‘আজ বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন’

প্রয়াত দুলাল প্রামাণিক বেঁচে থাকলে এখন আরও খুশি হতেন। একমাত্র ছেলে রাকিবুল ইসলাম যে একের পর এক সাফল্য পেয়েই চলেছেন। আজ রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাথলেটিকসের শেষ দিনে ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে আবারও সেরা হয়েছেন নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট।

৬ মাস আগে লিভারজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন রোগভোগের পর পরপারে চলে গেছেন রাকিবুলের বাবা। নাহলে আজকে ছেলের মুখের চওড়া হাসিটা দেখে যেতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে তাই দুই ইভেন্টে সাফল্য পাওয়া রাকিবুল প্রয়াত বাবার কথা মনে করতেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন।

এক সময় যেন কণ্ঠ ধরে এলো তার, ‘বাবাই ছিলেন আমার জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বাবার উৎসাহ পেয়েই আজ  আমি এত দূর এসেছি। বাবা না খেয়ে অনেক সময় আমার অনেক আবদার পূরণ করতেন। ৬ মাস আগে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। করোনার কারণে মৃত্যুর পর তাকে দেখতেও যেতে পারিনি, গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীতে। আজ তার কথা অনেক মনে পড়ছে। আজ আবার দুই ইভেন্ট অংশ নিয়ে সোনা জিতেছি। বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমার সাফল্যে আনন্দ পেতেন।’

কয়েক বছর আগে ফেরি করে খাবার বিক্রি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হন দুলাল প্রামাণিক। এর পর থেকে বিছানাতেই কেটেছে তার জীবনের শেষ কটা দিন। ছেলে রাকিবুলের তখনই চাকরি হয়। একসময় নৌবাহিনীর হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

এখন তো অ্যাথলেটিকসের দুই ইভেন্টেই তার রাজত্ব। বাবার অনুপস্থিতে সংসারের হালও ধরেছেন ১৯ বছর বয়সী অ্যাথলেট। সেই কথা এভাবেই বললেন তিনি, ‘এখন আমি চাকরি করছি। পরিবারে সহায়তা করতে পারছি। এটাই আমার কাছে অনেক কিছু মনে হয়। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এখনকার সাফল্য দেখে আনন্দিত হতেন। মাও (কুলসুম বেগ)অনেক খুশি। তিনি আমাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেন। আজ মা রোজাও রেখেছেন।’

অথচ এই রাকিবুলেরই একটা সময় অ্যাথলেট হওয়ার কথা ছিল না! তিনি হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার। পাবনার ঈশ্বরদীতে স্থানীয় ব্রাদার্স ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবে কিছুদিন খেলেছিলেন। কিন্তু আন্তঃকলেজে অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়ে আর ফুটবলে ফিরে যাননি। পাবনা জেলার পর এখন নৌবাহিনীই তার শেষ ঠিকানা।

এখন রাকিবুল প্রয়াত বাবার ইচ্ছাতে আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে চাইছেন অ্যাথলেটিকসে। অন্য অ্যাথলেটদের মতো তারও স্বপ্ন আন্তর্জাতিক গেমসে অংশ নিয়ে পদক নিয়ে আসা, ‘আমি চাই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো কিছু করতে। যেন দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনা যায়।’

তরুণ রাকিবুলের স্বপ্ন যেন পূরণ হয় সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন। হয়তো একসময় সেটি পূরণ হতে দেখে অন্য জগত থেকে তার বাবা আরও খুশি হবেন।