সাঁতারে ‘লন্ডনি কইন্যা’র চমক

বাবার সঙ্গে জোনায়না আহম্মেদমিরপুর সুইমিং পুল এখন কলকাকলিতে মুখরিত। সারা দেশ থেকে আসা সাঁতারুদের মিলনমেলায় মুক্তি-ফারজানা-রাতুলরা সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত। তবে তাদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম- জোনায়না আহম্মেদ। ১৪ বছরের এই কিশোরী দেশের কোনও জেলা কিংবা বিভাগ থেকে আসেনি। সুদূর লন্ডন থেকে এসে ঝড় তুলেছে জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে!

পিতৃভূমির টানেই জোনায়নার ঢাকায় আসা, মিরপুর সুইমিং পুলে নেমে পড়া। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে তার সাফল্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকে। কিন্তু পুলে নেমে সবাইকে চমকে দিয়েছে জোনায়না। রবিবার প্রথম দিনেই গড়েছে তিনটি রেকর্ড। তা-ও আবার জুনিয়র বিভাগে নয়, সিনিয়র বিভাগে। সোমবার দ্বিতীয় দিনে জিতেছে পাঁচটি সোনা, এর মধ্যে চারটিতেই রেকর্ড গড়ে। প্রতিটি ইভেন্টেই জোনায়নার সঙ্গে অন্য প্রতিযোগীদের ব্যবধান ছিল সুস্পষ্ট। মঙ্গলবার শেষ দিনেও কয়েকটি ইভেন্টে অংশ নেবে এই কিশোরী। অর্থাৎ আরও স্বর্ণপদক আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা।

মাত্র ছয় বছর বয়সে লন্ডনে সাঁতার শেখা শুরু জোনায়নার। লন্ডন চ্যাম্পিয়নশিপ, এসেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ সহ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার। লন্ডনে জন্ম নেওয়া জোনায়নার বৃটেনের পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্টও আছে।

শেকড়ের টানে দেশে আসা মেয়েকে নিয়ে জুবায়ের আহম্মেদের অনেক স্বপ্ন। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় স্বপ্নজয়ের আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠলো তার কণ্ঠে, ‘দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। জোনায়নার ইচ্ছা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। আমি চাই আমার মেয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনুক।’

মিরপুর সুইমিং পুল চত্বরে বাবার স্বপ্নের কথা পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল জোনায়না। আশৈশব লন্ডনে বসবাস, ভালো বাংলা বলতে পারে না। ইংরেজিতে বললো, ‘লাল-সবুজ পতাকার টানে এসেছি, প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারে অংশ নিচ্ছি। রেকর্ড গড়ে আটটি সোনাও জিতেছি। ভালো করার আত্মবিশ্বাস ছিল। এখন একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা। এসএ গেমস কিংবা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক আসরে দেশের হয়ে লড়তে চাই।’

জোনায়নার সাফল্যে অভিভূত জাতীয় দলের দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ পার্ক তে গুন। যদিও তার মতে, সাঁতারের ‘লন্ডনি কইন্যা’কে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, ‘এবারের প্রতিযোগিতায় জোনায়না ঝড় তুলেছে। তবে জাতীয় দলে আসতে হলে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। সারা দেশ থেকে বাছাই করা ৫৯ জন সাঁতারু আমাদের ক্যাম্পে আছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করে তাকে টিকে থাকতে হবে। বাংলাদেশের সাঁতারে ওর অবস্থান কী হবে, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।’