‘মেসি-রোনালদো এসেও বাংলাদেশের ভাগ্য বদলাতে পারবেন না’

জুয়েল রানা। ছবি: ফেসবুকএই তো কিছুদিন আগেই বাফুফে ভবনে ‘এ’ লাইসেন্স করিয়েছেন। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল এএফসির সর্বোচ্চ লাইসেন্স নিয়ে জুয়েল রানা ঘরোয়া ফুটবলে আবারও কোনও ক্লাবে জড়াবেন। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই! বাংলাদেশ ছাড়তে যাচ্ছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। আক্ষেপ নিয়েই শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমাচ্ছেন তিনি সপরিবারে।

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে জুয়েল রানা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমস দিয়ে ফুটবলে প্রথম স্বর্ণপদক এসেছিল তার নেতৃত্বে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ‘চীনের প্রাচীর’-এর মতো জাতীয় দলের রক্ষণ আগলে রেখেছিলেন। ঘরোয়া ফুটবলেও খেলেছেন দীর্ঘদিন। এরপর নাম লেখান কোচিংয়ে। তবে নতুন অধ্যায়ে তেমন সুবিধা করতে পারেননি তিনি।

স্পষ্ট কথা বলার জন্য সুনাম আছে জুয়েল রানার। এছাড়া নীতির সঙ্গে কখনও আপোষ করতে শোনা যায়নি। যে কারণে ক্লাবগুলোর ঊর্ধ্বতন মহলে তার জনপ্রিয়তা কম। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, অবশেষে ১৪ বছর পর স্থায়ী হওয়ার চিঠি পেয়েছেন। ছেলে জাবির আরহাম ও মেয়ে আরফা ওয়াজিহার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন সাবেক এই ডিফেন্ডার।

তাছাড়া কোচিং ক্যারিয়ারে সুবিধা করতে না পারাটাও অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে নিজের কষ্ট লুকাতে পারেননি তিনি। আক্ষেপের সুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এই দেশে থেকে কী করব। ঠিকমতো কোচিংয়ে জড়াতে পারলাম না। ক্লাবগুলো যেভাবে চলছে, সেভাবে আমি গা ভাসাতে পারিনি। কোনও কাঠামোই তো নেই ক্লাবগুলোর। পেশাদার বলা হলেও আসলে তারা কতটুকু পেশাদার? কে, কী করবে, তাদের ভিশন তো পরিষ্কার নয়। তাদের অনেক কিছুর সঙ্গে আমার মেলেনি। নীতির সঙ্গে আপোষ করাটা আসলে আমার চরিত্রে নেই।’

ফুটবল যে ভালোভাবে চলছে না, তা আরও পরিস্কার হয় তার এই কথাতে, ‘আসলে ফুটবল কী অবস্থায় আছে, তা সবাই জানে। নতুন করে কিছু বলার নেই। এই দেশে মেসি-রোনালদোকে এনেও কোনও লাভ হবে না। মেসিরা তো এসেছিল, কই বাংলাদেশের ভাগ্য বদল হয়েছে? যদি নিজেদের কোনও ভিশন না থাকে, তাহলে হোসে মরিনহোও কোচ হিসেবে এসে জাতীয় দলের কোনও পরিবর্তন করতে পারবেন না। আসলে সবাইকে পেশাদার হতে হবে। সারা দেশে ফুটবলকে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাহলেই যদি কিছু হয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে গিয়ে ফুটবলের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা জুয়েল রানার। একাডেমি কিংবা সংশ্লিষ্ট ক্লাবে  কোচ হিসেবে থাকতে চান তিনি। তবে বাংলাদেশের ফুটবলের মান উপরের দিকে থাকলে হয়তো দেশ ছাড়তেন না, এমনটাই বলেছেন সাবেক এই তারকা, ‘আসলে ফুটবল ভালো অবস্থানে থাকলে হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলেও হতে পারতো। যদি সবাই পেশাদার হতো, কোচ সহ সবাইকে মূল্যায়ন করতো, তাহলে হয়তো দেশেই থেকে যেতাম।’

বলতে বলতে জুয়েল রানার চোখটা ধরে এলো। মোহামেডান, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলে কাজ করা এই সাবেক তারকার চোখে যে লাল-সবুজের মায়াঞ্জন!