লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধ

‘আগে জীবন, তারপর ফুটবল’

ফিলিস্তিনিদের ওপর শুরু থেকে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত বছর থেকে সেই মাত্রা বাড়িয়ে গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি প্রতিবেশী লেবাননের সঙ্গেও নতুন করে যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে ইহুদী রাষ্ট্র। এমনিতে তাদের মধ্যে ১৯৮২ সাল থেকে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। এমন পরিস্থিতে লেবানিজদের পক্ষে জীবন বাঁচানো এখন বড় অগ্রাধিকার। তাই তো ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাও এখন স্থগিত রেখেছে। বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আগে জীবন বাঁচিয়ে তারপর ফুটবলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছে।

এই মাসে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল লেবাননের। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ভারত ও ভিয়েতনাম ছিল অপর দুই প্রতিপক্ষ। তা বাতিল করা হয়েছে। ঘরোয়া ফুটবল তো যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থা যে, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে নেজমেহ দলের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জাতীয় দলের প্রশাসক ফুয়াদ বাহাওয়ান সেদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেছেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি ভালো নয়। হানাহানি চারদিকে। অনেক লোক হতাহত হয়েছে। দুর্বিষহ জীবন যাপন। এমন অবস্থায় আমরা জাতীয় দলের কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছি। এই মাসে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার কথা ছিল। তা বাতিল করা হয়েছে।’

লেবাননের সশস্ত্র সংগঠক হিজবুল্লাহসহ অন্যদের সঙ্গে ইসরায়েল অনেকবার নানানভাবে যুদ্ধে জড়িয়েছে। আবার থেমে গেছে। এবারও থেমে যাবে বলে বাহাওয়ানের প্রত্যাশা, ‘আমরা আশা করছি, এই যুদ্ধ শিগগিরই থেমে যাবে। থেমে গেলে নভেম্বরে আমরা মিয়ানমারসহ অন্যদের সঙ্গে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলবো। আসলে আমাদের এখানে আগে জীবন, তারপর ফুটবল।’

পাশাপাশি নিজ দেশের যুদ্ধের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে বাহওয়ান বলেছেন, ‘বাসাতে বসে মাথার ওপর বোমার আওয়াজ শুনতে পাই। ভয় লাগে, এই বুঝি আমাদের বাড়িতে এসে পড়লো। বৈরুতে অনেক বাড়িতে পড়েছেও। তবে কাজের প্রয়োজনে আমাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। অনেকে যাচ্ছে। আসলে দক্ষিণে ভয়াবহতা বেশি। সেখান থেকে আমরা যেখানে থাকি, সেই উত্তরে জীবন বাঁচাতে অনেকে চলে আসছে। আর জাতীয় দলের কেউ কেউ দেশের বাইরে থাকে। যারা দেশে আছে তারা নিরাপদেই আছে।’

জাতীয় দল আপাতত খেলছে না। ঘরোয়া ফুটবলও বন্ধ। তবে এই মাসে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ রয়েছে। সেখানে খেলবে তাদের নেজমেহ দল। ঘরোয়া ফুটবল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেলাও নেই। দলটি আবার কবে অনুশীলনে নামবে কিংবা আদৌ নামতে পারবে কিনা, সংশয় রয়েছে। দিন কয়েক আগে দলটির ম্যানেজার আব্বাস আতউইর কণ্ঠে ছিল শঙ্কা, ‘আসলে আমাদের এখানে ইসরায়েলের হামলার পর কী হচ্ছে, বলা মুশকিল। খেলা তো বন্ধ রয়েছে। এখন কবে নাগাদ অনুশীলন শুরু করতে পারবো, তা বলতে পারছি না। তবে কয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবো অনুশীলন শুরু করতে পারবো কিনা।  আসলে এই যুদ্ধে সবাই কোনও না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার কাছের এক আত্মীয় মারা গেছেন। আমি সেটা নিয়ে ব্যস্ত আছি। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’

একসময় বসুন্ধরা কিংসে খেলে যাওয়া লেবানিজ স্ট্রাইকার জালাল কদুহ তার দেশের বর্তমান অবস্থায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সবার বেঁচে থাকাই যে বড় চ্যালেঞ্জ।