গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে বার্সেলোনা দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মঙ্গলবার ইন্টার মিলানের মাঠেও দুই গোল হজম করে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর দারুণ প্রত্যাবর্তনে শেষ দিকে লিড নেয় কাতালান জায়ান্টরা। নিস্তব্ধতা নেমে আসে সান সিরোতে। কিন্তু নাটকের শেষ অঙ্কে লেখা ছিল ইন্টারের সাফল্যের গল্প। দ্বিতীয়ার্ধের স্টপেজ টাইমে গোল করে সমতা ফেরায় তারা। তারপর অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোল। সাত গোলের থ্রিলারে ভরা দ্বিতীয় লেগ শেষে ঘরের দর্শকদের সামনে উল্লাসে ভাসলো ইতালিয়ান জায়ান্টরা। ৪-৩ গোলে ম্যাচটি জিতেছে ইন্টার এবং দুই লেগে ৭-৬ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালে পা রেখেছে। শিরোপার লড়াইয়ে আর্সেনাল কিংবা পিএসজির মুখোমুখি হবে ইন্টার।
পুরো ম্যাচে দারুণ দাপট দেখিয়েও বার্সাকে ফিরতে হলো স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে। ৭১ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল তারা। স্প্যানিশ জায়ান্টরা শট নিয়েছিল ২২টি, বিপরীতে ইন্টারের ছিল ১৩টি। গোলমুখে শট নেওয়াতেও ইতালিয়ানদের সঙ্গে তাদের ছিল বড় তফাত। স্প্যানিশ জায়ান্টরা ১০টি শট রেখেছিল লক্ষ্যে, যেখানে ইন্টারের ছিল সাতটি। বিশেষ করে ডান উইংয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন লামিনে ইয়ামাল। স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে সামলে নেন ইন্টার কিপার ইয়ান সমার। সব মিলিয়ে সাতটি সেভে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি।
প্রথম লেগের মতো ফিরতি লেগেও ইন্টার দুই গোলে এগিয়ে যায়। ২১তম মিনিটে লাউতারো মার্তিনেজ গোল করে ইন্টারকে লিড এনে দেন। বার্সা বলের দখল হারালে থুরামের পাসে গোলমুখ খোলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল কাতালান জায়ান্টরা। কিন্তু ফিনিশিংয়ে তালগোল পাকিয়ে ও ইন্টারের রক্ষণের দারুণ দক্ষতায় পেরে ওঠেনি তারা।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে মার্তিনেজ পেনাল্টি আদায় করেন। কালহানোগলু স্পট কিক থেকে স্কোর ২-০ করেন। দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইন্টার।
৫২ মিনিটে আকারবির হেডে তৃতীয়বার জাল কাঁপায় ইন্টার। কিন্তু অফসাইডের পতাকা ওড়ান লাইন্সম্যান।
এরপরই বার্সার চমৎকার প্রত্যাবর্তন। ৫৪তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে মার্টিন বল ভাসান। গার্সিয়া ডানপায়ের ভলিতে ব্যবধান কমান। তিন মিনিট পর মার্টিনের বাড়ানো বলে গার্সিয়ার শট অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন সমার।
৬১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে উড়ে আসা বল হেড করে জালে জড়িয়ে দেন দানি ওলমো। সমতায় ফেরে বার্সা। চার মিনিট পর অল্পের জন্য বার্সার তৃতীয় গোল হয়নি। তোরেস বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি।
৬৮তম মিনিটে বার্সা পেনাল্টি পেয়েছিল। ইয়ামালের ফাউলে রেফারি এই সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ভিএআরে দেখা যায় বক্সের ঠিক বাইরে পড়ে গেছেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ফ্রি কিক থেকেই বল দেওয়া নেওয়ার পর ইয়ামালের ক্রস প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৭৭ মিনিটে ইয়ামালের একটি প্রচেষ্টা এক হাতে থামিয়ে দেন সমার। ৮৮তম মিনিটে বার্সা তৃতীয় গোল পেয়ে যায়। শেসনি বক্সের বাইরে এসে বল পাঠান ইন্টারের প্রান্তে। পেদ্রি বাঁ দিকে রাফিনহার কাছে বল দেন। ব্রাজিলিয়ান তারকার বাঁ পায়ের শট সমার নিচু হয়ে দুই হাত এক করে ফিরিয়ে দেন। ফের বল পান রাফিনহা। ডান পায়ের ফিরতি শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ইয়ামালের শট পোস্টে লাগে। এর দুই মিনিট পর সান সিরোর নিস্তব্ধ গ্যালারি উল্লাসে ফেটে পড়ে। কুবারিস বলের নিয়ন্ত্রণ হারালেও ডুমফ্রাইস পাস দেন বক্সের ভেতরে। নিজের মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে জালে বল জড়ান আকারবি। প্রথম লেগের মতো এবারও নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় স্কোর ৩-৩ এ সমতায় থেকে।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। প্রথম অর্ধে ইন্টার গোল করে এগিয়ে যায়। ৯৯তম মিনিটে রাইট উইংয়ে বার্সার ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে বক্সের মধ্যে বল বাড়ান থুরাম। গোলপোস্ট পেছনে থাকায় মেহদি তারেমি নিজে লক্ষ্যে শট না নিয়ে ছোট পাস দেন ডেভিড ফ্রাত্তেসিকে। বাঁ পায়ের শটে দূরের ফাঁকা পোস্ট দিয়ে জাল কাঁপান তিনি।
১০৬ মিনিটে ইয়ামাল ডান পাশ থেকে বল বাতাসে ভাসান। গোলপোস্টের সামনে বল আটকাতে পারেননি সমার। গোলমুখের সামনে রবার্ট লেভানডোভস্কির লাফিয়ে করা হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে গিয়ে বার্সাকে হতাশ করে।
ফ্রাত্তেসি আবারও লক্ষ্যে শট নেন। ১০৯ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে শট নেন তিনি। শেসনি ডাইভ দিয়ে তার বাঁ পায়ের শট থামিয়ে দেন।
১১৩ মিনিটে ইয়ামালের বাতাসে ভাসানো শট ডান হাত দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে কর্নার বানান সমার। তিন মিনিট পর ফের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে রুখে দিয়ে ইন্টারের লিড ধরে রাখেন এই কিপার। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফারমিন লোপেজের হেড কাছের পোস্টে আরাউহোর কাছে পৌঁছানোর আগেই ডি ভ্রিজ বল ক্লিয়ার করেন।
ম্যাচের পর ইন্টার উইঙ্গার ডুমফ্রাইস এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আবারও অবিশ্বাস্য ম্যাচ। সাত গোল, সত্যিই অবিশ্বাস্য। শেষ পর্যন্ত আমরা লড়েছি। আমরা ফাইনালে খেলবো, আমি খুব খুশি। দলকে সাহায্য করতে পেরে ভালো লাগছে।’
ম্যাচসেরা সমার বলেছেন, ‘আমি খুব খুশি। আমরা অসাধারণ ম্যাচ খেললাম। কোন সেভটি মনে রাখবো? লামিনে ইয়ামালের শেষটা। সে দুর্দান্ত খেলোয়াড় এবং সৌভাগ্যক্রমে সেটা জালে ঢোকেনি। ৩-২ এ পিছিয়ে পড়ার পর অনেক দলই হয়তো হাল ছেড়ে দিতো। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’