একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রিতুপর্ণা

চার বোনের একমাত্র ভাই পার্বণ চাকমা। বয়সে সবার ছোট। একমাত্র ভাই হওয়াতে পরিবারে আনন্দেরও সীমা ছিল না। আর পিঠাপিঠি হওয়ায় রিতুপর্ণা চাকমার সঙ্গে ভাই-বোনের সম্পর্কটাও ছিল মধুর। রিতুপর্ণার খেলার বেশ ভক্ত ছিল আদরের এই ছোট ভাই। সবকিছু জীবনের নিয়মেই চলছিল তাদের। কিন্তু একদিন আগে ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আদরের এই ছোট ভাইটি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় পুরো পরিবার এখন শোকে মুহ্যমান।

১৭ বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়া ভাইকে হারিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ জাতীয় নারী দলের উইঙ্গার রিতুপর্ণা। প্রায় সমবয়সী ভাইটির সঙ্গে কতই নাই স্মৃতি জড়িত। এমন জলজ্যান্ত ভাইকে হারানোর শোক যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বারবার পার্বণের কথা মনে পড়তেই অশ্রুসিক্ত হচ্ছে নয়ন। অথচ মালয়েশিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে ছুটিতে আসা বোনের জন্য অপেক্ষাতেই থাকার কথা ছিল পার্বণের। বোনকে নিয়েই ভাইয়ের বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু নিয়তি কী নিষ্ঠুর! বাসে দুর্ঘটনার খবর শুনে রিতুপর্ণাকে সরাসরি ছুটে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে আদরের ভাইটির নিথর দেহ দেখতে হয়েছে।  মনে করেছিলেন, অসুস্থ ভাইকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাবেন। কিন্তু না ফেরার দেশে চলেই গেছেন পার্বণ!

বৃহস্পতিবার পার্বণের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। সিরিজ জেতার আনন্দ যে এভাবে নিমিষেই মিলিয়ে যাবে, তা ছিল রিতুর ভাবনারও অতীত। জেলার কাউখালি উপজেলার মোগাছড়ি গ্রামে নিজের বাসা থেকে রিতুপর্ণা বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘সবসময় ঢাকা থেকে বাড়ি গেলে শহরে আমার ভাই রিসিভ করতো। পরে ভাইকে ঘিরে কত পরিকল্পনা করতাম, ছুটিতে কী করবো এসব নিয়ে। এবারও পরিকল্পনা ছিল একসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র করবো, অনেক আনন্দ করবো। কিন্তু এক দুর্ঘটনা সবকিছু ওলট-পালট করে দিলো। এমনটি হবে কখনও চিন্তা করিনি।’

রিতুপর্ণা বাবাকে হারিয়েছেন ২০১৫ সালে। একমাত্র ভাই ছিল পরিবারে অনেক আদরের। ফুটবল নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কম আলোচনা হতো না। সেই ভাইটিকে হারিয়ে রিতুপর্ণা এখন  শোকে কাতর, ‘ভাই আমার খেলার সব খবর রাখতো। ভালো খেললে প্রশংসা করতো, আবার খারাপ খেললে বলেও দিতো। ও সবসময় আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাতো। এখন তো সব শেষ। ভাই আর আমার ফুটবল নিয়ে কিছু বলবে না।’

ফোনের অন্য প্রান্তে রিতুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। একটু সামলে নিয়ে বললেন, ‘এখন ভাইয়ের স্মৃতি নিয়ে আমাদের বাচঁতে হবে। কীভাবে সামনে পথ চলবো, বুঝে উঠতে পারছি না। কে আমাকে ফুটবল নিয়ে ভালো-মন্দ বলবে?’