অবশেষে, ফিলিপে কৌতিনিয়ো!

দুর্দান্ত গোলের পর নিন্দুকদের জবাব দিতে ফিলিপে কৌতিনিয়োর এমন উদযাপনআশার পাল উড়িয়ে এলেন ন্যু ক্যাম্পে। বার্সেলোনা সমর্থকরা তো খুশিতে আত্মহারা। দুই বছর চেষ্টার পর লিভারপুল থেকে অবশেষে আনা গেল তাদের ‘টার্গেট’ ফিলিপে কৌতিনিয়োকে। কিন্তু কিছু সমর্থক গোষ্ঠীই থাকে, যারা শুধু প্রাপ্তিকেই ভালোবাসে, প্রাপ্তির উৎসকে নয়! ব্রাজিলিয়ান তারকার কথাটি বুঝতে সময় লাগলো না বেশি।

নিজের সমর্থকরা যখন দুয়ো দেয়, সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করে, সেই খেলোয়াড়ের মতো দুর্ভাগা সম্ভবত আর কেউ নেই। যাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে একদিন ন্যু ক্যাম্পের আঙিনায় পা রেখেছিলেন, তারাই তোলে ‘কৌতিনিয়ো হটাও’ স্লোগান। এমনকি ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে বেচে দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন কেউ কেউ।

ভেঙে পড়াটা তার স্বাভাবিক। মাঠের পারফরম্যান্সে তা স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। গ্যালারি থেকে আত্মবিশ্বাস জোগানোর শীতল বাতাস ভেসে আসার বদলে তিক্ত কথা ধেঁয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড় হয়ে। দিনে দিনে আরও অচেনা হতে থাকেন কৌতিনিয়ো। তবে দুঃসময়ে পাশে থাকেন কোচ, ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সতীর্থদের সবাই।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ তৈরি হয় ব্রাজিলিয়ান তারকার। যাতে সমালোচনাকে আলিঙ্গন করে বুক চিতিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মাঠে। আর নিজেকে চেনানোর জন্য ২৬ বছর বয়সী মিডফিল্ডার বেছে নেন চ্যাম্পিয়নস লিগের মঞ্চ। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বজ্র কণ্ঠে নিন্দুকদের জবাব দেওয়ার বদলে কান বন্ধ করে নীবরে উগরে দেন জমে থাকা মনের সব রাগ।

বলা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার সেরা পারফরম্যান্স দেখা গেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় পাওয়া ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচে। মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে নিঃসন্দেহে বার্সেলোনার জয়ের নায়ক লিওনেল মেসি। তবে এই ম্যাচে কৌতিনিয়োর পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটের ম্যাচ দিয়েই হয়তো ‘পুনর্জন্ম’ হলো এই ব্রাজিলিয়ানের।

একটি গোল পাল্টে দিতে পারে কৌতিনিয়োর চলমান পরিস্থিতি- এমনটাই বলা হয়েছিল। গোল পেয়েওছিলেন তিনি, কিন্তু বড় ম্যাচে নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স সমর্থকদের মনে জন্মায় ক্ষোভের আগুন। গত বছরের জানুয়ারিতে ১২০ মিলিয়ন ইউরোতে ন্যু ক্যাম্পে নাম লেখানোর পর শুরুটা ভালোই করেছিলেন কৌতিনিয়োর। তবে কখনই ‍পারফরম্যান্সের ধারা সচল রাখতে পারেননি। এবারের মৌসুমে সবশেষ তিন-চার মাসে ফর্মহীনতার সঙ্গে সমর্থকদের দুয়োয় আরও বিবর্ণ হয়ে পড়ে কৌতিনিয়োর পারফরম্যান্স।

মোটা অঙ্কের অর্থ লগ্নি করায় প্রত্যাশা এমনিতেই বেশি ছিল বার্সেলোনা সমর্থকদের। সেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল না থাকায় ওঠে নানা প্রশ্ন। যার উত্তর অনেকটাই কৌতিনিয়ো দিতে পেরেছেন ম্যানইউয়ের বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচে। আক্রমণভাগ থেকে শুরু করে মাঝমাঠ কিংবা রক্ষণ, সব জায়গায় ছিল এই ব্রাজিলিয়ানের পদচারণা। কখনও ক্ষীপ্রগতিতে ম্যানইউয়ের রক্ষণে ঢুকে গেছেন, কখনও আবার মাঝমাঠে নিয়েছেন বলের নিয়ন্ত্রণ। আবার ম্যানইউয়ের কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলের আক্রমণ ঠেকাতে নিয়েছেন ডিফেন্ডারের ভূমিকা।

অ্যাকুরিসি, শুট, পাসিং- সবকিছুই ছিল দুর্দান্ত। তাছাড়া মেসি জায়গা বদল করে ডান থেকে বাঁয়ে চলে এলে, কৌতিনিয়ো ঠিকই পাশ বদলিয়ে চলে গেছেন ডানে। পায়ের সঙ্গে মাথার কাজেও কৌতিনিয়ো ছিলেন অনন্য।

তবে এত আলোচনা হয়তো হতো না, যদি চোখ ধাঁধানো গোলটি না করতেন। অবশ্য কৌতিনিয়োর জন্য এটা ‘ডান পায়ের খেল’ মাত্র! তা নয়তো কী, লিভারপুলের জার্সি গায়ে এমন গোল করেছেন তিনি অনেকবারই। বক্সের বাইরে থেকে দুই-তিন পা এগিয়ে চলমান বলে নজর রেখে ডান পায়ের আড়াআড়ি শটে গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে লক্ষ্যভেদ। ম্যানইউ গোলরক্ষক দাভিদ দে গেয়া উড়ে গিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুই করার ছিল না এই স্প্যানিয়ার্ডের।

অথচ, কোনও উদযাপন নেই কৌতিনিয়োর! বার্সেলোনা সতীর্থরা যেখানে আনন্দে আত্মহারা, সেখানে তিনি নির্ভার। দুই কানে আঙুল দিয়ে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বললেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। কী বললেন, সেটা বোঝা না গেলেও এমন উদযাপনের কারণটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। নিন্দুকদের কড়া জবাব দিতেই এই নীরব উদযাপন।

তবে দুঃসময়ের নীরবতা ভেঙেছেন কৌতিনিয়ো। তাতে বুকের ভেতরে জমে থাকা বিষাদ কাটিয়ে এনেছেন আত্মবিশ্বাস। তৈরি করেছেন নতুন পথ। ফিরে আসা কৌতিনিয়োর এখন সেই পথ দিয়ে শুধু এগিয়ে যাওয়া!