মেসিরা যেদিন পরেছিলেন রাজমুকুট

লিওনেল মেসি এখন কী ভাবছেন? নিশ্চয়ই দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামের রাতের সেই আনন্দমুখর স্মৃতি রোমন্থন করতে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন...বিজয়ীর বেশে লিওনেল মেসি উঠছেন দৃশ্যমান পোডিয়ামে। হাতে নেওয়ার অপেক্ষায় বিশ্বকাপ ট্রফি। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কানে কানে কিছু একটা বলতেই কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ সবাইকে চমকে আরবের ঐতিহ্যবাহী কালো রঙের পোশাক বের করে পরিয়ে দিলেন তাকে। সেই পোশাকেই (আরবী ভাষায় এই পোষাকের নাম বিশত, যা  বীরদের সম্মান জানাতে আরবে রীতি অনুযায়ী দেওয়া হয়।) মেসি নিলেন ৩৬ বছরের আরাধ্য বিশ্বকাপের ট্রফি। যার মাধ্যেমে চির অমর হয়ে থাকলো যে ছবি। আর্জেন্টিনার  সেই বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার অবিস্মরণীয় সেই মুহূর্তটির আজ এক বছর পূর্তি।

কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে সেসময় অনেকেই ভেবেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস গড়তে পারে আর্জেন্টিনা। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে লিওনেল মেসির হাতে উঠবে মহামূল্যবান সোনালী ট্রফি। তবে সৌদি আরবের বিপক্ষে অঘটনের হার দিয়ে শুরু করা দলের এমন পারফরম্যান্সে ধাক্কা খেতে হয়েছে। ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের হাতে বিশ্বকাপ শোভা পাবে কিনা- সেটি নিয়ে কারও কারও মনে সংশয়ও কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু যে দলে মেসির মতো মহাতারকা আছে, সে দল সহজেই ভেঙে পড়বে তা কী করে হয়! সংশয়ের কালো মেঘ দূর করে এরপর একের পর এক ম্যাচে দুর্দমনীয় সাফল্যের শেষটা এসেছে লুসাইল স্টেডিয়ামে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে। এ যেন ফুটবলের স্বর্গে নতুন করে পা দেওয়া।

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে দিনটি এলেও মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের কথা। কাতারের মতো ছোট্ট দেশ অনেক বিতর্কের পর বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছিল। শীতকালে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে সেসময় দোহায় শুরুতে পা দিয়ে উত্তেজনার পরশটা সেভাবে পাওয়া যাচ্ছিল কমই। সময় গড়াতে মেট্রোরেল, ফ্যান জোন আর স্টেডিয়াম কেন্দ্রীক উৎসবের আমেজই বিশ্বকাপকে জাগ্রত রাখে।

গ্রুপ ও নক আউট পর্বে একে একে যখন জার্মানি, ইংল্যান্ড, ব্রাজিলের মতো দেশ ছিটকে যেতে শুরু করে সেসময় মেসির আর্জেন্টিনার ওপরই আস্থা ছিল বেশি।যদিও ফাইনালে আরেক শক্তিধর ফ্রান্স শেষ বিন্দু পর্যন্ত যেভাবে লড়াই করে যাচ্ছিল তাতে করে উত্তেজনার পারদ চলে যায় চরমে।

লুসাইল স্টেডিয়ামের ৮৯ হাজার দর্শক-সমর্থকদের সামনে মেসি-এমবাপ্পের দ্বৈরথ ছিল দেখার মতোই। দি মারিয়া-জিরুরা তাতে দ্বিগুণ উৎসাহে যোগ দেয়। অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বাজপাখির মতো পারফরম্যান্স আর্জেন্টিনা তথা সমর্থকদের এনে দিয়েছিল বাধভাঙা উল্লাসের দারুণ মুহূর্ত। আকাশ ভেদ করে  যেন মর্ত্যে নেমে এসেছিল অবিস্মরণীয় জয়ের নজরকাড়া সব দৃশ্য, ধরা দেয় বিশ্বকাপের আরাধ্য সোনালী ট্রফি!

শুধু লুসাইল স্টেডিয়াম নয়, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের আবেগকেও সেসময় দারুণভাবে স্পর্শ করেছে। হাজারো সমর্থকদের গগণবিদারী চিৎকার-আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা হয়েছিলেন অনেকে। দূর দেশ হয়েও লাল সবুজের দেশের এমন সমর্থন স্কালোনি-মেসিদের কানে পৌঁছে গিয়েছিল আগেই। তাই তো আর্জেন্টাইনরা বাংলাদেশকে এরপর থেকে অন্য চোখে দেখে আসছে। ঢাকায় দূতাবাস পর্যন্ত খোলা হয়েছে। 

এক বছর আগে দোহাতে এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর লিওনেল মেসিদের নিয়ে প্রত্যাশার চাপ স্বাভাবিক ভাবে আরও বেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে সমর্থকরা নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন। মেসি খেলবেন কিনা তা এখনই বলা বেশ কঠিন। তবে ৩৬ বছর পর ফুটবল জাদুকর যা করে দেখিয়েছেন আপাতত তা রোমন্থন করেই সুখ স্মৃতিতে নির্দ্বিধায় ডুব দেওয়া যাচ্ছে, সামনের দিকেও যাবে। এর রেশ থাকবে অনেক সময়। 

হয়তো আজ মেসি-মার্টিনেজরা এক বছর আগের দারুণ কীর্তির কথা মনে করে সুখের ভেলাতে নতুন করে হারিয়ে যাবেন। ফাইনাল ম্যাচের ভিডিও দেখে মন চাইবে লুসাইল স্টেডিয়ামে আবারও ফিরে যেতে। সমর্থকদের সঙ্গে ‘মুচাচোস’ গানে তাল মেলাতে। আর এটাই যে স্বাভাবিক। বিশ্বক্রীড়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ট্রফি এক বছর ধরে তাদের হাতেই যে শোভা পাচ্ছে!