বুধবার আবাহনীর অনুশীলন শেষে টেন্টে ফিরতেই ডাকে আসা সেই চিঠি দেখতে পান আতিক। যে চিঠিতে শুভেচ্ছাসহ ৯ জুন ১৯৮৪ সালের অটোগ্রাফও রয়েছে। ওই ভক্ত সময়কালও উল্লেখ করে দিয়েছেন- ৩৩ বছর ৬ মাস ২৯ দিন। অটোগ্রাফে লেখা, ‘কিপ স্মাইলিং’।
বৃহস্পতিবার ভক্তের চিঠি আতিক নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ১৯৮১ সালে বিজেএমসি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই গোলরক্ষক ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত আবাহনীতে খেলে পরের বছর যোগ দেন সাধারণ বীমায়। এরপর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ব্রাদার্সে খেলে অবসরে যান। জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত।
দেশের ফুটবল অঙ্গনে অটোগ্রাফের জন্য ভক্তদের আকুলতা এখন নেই বললেই চলে। তবে ফুটবল যখন গোটা বাংলাদেশকে আবেগের জোয়ারে ভাসাতো, সেই দিনগুলোতে ফিরে গেলেন আতিক বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময়, ‘আমাদের খেলোয়াড়ি জীবনে তখন তো ফুটবলের ক্রেজ ছিল অন্যরকম। তখন সবারই কম-বেশি ভক্ত ছিল। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর এমন চিঠি পেয়ে আমি একটু অবাক হয়েছি। সেই পুরনো দিনেই ফিরে গিয়েছিলাম। আমাদের সময়ে প্রচুর অটোগ্রাফ দিয়েছি। এখন তো এই চর্চা তেমন নেই। আসলে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, আগের মতো সমর্থকও নেই বললেই চলে।’
১৯৮৪ সালে আবাহনীতে খেলার সময় সিলেটের একটি ঘটনা সামনে আনলেন আতিক, ‘আমাদের সময়ে কোনও ভক্তকে আলাদা করে চেনা দায় ছিল। অনেক সমর্থক তখন। একবার সিলেটে গিয়েছিলাম, সেখানে খেলা শুরুর আগে একটি স্কুলের অনেক ছাত্র আমাদের ঘিরে ছিল। রুম বন্ধ করেও রেহাই পাইনি, সবার অটোগ্রাফ চাই। আর একটু হলে হয়তো রুমের জানালা-দরজা ভেঙে যেত!’
ফুটবলের হতশ্রী অবস্থা আতিককে খুব কাঁদায়, ‘এখন ফুটবলের খারাপ অবস্থা, মান পড়ে গেছে। দেখতে খারাপ লাগে। আমাদের সময় টাকা কম ছিল। তবে সিরিয়াস ছিলাম্। নিজেরা আলাদা অনুশীলন করতাম। এখনকার খেলোয়াড়রা সেভাবে নিজেদের ধরে রাখে না।’ আক্ষেপ করে এটাও বললেন, ‘অনেকেই আছে, যারা আবাহনী-মোহামেডানের জার্সি পরার মতোও যোগ্য না। কিন্তু ফুটবলের খারাপ অবস্থায় খেলে যাচ্ছে তারা।’
আতিকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার সময় সোহাগ নবম কিংবা দশম শ্রেণিতে পড়তেন। স্কুল বন্ধ ছিল, তাই আবাহনীর-ভিক্টোরিয়া ম্যাচ শুরুর আগে বেলা ১২টায় ক্লাবে উপস্থিত হয়ে যান। অনেক কষ্টে পেয়েছিলেন গোলরক্ষক আতিকের অটোগ্রাফ। শুধু আতিক নন, সালাউদ্দিন-চুন্নু-আসলামসহ অনেক তারকার অটোগ্রাফ তার দখলে।
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আবাহনীতে চিঠি পাঠোনোর রহস্য উন্মোচন করলেন ৫৪ বছর বয়সী এই ভক্ত, ‘আমার শখের মধ্যে অটোগ্রাফ সংগ্রহ করা অন্যতম। ফুটবলের পাঁড় সমর্থক আমি। আবাহনীর ভক্ত ছোটবেলা থেকে। তখন স্কুলে পড়া অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম আবাহনী ক্লাবে। গিয়েই আমার প্রিয় তারকাদের পেয়ে পাই। এবার দেখলাম আতিক ভাইয়ের অধীনে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই অটোগ্রাফ খুঁজে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে চিঠি লিখলাম। মনের টানেই এটা করেছি।’
দেশের ফুটবলের বর্তমান চিত্র দেখে কষ্ট পান তিনি খুব, ‘এখন ঢাকা লিগ কোমায় চলে গেছে। মাঠে দর্শক হয় না তেমন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় এলে খেলা দেখি। তবে আগের মতো সেই আনন্দ পাই না।’ তবে ফুটবলের নেশা তার কাটেনি এখনও, ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখেন রাত জেগে, ‘আমার পুরো পরিবার রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখে। ফুটবল তো আমাদের নেশার মধ্যে।’
ইউরোপিয়ান ফুটবলে লিওনেল মেসি-ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পায়ের জাদু দেখে হয়তো হারিয়ে যান দেশের ফুটবলের সেই সোনালী দিনে। মনের এক কোণে যে এখনও ঘরোয়া ফুটবলের সুখের স্মৃতি সাজিয়ে রেখেছেন সোহাগ। ৩৪ বছর পর তার সেই ভালোবাসার একটি নমুনা বাইরে এলো আতিকের অটোগ্রাফ দিয়ে।