বিমানবাহিনীর দুইটি বিশেষ বিমান শাপেকোয়েনসের ৫০ জন খেলোয়াড় ও স্টাফদের নিয়ে শাপেকোর রানওয়ে ছুঁল শনিবার সকালে। হাজার হাজার মানুষ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বীরদের বরণে শাপেকোয়েনসের এরেনা কোন্দা স্টেডিয়ামের আতশবাজির ঝলকানি উঠল মুহূর্তেই। কিন্তু বিমানের দরজা খোলার পর শাপেকোর ফুটবল বীরদের হাস্যোজ্জ্বল মুখে নেমে আসতে দেখলেন না কেউ। শাপেকোর মানুষের মুখেও নেই হাসি। গত সোমবার থেকে তাদের চোখেমুখে সর্বস্ব হারানোর ছাপ। সবসময় যেই খেলোয়াড় ও স্টাফরা প্রাণখোলা হাসিতে সমর্থকদের মাতিয়ে রাখতেন, তাদের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এমনকি শাপেকোর আকাশ অঝোরে কাঁদল সকাল থেকে।
বিশ্বাস না হলেও যখন স্টেডিয়ামে একেকটি করে কফিন ঢুকছিল তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল পুরো স্টেডিয়াম। কিন্তু তাদের চোখের পানি ধুয়ে দিয়েছে সকাল থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টি। হয়তো স্বর্গ থেকে শাপেকোর বীররা দেখতে চায়নি তাদের অগণিত ভক্তদের কান্না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া হৃদয়ের চাপা কষ্ট ঠিকই উগড়ে দিয়েছেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ভক্ত-সমর্থকরা। কেউ কেউ তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের ছবি নিয়ে হাজির হয়েছেন, কারও প্ল্যাকার্ডে বিশাল করে লিখা ‘শান্তিতে ঘুমাও তোমরা।’
শোকার্ত ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গে স্টেডিয়ামে ছিলেন কনমেবল প্রধান আলেহান্দ্রো ডোমিঙ্গুয়েজ, ব্রাজিল কোচ তিতে, দেশের প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমের ও ফিফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। শাপেকোর বীরদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতেই এসেছিলেন তারা। নিহতের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন শীর্ষ এই ফুটবল কর্মকর্তারা। ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সংহতি জানাতে আমরা এখানে এসেছি। ফিফা আপনাদের পাশে আছে, শুধু আজ নয় সবসময়।’ দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশন প্রধান ডোমিঙ্গুয়েজ বলেছেন, ‘এই কঠিন সময়ে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই আমরা। খেলোয়াড়, ক্লাব, সাংবাদিক ও ভক্তরা যারা ফুটবলকে সবার সামনে এনেছে তাদের জন্যই কনমেবল একটি সংস্থা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। শাপেকোর সঙ্গে আছে কনমেবল।’
পাশে দাঁড়ানোয় সবশেষে সুদামেরিকানা ফাইনালের প্রতিপক্ষ অ্যাতলেতিকো ন্যাসিওনালকে ধন্যবাদ জানান শাপেকোয়েনসের কর্মকর্তারা। এছাড়া ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন সান্তা ফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারা, কলম্বিয়ান দলটি গতবারের শিরোপার একটি রেপ্লিকা উপহার দিয়েছে শাপেকোর ফুটবল ক্লাবকে।
শুধু ব্রাজিলেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে সেটা নয়। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনার ক্লাসিকো ম্যাচে শাপেকোয়েনসের জার্সি নিয়ে এসে তাদের স্মরণ করেন নেইমার। ম্যাচ শুরুর আগে দুই দল এক মিনিট নীরবতা পালন করে। এছাড়া চেলসির ডিয়েগো কোস্তা, দাভিদ লুইস ও উইলিয়ান ‘ফোর্সা শাপে’ লিখা আর্মব্র্যান্ড পরেন হাতে। আটলান্টার বিপক্ষে জুভেন্টাসের ম্যাচে গোল করার পর একই বার্তা লিখা শার্ট সবার সামনে উন্মোচন করেন অ্যালেক্স সান্দ্রো।
/এফএইচএম/