দলকে জেতানোর পুরস্কার মেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ!

মেসির সঙ্গে বসুন্ধরা কিংস ডিফেন্ডার নিকোলাস দেলমন্তেগত বছর বসুন্ধরা কিংসে যোগ দিয়ে নিকোলাস দেলমন্তে খেলছেন আস্থার সঙ্গে। ২০০৯ সালে আর্জেন্টিনার অন্যতম শীর্ষ ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তে দিয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু তার। এরপর আলবেনিয়া, মালয়েশিয়া ও স্পেন ঘুরে এই আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার এখন ফুটবলের সুরভি ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে আসার আগে স্প্যানিশ ক্লাব সাবাদেলের হয়ে ধারে খেলেছেন দেলমন্তে। কাতালান এই ক্লাবে খেলার সময় লিওনেল মেসির সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। হয়েছে ভাব বিনিময়ও।

৩০ বছর বয়সী দেলমন্তের কাছের ওই মুহূর্তের অনুভূতি ছিল অন্যরকম, ‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। গত বছর সাবাদেলের হয়ে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে হয়েছে। দলকে রেলিগেশনের হাত থেকে বাঁচাতে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ড্রেসিংরুমে সবার ক্লজেটে যার যার ছবি থাকে। আমি ওখানে মেসির ছবি সাঁটিয়ে রেখেছিলাম।’

কথাগুলো শেষ করেই আবার বলতে শুরু করলেন, ‘মেসির প্রতি আমার এই পাগলামো আমাদের ক্লাব সভাপতি এস্তেভে ক্লাজাদাও জানতেন। ওই ম্যাচের আগের রাতে তিনি আমাকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দলকে এই ম্যাচ জেতাতে পারলে মেসির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন। ম্যাচটা আমরাই জিতেছিলাম। ক্লাজাদাও কথা রেখেছিলেন।’

মেসির সঙ্গে দেখা করে কী কথা হয়েছিল? দেলমন্তে যেন এখনও শিহরিত, ‘মেসির সঙ্গে দেখা হওয়ার অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। প্রথমে গেলাম বার্সার ট্রেনিং গ্রাউন্ডে, তখন মেসিরা অনুশীলন করছিল। অনুশীলন শেষে দেখি মেসি আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। ওই মুহূর্তটা ছিল অসাধারণ। ১০ মিনিট সময় কিভাবে অতিবাহিত হলো আমি বুঝতেই পারিনি।’

সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমিও আসলে অভিভূত ছিলাম, তাই ফুটবলের বাইরে খুব বেশি কথা হয়নি। ফেরার আগে বলেছিলাম, ওর মতো একজনের খেলা দেখতে পেরে আমি ভাগ্যবান। আমার মতে মেসিই সেরা। ও হ্যাঁ, এর আগে আমার একটি জার্সিও মেসিকে উপহার দিয়েছিলাম। সেটা আবার সই করিয়ে নিয়েছিল মেসি!’

বসুন্ধরাতে নিজের ফ্লাটে বড়সড় দুটি আর্জেন্টিনার পতাকা রাখা আছে তার। মেসির জার্সি পরে প্রায়ই তাকে দেখা যায়। এই বিষয়ে দেলমন্তে বললেন, ‘আমি যেখানেই যাই আমার সঙ্গে দুটি জিনিস থাকে, দেশের পতাকা আর মেসির একটি জার্সি। পতাকার রং আমার মনে প্রশান্তি এনে দেয়। আর জার্সিটা রেখেছি অন্য কারণে। আমি চাই মেসি একদিন বিশ্বকাপ জিতুক।’

বসুন্ধরায় প্রথম খেলতে এসেছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লিগই স্থগিত হয়ে গেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে অন্য সবার মতো দেলমন্তেও চিন্তিত, ‘এই সময়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করা উচিত সবার। খেলোয়াড়দের জন্য সময়টা আরও কঠিন। ভেবে দেখুন, মাঠেই যেতে পারছি না। তবে থেমে থাকলে তো চলবে না। বাড়িতে বা যেখানে অল্প জায়গা আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশে আসার আগে এই দেশ নিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল, সেটাও ভাগাভাগি করলেন এই ডিফেন্ডার, ‘গার্মেন্টেসের জন্য বাংলাদেশের সুনাম আছে। এখানে আসার আগে আর্জেন্টিনা দল নিয়ে এদেশের মানুষের উন্মাদনার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। বিশ্বকাপের সময় এখানে মানুষের ঘরে ঘরে পতাকা আর জার্সি পরে উৎসবের ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম।’ আসার পরের অভিজ্ঞতাও বললেন তিনি, ‘বাংলাদেশের মানুষ সবাই বন্ধুর মতো আচরণ করে। যখন শোনে আমি আর্জেন্টাইন, তখন তারা মেসি আর ম্যারাডোনার কথা জিজ্ঞেস করে। এই দুজনকে কতটা ভালোবাসে, তা জানাতে দেরি করেন না। তাদের সঙ্গে মিশতেও তাই আমার সুবিধা হয়।’

দেলমন্তের সঙ্গে বসু্ন্ধরায় যোগ দিয়েছেন আরেক আর্জেন্টাইন হার্নান বার্কোস। এই ফরোয়ার্ড আসায় বসুন্ধরার শক্তি আরও বেড়েছে বলে মনে করেন দেলমন্তে, ‘বার্কোস দলে আসার পর আমাদের দলের মান ও শক্তি বহুগুন বেড়েছে। আগে এই দলের একমাত্র আর্জেন্টাইন ছিলাম আমি। এখন ও আসার পর আরেকটু সুবিধাই হয়েছে। খেলাধুলা ছাড়াও নিজ দেশ নিয়ে গল্প করার সুযোগ হয়েছে।’