মেয়েদের ফুটবলে এখন স্বর্ণালী সময়। মারিয়া-তহুরা-আঁখিদের সৌজন্যে একের পর এক সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শিরোপার সৌরভ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। মেয়েদের ফুটবলের পথ পরিক্রমা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজনের আজ তৃতীয় পর্ব।
এখন পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতার আটটি আসর হয়েছে। আর এখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়দের বড় অংশ। মেয়েদের ফুটবলে যে একের পর এক সাফল্য আসছে, তার বড় অবদান এই প্রতিযোগিতার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এখান থেকে খেলোয়াড় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে অনুশীলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্য পাচ্ছে।
প্রতি বছর ৬৪ হাজারেরও বেশি স্কুলের মেয়েরা অংশ নিচ্ছে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে মেয়েদের এই প্রতিযোগিতাটি এখন বড় উদাহরণ। আর এই সাফল্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
২০১৩ থেকে ২০১৫- হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন এই স্কুলটি। বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাফল্য এনে দেওয়া সানজিদা-তহুরা-মার্জিয়ারা উঠে এসেছে এই স্কুল থেকেই। তাদের সাফল্যের নেপথ্যে কাজ করেছেন সেই সময়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। ক্লাস শেষে মেয়েদের নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়তেন তিনি।
শুরুতে কতই না প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হয়েছে তাদের। মফিজ উদ্দিনের কথায় ধরা দিলো সেই সময়ের চিত্র, ‘মেয়েদের ফুটবল নিয়ে শুরুতে কোনও ধারণা ছিল না। কিছুই জানতো না ওরা। হাফ প্যান্ট পরে খেলতে চাইতো না। প্রথম অবস্থায় সালোয়ার-কামিজ পরে খেলেছে, তখন কিছু কিছু অভিভাবকের বাধা থাকলেও পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায়। উপজেলা পর্যায়ে সাফল্য আসার পর চিত্র পাল্টে যায়।’
সানজিদা-শামসুন্নাহারদের নিয়ে গর্বিত এই শিক্ষক, ‘এটা তো গর্বের বিষয়। আমার মতো শত শত শিক্ষক আছেন, তাদের মধ্যে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার মেয়েরা আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্য পাচ্ছে। দেশের নাম উজ্জ্বল করছে।’
কলসিন্দুর স্কুল এখন অনেকের কাছে ‘রোল মডেল’। এই স্কুলের সাফল্য অনুপ্রাণিত করেছে অন্যদের। দেশের বিভিন্ন স্কুল পরামর্শও চাইতো তাদের কাছে। কীভাবে খেললে আরও ভালো করা সম্ভব, মেয়েদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কী করা দরকার- তার সবটাই মফিজ উদ্দিন ভাগভাগি করতেন পরামর্শ চাওয়া স্কুলগুলোর কাছে, ‘আমরা ভালো করার পর বিভিন্ন জেলার স্কুল থেকে ফোন পেতাম। কীভাবে তারা ভালো করতে পারবে- এ নিয়ে দিক-নির্দেশনা চাইতো। আমরাও সাধ্যমতো তাদের সহায়তা করেছি।’
বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা লালমনিরহাট বিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর কোচ আলিম আল সাঈদ যেমন পরামর্শ চেয়েছিলেন কলসিন্দুর স্কুলের কাছে। তিনি বলেছেন, ‘অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কলসিন্দুর স্কুল সবাইকে পথ দেখিয়েছে। লড়াই করে ফুটবল খেলা শিখিয়েছে মেয়েদের। এখন আমাদের মতো অনেকেই তাদের মতো খেলতে পারে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ পরিচালক শাহ সুফি মোঃ আলী রেজাও মনে করছেন, মেয়েদের নিয়ে তাদের এই আয়োজন স্বার্থক। তার কথায়, ‘অবশ্যই আমরা অনুপ্রাণিত। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের গণজাগরণে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিশাল অবদান আছে। এখানে আইকন বলা যায় কলসিন্দুর স্কুলকে। এই অগ্রযাত্রায় তারা পথিকৃৎ। তারা বীজ বপন করেছে। বর্তমানে জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ৫০ খেলোয়াড়ের ৩৬ জনই এসেছে বঙ্গমাতা থেকে। আমরা যদি শুরু না করতাম তাহলে সাফল্য পাওয়া কঠিন ছিল।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন, ‘মেয়েরা বর্তমানে সাফল্য পাচ্ছে। এর বড় অবদান হলো বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল। এছাড়া জেএফএ কাপ তো আছেই।’