মেয়ের ট্রেনিংয়ের জন্য গবাদি পশুর খাবার খেতেন বাবা!

৮০০ মিটারে সোনা জেতার পর গোমাথির উদযাপনভারতীয় অ্যাথলেটিকসে হঠাৎ করে নজর কেড়ে নিলেন এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে গোমতী মারিমুথু। তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপ্পালির মুদিকান্দাম গ্রামের এই অ্যাথলেটের গলায় ঝুলছে দোহার এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণ। এই অর্জনের পেছনে কত কষ্ট, কত ত্যাগ-তিতিক্ষা সেটাই দেশে ফিরে জানালেন ৮০০ মিটারে স্বর্ণজয়ী।

সবাইকে চমকে দিয়ে ব্যক্তিগত সেরা টাইমিংয়ে দোহায় সোনা জিতেছেন ৩০ বছর বয়সী অ্যাথলেট। ২ মিনিট ২.০৭ সেকেন্ডে পৌঁছেছেন ফিনিশিং লাইন, কিন্তু এই সময়টুকুর জন্য কতই না কষ্ট করেছেন গোমতী! যার অক্লান্ত পরিশ্রম আর বিসর্জনে এতদূর এসেছেন, সেই বাবাকে কাছে না পেয়ে যেন স্বর্ণজয়ের আনন্দ শুধু কষ্টই বাড়াচ্ছে।

চেন্নাইয়ে ফিরে সবার কাছে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন গোমতী। কিন্তু খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন বাবাকে, যিনি ২০১৬ সালে চলে গেছেন পরপারে। তিন বছর আগে বাবা হারানোর শোক, সঙ্গে কুঁচকির ইনজুরি ট্র্যাক থেকে ছিটকেই দিয়েছিল এই অ্যাথলেটকে। কিন্তু তাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন বন্ধু ফ্রাঙ্কিস ম্যারি। শেষ পর্যন্ত বাবার কষ্ট বৃথা হতে দেননি গোমতী।

ওই যন্ত্রণাক্লিষ্ট দিনগুলোর কথা স্মরণ করে আবেগী হয়ে গেলেন এই অ্যাথলেট, ‘যখন আমি ট্রেনিং শুরু করেছিলাম, তখন হঠাৎ করে বাবার পায়ে সমস্যা ধরা পড়লো। তিনি হাঁটতেও পারতেন না তখন। আমাদের শহরে বাসের তেমন ভালো সুযোগ সুবিধা ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না। রাস্তাঘাটও সুবিধার নয়।’

এত বাধা বিপত্তির মধ্যে বাবা চেয়েছিলেন মেয়েকে অনন্য উচ্চতায় দেখতে। তাই তো সব কষ্টের মধ্যে জন্মদাতাকে পাশে পেয়েছিলেন গোমতী, ‘আমি যদি ভোর ৪টায় উঠতাম, তাহলে সাড়ে ৪টায় বাস ধরতে পারতাম। তাই আমার বাবা আমাকে ৪টায় জাগিয়ে দিতেন, যেন আমি ট্রেনিংয়ে যেতে পারি। আমার মা অসুস্থ থাকলে বাবা আমাকে দুধ গরম করে দিতেন।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন গোমতী, ‘আমার বাবাকে খুব মনে পড়ে। আমাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকতো না। কিন্তু তিনি আমার জন্য খাবার সংগ্রহ করে রাখতেন, আর নিজে খেতেন গবাদি পশুর খাবার। ওই দিনগুলো আমি কখনও ভুলবো না। আজ যদি বাবা পাশে থাকতেন, তাহলে আমি তাকে ভগবান মনে করতাম।’ ইএসপিএন, দ্য হিন্দু