ফ্রান্স অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের কলি

মাত্র ৭ মাসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কামরুন নাহার কলির। এত কম সময় হলেও শুটিং বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া প্রথম বাংলাদেশি তিনি। অথচ তার শুটিংয়ে আসার পেছনের গল্পটা চমকপ্রদ।  

নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের পাশ দিয়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল তার। সেই যাওয়া-আসা থেকেই কৌতূহল জেগে ওঠা। মনের খোরাক জোগাতে ২০১৭ সালে একদিন ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। জানতে চান ক্লাবটায় আসলে কী হয়। তখনও শুটিং সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জানা ছিল না। যখন জানতে পারলেন খেলাটা অস্ত্র আর গুলির সমন্বয়ে লক্ষ্যভেদের খেলা, তখন বোধহয় নিজেও জানতেন না তার পরবর্তী জীবনের পথ গড়ে দেবে এই খেলাটাই। আগ্রহ থেকে তারপরই খেলাটার দিকে ঝুঁকে পড়া। 

পাঁচ বছরের পরিক্রমায় কলি এখন বাংলাদেশের আশার প্রদীপ। একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ইতিবাচক স্কোর করে চমক দেখিয়ে চলেছেন। চোখ রেখেছেন ২০২৪ ফ্রান্স অলিম্পিকের দিকেও। সেখানেই অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মানজনক ফল বয়ে আনতে চাইছেন তিনি।

শুরু থেকেই কলি ছিলেন বিস্ময় কন্যা। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে শুটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পরের বছর আন্তক্লাব প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিতে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছেন। মাঝের দুই বছর করোনার কারণে ছন্দপতন হলেও ফর্মে ফিরতে সময় লাগেনি। তারপর জাতীয় দলের ক্যাম্পে এসে এয়ার রাইফেল ইভেন্টে একের পর এক ইতিবাচক স্কোর করে নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে গেছেন।

মিসরের কায়রোতে গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ব শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ৬২৯ দশমিক ২ স্কোর করে ১৩৪ জনের মধ্যে হয়েছেন ১৪তম। কায়রোর পর দক্ষিণ কোরিয়াতে এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপেও দারুণ পারফরম্যান্স ছিল। এখানেও অপ্রত্যাশিতভাবে চমকে দেন ফাইনালে ওঠে।

প্রথমবার শুটিংয়ের কোনও চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জয়ের আশা জাগে তারই হাত ধরে। তবে ফাইনালে ০ দশমিক ৩ পয়েন্টের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। ২৫৯ দশমিক ১ পয়েন্ট পেয়ে চতুর্থ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। আর এবার তো বিশ্বকাপ শুটিংয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল একক ইভেন্টে সেরা আটে জায়গা করে নিয়ে বড় চমকই দেখিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বাছাইয়ে ৫৩ জন শুটারদের মধ্যে কলি ৬২৮ দশমিক ৪ স্কোর করে ষষ্ঠ হয়েছেন, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস।

তবে ভালো স্কোর করেও পদক না জেতার আফসোস আছে নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে আসা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান কলির, ‘আমার আত্মবিশ্বাস কমেনি। মিসর ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর ইন্দোনেশিয়াতে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছি। অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছে। নিজের মতো করে খেলার চেষ্টা করেছি কোচের নির্দেশনায়। আশা করছি এভাবে খেলতে পারলে একসময় আরও সাফল্য আসবে।’

কলির সাফল্যের পেছনে পরিবার, ফেডারেশনের চেষ্টা ও ইরানের কোচ জায়ের রেজাইয়ের অবদান কম নয়। কলি জাকার্তা থেকে বলছিলেন, ‘আমার বাবা ও মা পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। ফেডারেশন তথা ইরানি কোচসহ অন্যদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কীভাবে অংশ নিতে হয় সেভাবেই তৈরি হচ্ছি। সব মিলিয়ে আমি একা নই, অন্যরাও চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশের হয়ে ইতিহাস গড়ার পর ২০২৪ ফ্রান্স অলিম্পিকে চোখ রাখছেন কলি। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্সে পড়ুয়া এই বিস্ময় কন্যা যে করেই হোক কোটা কিংবা পয়েন্ট সংগ্রহ করে সেখানে কিছু একটা করে দেখানোর স্বপ্ন দেখছেন, ‘আসলে প্যারিস অলিম্পিকের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। সবকিছু সেভাবেই এগিয়ে চলেছে। এর আগে একাধিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমরা চাইছি সেগুলোতে ভালো করতে, যেন প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সুযোগ আসে।’

কলি ছাড়াও জাতীয় দলে নতুনদের নিয়ে আশাবাদী ইরানি কোচ জায়ের রেজাই। তিনি বলেছেন, ‘সবকিছুই সিস্টেম মানার ফলে হচ্ছে। যে কারণে পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। কলি একজন ভালো শুটার, মেধাবীও। তাকে নিয়ে আমি আশাবাদী। সে যখন ক্যাম্পে এসেছিল তখন স্কোর ছিল ৬০৫। আর এখন কী করছে তা তো সবাই জানেন। শুধু ও নয়, নতুনরাও ভালো করছে।’

ফ্রান্স অলিম্পিকের আগে কলির পারফরম্যান্সের ফুল ফুটলেই হয়!