে রান তুলছিল, তাতে করে রান রেটের চাপও ছিল না। কেবলমাত্র ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে না পারার কারণেই এই হাল। দিনের পর দিনে, ম্যাচের পর ম্যাচ একই অবস্থা। অভিজ্ঞ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরাও ম্যাচের পর ম্যাচ ম্যাচের ‘সুরটা’ ধরতে না পেরে দলকে বিপদে ফেলেছেন। 

একই পথে যেন হাটছেন শান্ত-লিটন-মিরাজরাও! অধিনায়ক হিসেবে বল হাতে টানা ৫ ম্যাচ ধরে উইকেটশূন্য মিরাজ। ব্যাটিংয়েও রানের খাতা না খুলে আউট হয়েছেন তিনি। লিটন ফর্মহীনতায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু কিছু না করেই কেবল প্রতিভা বিবেচনায় আবার দলে ফিরেছেন। তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি। দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটার ছিলেন তানজিদ। দারুণ খেলতে থাকা এই ব্যাটার ৬১ বলে ৬২ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। 

কলম্বোতে আজ ওয়ানডে ক্রিকেট নতুন নেতৃত্বের যাত্রা শুরু করেছিলেন মিরাজ। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই হার দিয়ে শুরু হলো তার। অবশ্য শ্রীলঙ্কার ইনিংসে মিরাজ একেবারে হতাশ করেননি! অধিনায়ক হিসেবে সফলই বলা চলে। প্রেমাদাসার উইকেটে স্বাগতিকদের ২৪৪ রানে আটকে দেওয়াটা বিশাল ব্যাপার। সেই কৃতিত্ব বোলারদের পাশাপাশি অধিনায়ক মিরাজেও। ইনজুরির কারণে বেশ কয়েকটি সিরিজ মিস করেছিলেন পেস সেনসেশন তাসকিন। বুধবার দুর্দান্ত বোলিংয়ে নেন ৪ উইকেট। তার পেস আক্রমণে কেঁপে ওঠে লঙ্কান টপ অর্ডার। আরেক পেসার তানজিমও ছিলেন সমান তীক্ষ্ণ। ৩ উইকেট নিয়ে তিনি বড় অবদান রাখেন। এক উইকেট করে নিয়েছেন তানভীর ও শান্ত।

তবে লঙ্কান ইনিংসে ভরসা ছিলেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ১২৩ বলে ১০৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ ওভারে তানজিমের শিকার হয়ে থামেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা।