বার্সেলোনাকে লজ্জা দিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ রিয়ালের

৩০ গজ দূর থেকে গোল করার পর মার্কো আসেনসিয়োর উল্লাসক্রিস্তিয়ানো রোনালদো নেই। তাতে কী, মার্কো আসেনসিয়ো আছেন না! সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সব আলো নিজের ওপর নিয়ে ফেললেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ। ‘এল ক্লাসিকো’র উত্তাপ হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে মাদ্রিদের ‘সোনার ছেলে’ হয়ে উঠলেন তিনি। তার চোখ ধাঁধাঁনো গোল আর অসাধারণ পারফরম্যান্সে ঘরের মাঠে বার্সেলোনাকে বড় লজ্জা দিয়ে বিদায় করল রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ সুপার কাপের দ্বিতীয় লেগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের রিয়াল হারিয়েছে ২-০ গোলে। যাতে প্রথম লেগের ৩-১ গোলের জয়ের পর দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ অগ্রগামিতায় মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছে মাদ্রিদের ক্লাবটি।

তার গোলেই বার্সেলোনার সমীকরণটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছিল প্রথম লেগের পর। রিয়াল মাদ্রিদের নতুন তারকা হিসেবে বিবেচনা করা মার্কো আসেনসিয়ো তার জাদু দেখালেন আরেকবার। ন্যু ক্যাম্পে রিয়ালের হয়ে শেষ গোলটি ছিল দেখার মতো, সেটাকেও ছাড়িয়ে করলেন আরও চমৎকার এক গোল। ‘এল ক্লাসিকো’র উত্তেজনার পারদ শুরুতেই আকাশ ছোঁয়ালেন ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া আচমকা এক শটে। তাতে যেন কেঁপে উঠল গোটা মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আনন্দের ঢেউ উঠল অসাধারণ এক গোলে। স্যামুয়েল উমতিতির ‘ক্লিয়ার’ করা বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দূর পাল্লার শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। বার্সেলোনা গোলরক্ষক আন্ড্রে টের স্টেগেন হয়তো বুঝতেই পারেননি বল জালে জড়াবে, কী ভেবে যেন বল ঠেকানোর কোনও চেষ্টাই করলেন না জার্মান গোলরক্ষক!

বেনজিমার গোল উদযাপনশুরুর ধাক্কায় বার্সেলোনার সমীকরণটা হয়ে পড়ে আরও কঠিন। গোলের জন্য চেষ্টাও করতে থাকে। কিন্তু রিয়ালের রক্ষণ ভেঙে সফল হতে পারছিল না। কঠিন এই মুহূর্তে যার সাহায্য বার্সেলোনার সবচেয়ে জরুরি, সেই লিওনেল মেসি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, ১৫তম মিনিটেই যেমন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি। ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বক্সে, এরপর সের্হিয়ো রবার্তোর ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিলেও গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে দিতে পারেনি ফাঁকি।

মিনিট চারেক পর এই মেসির ক্রস বক্সের ভেতর থেকে কাজে লাগাতে পারেননি লুই সুয়ারেস। পরের মিনিটে অবশ্য ভালো সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল, যদিও মার্সেলোর ক্রস চলে যায় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে। পরের সময়টায় রিয়াল আরও কয়েকটি ভালো সুযোগ পায়; ৩০ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে মার্সেলোর পাস ধরেছিরেন লুকাস ভাসকেস, এরপর ক্রস করেছিলেন টোনি ক্রোসের কাছে। জার্মান এই মিডফিল্ডারের শটও চলে যায় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে।

নাভাস দেয়াল ভাঙতে পারেননি লিওনেল মেসিপরের মিনিটে লুকাস ভাসকেসের ক্রস থেকে পাওয়া বলে বেনজিমা হেড করলেও রাখতে পারেননি গোলপোস্টের মধ্যে। তবে তিন মিনিট পর রিয়াল পেয়েছিল সুবর্ণ সুযোগ, ব্যবধান তখনই ২-০ করে ফেলতে পারতো, যদি না ভাসকেসের শট ফিরে আসতো পোস্টে লেগে।

যদিও সেই হতাশা মিনিট কয়েক পর দূর করেন বেনজিমা। ৩৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। ভুলটা প্রথমে করেছিলেন সের্হিয়ো বুশকেৎস, আর শেষে করেছেন উমতিতি। যার সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল হয়নি বেনজিমার। মার্সেলোর ক্রস থেকে বল বেনজিমার পায়ে গেলেও সামনে ছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার, কিন্তু বল আটকানোর কোনও চেষ্টাই যেন ছিল না তার। উমতিতির অলসতার সুযোগে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন বেনজিমা।

লুই সুয়ারেসের মতো বারবার আটকে গেছে বার্সেলোনা২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা বার্সেলোনা ৫৩ মিনিটে পেয়েছিল ম্যাচের সবচেয়ে সেরা সুযোগ। কিন্তু ভাগ্যদেবতা ছিলেন না মেসির সঙ্গে, তাই বারপোস্ট হয়ে দাঁড়ায় বাধার দেয়াল। সুয়ারেসের পাস ধরে ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে বক্সের ভেতর থেকে মেসি শট নিলেও নাভাসের হাতে লেগে বল আঘাত করে বারপোস্টে। ৭১ মিনিটে বার্সেলোনার গোলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আবারও নাভাস ও পোস্ট। মেসির দূর থেকে নেওয়া শট নাভাস ঝাপিয়ে ঠেকালে ফিরতি বলে হেড করেছিলেন সুয়ারেস, কিন্তু উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের হেড পোস্টে লেগে চলে যায় বাইরে।

ভাগ্যের এই মারপ্যাচে গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি বার্সেলোনার। তাই এক সপ্তাহের মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। বিপরীতে ন্যু ক্যাম্প থেকে ৩-১ গোলের জয়ের পর ঘরের মাঠের ২-০ ব্যবধানের জয়ে শিরোপা উৎসবে নতুন মৌসুম শুরুর অপেক্ষায় রিয়াল।

/কেআর/