মাছ ধরার ফাঁকে ফুটবল খেলেন সেশেলস অধিনায়ক

সেশেলস অধিনায়ক ওয়ারেন মেলিওয়ারেন মেলি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তার অধিনায়কত্বে সেশেলস বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে। বুধবার বিকেলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে জিততে পারলে তা হবে চমক। তবে সেমিফাইনালে জয়টাকে একেবারেই অসম্ভব মনে করছেন না ৬ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার মেলি। দেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়ার একটা স্বপ্ন কিন্তু মনের মধ্যে এঁকে রেখেছেন। স্বপ্নটা পূর্ণতা পেলে জীবনটা অনেক রঙিন হবে, না পেলেও তেমন ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই। ফুটবল তো আর জীবন-জীবিকা নয়!

ভারত মহাসাগরের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপদেশ সেশেলস। জনসংখ্যা মেরেকেটে এক লাখ। শখের বশেই সেখানে সবাই ফুটবল খেলে। ঢাকায় আসা দলটির সবারই আলাদা পেশা আছে। অধিনায়ক নিজে একজন মৎসজীবী! মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। দলে রং-মিস্ত্রি থেকে কসাই কিংবা নিরাপত্তারক্ষীও আছেন।

সেখানে সবাই যার যার কাজ শেষে মাঠে এসে ফুটবলে আনন্দ খোঁজেন। ফুটবলকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগও সেভাবে নেই। পেশাদার লিগ নেই। শৌখিন একেকজন ফুটবলার গড়ে মাসে ১৮৩ ডলার পেয়ে থাকেন। পূর্ব আফ্রিকার দেশে হিসেবে সেখানে বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ মন্দ নয়। ভারত মহাসাগরের অন্য দেশ থেকেও খেলোয়াড়েরা খেলতে আসেন। তবে তাদের মাসিক বেতন স্থানীয়দের চেয়ে বেশি-প্রায় ৪০০ ডলার।

তারপরেও সেখানে ২৫০০ নিবন্ধিত ফুটবলার রয়েছেন! যারা বিভিন্ন পর্যায়ে ফুটবল খেলে থাকেন।দলটির কোচ রালফ জিন লুইসের পেশাও ভিন্ন। সরকারের  অর্থ বিভাগে বড় পড়ে আসীন তিনি। তিনিও শখের বসে কোচিং করান।দেশের হয়ে এসেছেন দায়িত্ব পালন করতে।

আয়–রোজগার কম বলেই ফুটবলকে পেশা হিসেবে নেননি লুইস, ‘আমাদের ওখানে ফুটবল খেলে যা আয় হয় তার চেয়ে অন্য পেশা থেকে বেশি আসে। যে কারণে সবাই শখের বসে ফুটবল খেলে থাকে। কাজ শেষ করে তবেই ফুটবল। আমি নিজেও একজন সরকারি চাকুরিজীবী। তারপরেও আমাদের ছোট্ট দেশে অনেক ফুটবলার রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে খেলে থাকে সবাই। এ ছাড়া জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করাটা তো দেশের জন্যই কাজ করা।’

দলটির ২৫ বছর বয়সী অধিনায়কও সুর মেলান কোচের সুরে, ‘ফুটবল খেলতে আমরা ভালোবাসি। তাই যার যার কাজ সেরে মাঠে চলে আসি। আর দেশের জন্য খেলতে পারাটা তো গর্বের। এক সঙ্গে দুটি কাজ করতে আমাদের তেমন সমস্যা হয় না। আমরা বিভিন্ন পেশায় আছি। ফুটবলও বলতে পারেন আমাদের নেশার মতোই।’

ফুটবলে যে তাদের পেশাদারি আসেনি তার আরও একটি উদাহরণ হলো গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি। পাড়া-মহল্লার ফুটবলে সাধারণত এমনটি হয়ে থাকে। প্রতিপক্ষের কিছু পছন্দ হলো না, ব্যস খেলা থামিয়ে কিংবা খেলা শেষে হাতাহাতি থেকে মারামারিতে নেমে পড়ো। কিন্তু দুটি জাতীয় দলের ম্যাচের মধ্যে যদি এমনটি ঘটে, তাহলে তো অবাক হওয়ারই কথা। গ্রুপে মরিশাসের সঙ্গে সেশেলসের ম্যাচে হয়েছেও তা-ই।

আসলেই যে তারা শখের বসে ফুটবল খেলে থাকেন। তাই মারামারিতেও খুঁজে নেন মনের আনন্দ!