বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলতে আসা ফিলিস্তিন দলের প্রত্যেকে কোনও না কোনও ভাবে দখলদার বাহিনীর অত্যাচারের শিকার। দলের ম্যানেজার জাবের জাবরাইন যেমন বলছেন, ‘আমার বাবা ২০ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। সেই সময় কী দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছে তা শুধু আমরাই জানি। আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজনও নিপীড়নের শিকার। এসব আমরা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। অত্যাচারীদের সঙ্গে লড়াইও করে যাচ্ছি।’
ফিলিস্তিনে জীবন আর মৃত্যু হাঁটে পাশাপাশি। জাবরাইন জানালেন, ‘আমার অনেক আত্মীয়কে হারিয়েছি। শুধু আমি নই, প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছেন। আমরা তাদের শহীদ বলি। যারা দেশের জন্য জীবন দিচ্ছেন তারা তো শহীদই।’
ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ নেই। ইসরায়েলের তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে জর্ডান হয়ে অন্য দেশে যেতে হয় তাদের। এভাবে ভ্রমণ করতে খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। ম্যানেজারের কথা, ‘আমরা নিজেদের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারি না। জর্ডান যেতে প্রায় ১২ ঘণ্টা লাগে। সেখানে যাওয়ার সময় ইসরায়েলিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ওরা কখন কী করে তার তো ঠিক নেই! তবু আমরা দেশকে ভালোবেসে, দেশের জন্য ফুটবল খেলি। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি।’
দলের অন্যতম সদস্য সামেহ মারাবার ইসরায়েলের কারাগারে কাটানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২০১৮ সালেও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলতে এসেছিলেন মারাবা। সেই সময় শুনিয়েছিলেন বিভিষীকাময় কাহিনী।
২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল কাতার থেকে ট্রেনিং নিয়ে জর্ডান দিয়ে স্বদেশে প্রবেশ করার সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হন মারাবা। তার বিরুদ্ধে হামাসের জন্য অর্থ ও যোগাযোগ সংক্রান্ত সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। শুরুতে ৪৫ দিন ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন। তারপর পাঠানো হয় কারাগারে।
ইসরায়েলের কারাগারে ভয়ঙ্কর আটটি মাসের কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না মারাবা। কারাগারের ছোট্ট কুঠুরির কথা মনে হলে আজও ভয়ে শিউরে ওঠেন, ‘সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে এখনও কষ্ট লাগে। বিনা কারণে আমাকে আটক করা হয়েছিল। অন্ধকার এক কুঠুরিতে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে হতো সারা দিন, শারীরিক অত্যাচার না হলেও মানসিক নির্যাতন করা হতো। সূর্যের আলো দেখতে পেতাম না, প্রিয়জনদের আর কখনও দেখতে পাবো কিনা জানতাম না।’
তবু ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ থেমে নেই। স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে তারা লড়াই করছেন, অনেক কষ্ট-অপমান মুখ বুজে সয়ে ফুটবল দল নিয়ে ঘুরছেন দেশে-দেশে। সেজন্য শ্রদ্ধা জানাতেই হবে ফিলিস্তিনিদের।