নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের পায়ে ছন্দময় ফুটবলের পসরা

চোট কাটিয়ে দুই ম্যাচ পর নেইমার জুনিয়র ম্যাচে ফিরলেন। ফিরলেন ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা। বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের শুরুর ম্যাচে ব্রাজিল কী করবে তা দেখতে স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ ভীড় করেছিলেন হলুদ সমর্থকরা। ঠিক যেমনটি তারা প্রত্যাশা করেছিলেন তেমনই পারফর্ম্যান্স করে দেখিয়েছে সেলেসাওরা। স্বরূপে আবর্তিত হয়ে দুর্দান্ত এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে তিতের দল।

ম্যাচ দেখে কী বলবেন একে? দক্ষিণ কোরিয়াকে দুমরে মুচড়ে দিয়েছে! আদতে তাই তো হয়েছে। কী করেনি ব্রাজিল! বলের ওপর অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ, দেখার মতো ড্রিবলিং করে সাপের মতো এঁকে বেকে ছন্দময় ফুটবলের পসরা মেলে ধরে প্রতিপক্ষকে তছনচ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, এরপর কাঙ্ক্ষিত সেই  একের পর এক গোল!

প্রথম গোলে ভিনিসিয়ুস অসাধারণ দক্ষতায় নিখুঁত শটে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন। আর এর ৬ মিনিট পর পেনাল্টি পেয়ে সমর্থকদের যেন আবদার মেটালেন নেইমার! পেনাল্টির বাঁশি বাজতেই নেইমারের নাম নিয়ে গ্যালারিতে প্রতিধ্বনি। হয়তো সমর্থকদের কথাই রাখতে গিয়ে নেইমার এলেন স্পট কিক নিতে। ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে বলের কাছে গিয়ে আলতো শটেই গোলকিপারের বিপরীত দিক দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে সমর্থকদের আনন্দের জোয়ারে যেন ভাসালেন!

রিচার্লিসন বা পাকেতারা কম যাবেন কেন। প্রথমার্ধের অন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন গোল এসেছে এই দুজনের পা থেকে। চার গোলে এগিয়ে থাকার পর আর কি আগ্রাসী ফুটবলের প্রয়োজন আছে?

গোলের পর ভক্তদের ভালোবাসা দেখালেন নেইমার

বিরতির পর ব্রাজিল একটু দেখে শুনে খেলতে লাগলো। গোল করার স্পৃহাটা একটু গেল কমে। নেইমারসহ অন্য কয়েকজন চলে গেলেন সাইড বেঞ্চে। হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালের শক্তি সঞ্চয় করতে তিতে এমন কৌশল নিয়েছেন। আর এই সুযোগে দক্ষিণ কোরিয়া এক গোল শোধও দিলো।

তবে ম্যাচের আগে কোচ বেন্তে ও দক্ষিণ কোরিয়ার বড় তারকা সন যেভাবে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, তা ম্যাচে সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ব্রাজিলের দারুণ ফুটবল শৈলীর কাছে যেন সবকিছু হার মেনেছে। হয়েছে এলোমেলো। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্যটা কোথায় তা আবারও বুঝলো এশিয়ার অন্যতম প্রতিনিধিরা। উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র ও পর্তুগালকে হারিয়ে তারা চেয়েছিল ব্রাজিলবধ করতে। বড় অঘটন ঘটাতে!

কিন্তু নেইমার-ভিনিসিয়ুসরা যে তাতিয়ে ছিলেন। গ্রুপ পর্বে ক্যামেরুনের কাছে হারের ম্যাচটি ভুলে নতুন করে জেগে ওঠতে চেয়েছিলেন তারা। আর তা ঠিকঠাক পেরেছেনও। এমন দ্যুতিময় ফুটবল নৈপুন্য প্রদর্শন ব্রাজিলকে যে বহুদূর নিয়ে যাবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। তবে এর জন্য পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। আর সেটা সেলেসাওদের পক্ষে করে দেখানো খুবই সম্ভব।

গ্যালারিতে নেইমারের নামে প্রতিধ্বনি দেওয়ার ফাঁকে কিংবদন্তী পেলের ছবি সম্বলিত বড় পোস্টার মেলে ধরেছিল সমর্থকরা। সেখানে লেখা ছিল গেট ওয়েল সুন পেলে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন ফুটবল গ্রেট। ম্যাচ শেষে নেইমাররাও তাই করলেন। স্মরণ করলেন তাদের দেশের তথা বিশ্বের বিখ্যাত ফুটবল কিংবদন্তীকে। হাসপাতালের বিছানা থেকে এমন ম্যাচ দেখার সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই আনন্দিত হয়েছেন পেলে!