অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও (২৫ এপ্রিল) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কাজ করছিলেন সালেহা সুলতানা নাজমা। শুরুতে পিএবিএক্সে (টেলিফোন অপারেটর) কাজ করলেও পরবর্তীতে হিসাব শাখায় পদায়ন হয় তার। আজকে কাজ করা অবস্থাতেই তার অকস্মাৎ মৃত্যুতে ক্রীড়া পরিষদে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা।
সালেহা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে প্রাথমিক অবস্থায় শুশ্রূষার পর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই দুপুরের দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তার মৃত্যুর জন্য যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলামকে পরোক্ষে দায়ী করে তার অপসারণ ও বদলির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কর্মচারী ইউনিয়ন।
এমন ঘটনার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ইউনিয়নের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে সেখানে। হয়েছে স্লোগান। সচিবের অপসারণও চেয়েছেন তারা।
কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি নতুন সচিব স্যার সবাইকে সেভাবে ছুটি দিতে চাইতেন না। প্রশাসন বেশ কড়াকড়িভাবে চালান। একটু এদিক-সেদিক হলেই শোকজ ও বকাবকি করেন। সালেহা আগের দিন ছুটি চেয়েছিল, দেওয়া হয়নি। অথচ সে অসুস্থ ছিল। ছুটি না পেয়ে শোকজের ভয়ে অসুস্থ অবস্থায় অফিস করেছে। তার মানসিক অবস্থাও ভালো ছিল না। তার অসুস্থ অবস্থায় আমরা পাশে থাকতে পারিনি। তার স্বামীকে ডেকে এনে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। সালেহার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে সবাই বিচার চেয়ে আন্দোলন করছে।’
প্রতিবাদ সমাবেশ করেও তারা থেমে থাকেননি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টাওয়ারের অষ্টম তলার অফিস তালা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেন সচিবসহ কেউ ভেতরে ঢুকতে না পারে।
সেখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা তার অপসারণ ছাড়া অফিসের তালা খুলবো না। সচিব স্যারকে এখান থেকে বদলি করতে হবে। প্রশাসন কড়াকড়ি ঠিক আছে। কিন্তু বাজে ব্যবহার মেনে নেওয়া কিংবা আতঙ্কে থেকে কাজ করা কঠিন। এমন অবস্থা হয়েছে যে সালেহা অসুস্থ হলে অন্যরা তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারেনি। কারণ ভয়। যদি এ কারণে শোকজ করা হয়!’
তবে ক্রীড়া পরিষদের উত্তাল মুহূর্তে যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে সরাসরি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কেন মানসিক অত্যাচার করবো? সরকারি চাকরি বিধিবিধান মেনে সবকিছু হয়। এখানে ব্যক্তিগত কিছু করার সুযোগ নেই। এছাড়া কেউ ছুটি চাইলে নিয়ম অনুযায়ী মঞ্জুর করি। আর সালেহার ছুটির আবেদন মঞ্জুর করবে সহকারী পরিচালক। আমি নই। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। যখন আমি ঘটনা শুনেছি অধীনস্থদের বলেছি ওর পাশে দাঁড়াতে। যা যা প্রয়োজন তা করতে।’
এরপর শোকজ ও বাজে ব্যবহার নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমরা অনেক পিছিয়ে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সচেষ্ট থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে পরামর্শকমূলক সতর্কতা চিঠি দেওয়া হয়েছে। অফিস পরিচালনা করতে শৃঙ্খলার স্বার্থে পোশাক ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু বললে সেটা বাড়িয়ে বলে আমার প্রতি অবিচার করা হবে।’
কর্মচারী ইউনিয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি সকালে ক্রীড়া পরিষদে গিয়ে একটু পর সরকারি অন্য কাজে বেরিয়ে পড়েছি। আর সেখানে যাওয়া হয়নি। এখন তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি শুনে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এখন দেখা যাক কী হয়। তবে আমি কাউকে মানসিক অত্যাচার করার মতো কাজ করিনি। এটা মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব ক্রীড়া সানাউল হক আসেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তার কাছে সব অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আমরা আপনাদের বক্তব্য মাননীয় মন্ত্রী (নাজমুল হাসান পাপন) ও সচিব মহোদয়কে অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। মন্ত্রী ও সচিবের ওপর আপনারা ভরসা রাখেন।’