মাহবুবের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে তার পরিবার

মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন অ্যাথলেট মাহবুব আলমতার ঠোঁটে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো। আশাবাদী এক মানুষ ছিলেন অ্যাথলেট মাহবুব আলম। অ্যাথলেট থেকে ফেডারেশনের কর্মকর্তা হয়ে খেলাটাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল তার মধ্যে। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তার সব আশা শেষ করে নিয়ে গেছে বহুদূরে। অন্যপারের বাসিন্দা হলেও স্ত্রী ও একমাত্র কন্যার মানসপটে মাহবুব বেঁচে আছেন আজও

১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ (এখনকার চেন্নাই) সাফ গেমসে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে সবাইকে চমকে দেন মাহবুব। গেমসের ধারাবাহিকতায় শাহ আলম, বিমল চন্দ্র তরফদারের পর মাহবুবের সোনা জয়ের খবরটি ছিল চমক জাগানো। যদিও ১৯৯৯ সালে ফটোফিনিসে ২০০ মিটারে সোনা হাতছাড়া হয়েছিল তার।

যখন ফেডারেশনের মাধ্যমে দেশের অ্যাথলেটিকসের জন্য কিছু করবেন, তখনই ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। কুমিল্লা থেকে মাইক্রোবাসে করে ঢাকা ফেরার পথে কাঁচপুরের কাছে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান মাহবুব। গত ১০ বছর সাবেক অ্যাথলেটের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছে তার পরিবার।

মাহবুবের মৃত্যুর পর ফেডারেশনসহ অন্যান্যদের সহযোগিতা পেয়েছিল তার পরিবার। একমাত্র মেয়ে ফারজানা আলমকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখলেও দুঃসময়ের পথ অনেকটা পাড়ি দিয়ে এসেছেন তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার। কোনোমতে চলছে দুজনের জীবন। স্বামীর মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জে বোনের বাসায় এসে ঠাঁই নেন। ভাই-বোনদের সহযোগিতায় চলছে পরিবারটি। এছাড়া ফেডারেশন থেকেও মাঝেমধ্যে সহযোগিতা পান। এই করোনাতেও আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও অভাব লেগেই আছে।

বাংলা ট্রিবিউনকে স্বপ্না বলেছেন, ‘আজ আমার স্বামী বেঁচে থাকলে আমাদের এমন অবস্থা হতো না। লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করে, কিন্তু অর্থের অভাবে তা হয়ে ওঠে না।’

মাহবুব বেঁচে থাকতে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। মেয়েকে নিয়ে তার ছিল অনেক আশা। সেই আশার কথা তার স্ত্রী জানালেন এভাবে, ‘তার কথা সবসময় মনে পড়ে। সে ভালো মানুষ ছিল। মেয়েকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেন। লেখাপড়া করে একদিন ভালো মানুষ হবে। এখন তিনি নেই। তবে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছি কোনোমতে। কতদূর কী করতে পারব জানি না। আত্মীয়-স্বজন ও অ্যাথলেটিকসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে এখনও আমরা বেঁচে আছি। দেখতে দেখতে তো সময় কম হলো না। ১০ বছর হয়ে গেল।’