ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছেন মেসিরা

দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ফ্রান্সের বিপক্ষে সর্বকালের সেরা ফাইনালে দুই গোল করে অধরা সোনালি ট্রফিটা ঘরে তুলেছেন মেসি। তাদের বিশ্বকাপ জয়ে যেখানে গোটা বিশ্বে আর্জেন্টাইন ভক্তদের মাঝে উৎসব শুরু হয়েছে, সেখানে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের অবস্থা অনুমেয়ই। স্থানীয় সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৪০ মিনিটে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলকে বহনকারী বিমান ইজাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে।

তখন বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় লাখো মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী প্রিয় তারকাদের এক পলক দেখার আশায়। কেউ পতাকা নিয়ে, কেউ জার্সি পরে, কেউ বা স্লোগান দিয়ে ইউনিসন ও মুচাচোস গান গেয়ে অপেক্ষা করছিলেন মেসিদের জন্য। বিশ্বজয়ী মেসি আর ভামোস আর্জেন্টিনা স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে পুরো শহর। বিমান থেকে স্বর্ণালি ট্রফি হাতে লিওনেল মেসি যখন নামলেন, লাখো মানুষের দৃষ্টি তার দিকে। এমএলটেনের পেছন পেছন নেমে এলেন বিশ্বজয়ী ফুটবল দলের বাকি সদস্যরা।

স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলাররা। ছাদখোলা বাসে চেপে বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় ঘুরে অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন মেসি, মার্টিনেজ, ডি মারিয়ারা। তাদের বাসের চারদিকে তখন জনসমুদ্র। তারা নেচে-গেয়ে অভিবাদন জানাতে থাকেন বিশ্বকাপ জয়ী বীরদের। মেসিরাও হাত নেড়ে জবাব দেন ভক্তদের ভালোবাসার।

ছাদখোলা বাসেই বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলাররা গান গেয়ে, ড্রাম বাজিয়ে ভক্তদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবে শামিল হয়েছিলেন। বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হওয়া এনজো ফার্নান্দেজ ড্রাম বাজাচ্ছিলেন জোর তালে। শুধু ফার্নান্দেজই নন, লাওতারো মার্টিনেজ থেকে শুরু করে অনেকেই ড্রাম বাজিয়েছেন। এছাড়া ফুটবলারদের সঙ্গে অন্য বাদ্যযন্ত্রও ছিল। একটা সময় ভক্তরা এবং বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলাররা ‘মুচাচোস’ গানের ব্যান্ড সংস্করণের সঙ্গে তালে তালে নাচতে ও গাইতে থাকেন। এ গানটি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার আনঅফিসিয়াল জাতীয় সংগীতই হয়ে গিয়েছিল!

পাক্কা ৩৬ বছর পর অসাধ্য সাধন করেছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন ফ্যানদের সাড়ে তিন দশকের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষা শেষ হয়েছে রবিবার। স্বাভাবিকভাবেই খুশির জোয়ারে ভাসছে বুয়েন্স আয়ার্সের, রোসারিও। বুয়েন্স আয়ার্সের পথ-ঘাট, আকাশে-বাতাসে কেবল আনন্দ। আনন্দ প্রকাশ করতে পথে নেমে এসেছে সাধারণ মানুষ। ফলে কচ্ছপগতিতে এগোতে হয়েছে বিশ্বকাপ জয়ীদের বহনকারী ছাদখোলা বাস। ভক্তদের চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনার নাগরিক অ্যাবুর্গেইলি বলেছেন, ‘আমি আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। মেসিদের এমন জয়ে আমি খুবই গর্বিত। একজন মেসি আমাদের দেশের এত বড় অর্জনের কাণ্ডারি। ৩৬ বছর পর এমন আনন্দ উদযাপনের মুহূর্ত পেয়ে আমরা খুবই খুশি।’

বিমানবন্দর থেকে খেলোয়াড়রা চলে যান আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেড কোয়ার্টারে। সেখানেই তারা বাকিটা সময় বিশ্রাম নিবেন। স্থানীয় সময় দুপুরে ছাদখোলা বাসে করে আর্জেন্টিনার ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ ওবেলিস্কের দিকে রওনা দিবেন মেসি-ডি মারিয়ারা। সবশেষ ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের উদযাপনও এখানেই হয়েছিল। এই উদযাপনে যাতে দেশের সব মানুষ অংশ নিতে পারে সেই কারণে প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন।