ছেলেকে ছাড়া ঈদ চিন্তা করলেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে!

২০১৫ সালে লিভার সিরোসিসে স্ত্রী রেশমা আখন্দের মৃত্যু হয়, এরপর একমাত্র ছেলে আজমাইন আখন্দ আয়ানকে ঘিরেই বাবা আমজাদ আখন্দের পথচলা। ছেলের কথা চিন্তা করে আর বিয়ের দিকে পা বাড়াননি। পেশায় হ্যান্ডবল কোচ আমজাদ এখন মালদ্বীপে ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর হয়ে কাজ করছেন। পেশাগত কারণে দেশে এসে এবার ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে পারছেন না। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের কথা ভেবে  সুদূর দ্বীপদেশটিতে বসে মন কাঁদছে জাতীয় দলের সাবেক এই খেলোয়াড়ের।

যদিও মালদ্বীপে আজ ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। আনন্দ আর উৎসবের মাধ্যম সেখানে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও আছেন। তারপরও কাল বাংলাদেশের ঈদ আনন্দে নিজে সামিল হতে না পেরে কষ্ট পাচ্ছেন ৪৬ বছর বয়সী আমজাদ।

এর আগে ২০১৫-২০১৯ সাল পরযন্ত মালদ্বীপ জাতীয় দলের কোচ থাকার সময় ঈদুল আজহা সেখানে উদযাপন করেছেন। তবে ঢাকাতেই ছেলের সঙ্গে ঈদুল ফিতর কেটেছে। এবারই প্রথম রোজার ঈদে ছেলের পাশে নেই তিনি।

বিষন্ন কণ্ঠে আমজাদ মালে থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘রোজার ঈদে ছেলের পাশে থাকতে পারবো না তা চিন্তা করতে পারিনি। মালদ্বীপে বয়সভিত্তিক ট্রেনিং প্রোগ্রাম রয়েছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় আসতে পারছি না। এদিকে ছেলে আমার একাই ঈদ করবে। আসলে ছেলেকে ছাড়াই ঈদ চিন্তা করলেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে!'

স্ত্রীর মৃতুর পর ছেলেকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা নিজেই করতেন। দাদী আসুরা আখন্দের কাছে বড় হলেও দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে বাবা বলতে অন্তঃপ্রাণ। আমজাদ বলছিলেন, ‘ছেলে এবার নারিন্দা স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। ঈদে আমি ওকে নতুন জামা কিনে দিতাম। এক সঙ্গে নামাজসহ সময় কাটাতাম। এবার কিছুই হচ্ছে না। ও নিজের মতো করে করছে। আমার ও ছেলের এ জন্য অনেক মন খারাপ। তারপরও ছেলেকে বলেছি নিজের মতো ঈদ আনন্দ করতে।‘

স্ত্রীর মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তানকে আঁকড়ে ধরে পথচলার চেষ্টা করছেন হ্যান্ডবল কোচ আমজাদ

পেশার কারণে মালদ্বীপের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক আমজাদের। বাংলাদেশে কাল ঈদ। আর আজ মালদ্বীপে উদযাপিত হচ্ছে। ভিন্ন অভিজ্ঞতাও হচ্ছে।

প্রবাসীদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পরে মালদ্বীপ হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির বাসায় দুপুরে আমন্ত্রণও রক্ষা করেছেন।

নানানা খাবারের স্বাদও  নিয়েছেন। আমজাদ নিজেই বললেন, ‘এখানে ঈদের আনন্দ নিজস্ব ঢংয়ে পালন হয়।  ঈদে ওদের বিশেষ খাবারও খেলাম। ফ্রায়েড রাইস ও চিকেন ফ্রাই তো ছিলই। পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছের কারি ছিল। বিশেষ করে টুনা ফিস। এছাড়া মিষ্টান্নও ছিল। '

বিকালে মালের রাস্তায় দুই ঘণ্টার জন্য সব গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। মালদ্বীপের এই ঈদের কালচারাল অনুষ্ঠানকে বলে বডুবেড়ু। আমজাদ আজ সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন এভাবে, ‘বিকালে ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত স্হানীয় কালচারাল গ্রুপ ঢাক ঢোল বাজিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছে। এসময় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। সবার বাসার সামনে বিভিন্ন ধরনের খাবারও থাকে। যে যার মতো নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। অনেকটা কাফেলার মতো। এমন অভিজ্ঞতা নতুন।’

তবে সবকিছু ছাপিয়ে একমাত্র ছেলের কথা ভেবে যারপরনাই বিষণ্ন আর আনমনা আমজাদ! ছেলেই যে সবকিছু তার!