কৃষককে ই-কমার্স সেবা দিতে আসছে ‘ই-শপ’

ই-কমার্স-ই শপদেশের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক কৃষকদের ই-কমার্স সেবা দিতে আসছে ‘ই-শপ’ কর্মসূচি। সমাজের যে অংশের মানুষ কখনও কম্পিউটার, ইন্টারনেটের আওতায় আসবে না মূলত: তাদেরই ই-কমার্স সেবা দিতে হাতে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। এতে কৃষকের পাশাপাশি জেলে, তাঁতিসহ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিও থাকবে। আগামী মার্চের মধ্যে এই ই-শপ কর্মসূচি চালু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ডটকম ও আলীবাবা ডটকমের আদলে এই ই-শপ গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ফিউচার সলিউশন্স বিজনেস (এফএসবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা সাদেকা হাসান সেঁজুতি।
আরও পড়তে পারেন: সিরাজগঞ্জে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা
তিনি জানান, এফএসবির উদ্যোগে এবং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাস্তবায়নে এই প্রকল্পে কারিগরি সহয়তা দিচ্ছে আমার দেশ আমার গ্রাম প্রকল্প।
সেঁজুতি বলেন, অ্যামাজন, আলীবাবা যে প্রক্রিয়ায় সারাবিশ্বে তাদের সেবা সম্প্রসারণ করছে,ঠিক সেই আদলে আমরা সারাদেশে ই-শপের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করব। দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা ই-শপ সেন্টার করব। ওইসব সেন্টার থেকে সংশ্লিষ্ট জেলার একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজনের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করা হবে।  
তিনি বলেন, হয়তো দেখা গেল একেবারে প্রত্যন্ত একটি গ্রামে একজন নারী একটি নকশী কাঁথা তৈরি করেছেন, কিন্তু তিনি বিক্রি করতে পারছেন না। আমরা তার কাছ থেকে নকশী কাঁথা সংগ্রহ করব, কৃষকের কাছ থেকে কৃষিজাত পণ্য নেব, তাঁতির কাছ থেকে তাঁতের কাপড় সংগ্রহ করে জেলার ই-শপে রাখব। যারা প্রয়োজন মনে করবেন, তারা ওই ই-শপের ওয়েবসাইটে গিয়ে পছন্দের পণ্য কিনতে পারবেন। আমাদের বিভাগীয় শহরেও ই-শপের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, সব ই-শপ নিয়ে একটি সেন্ট্রাল ‘ই-শপ’ তৈরি করা হবে। যাদের কাছ থেকে একবার পণ্য সংগ্রহ করা হবে,তারা সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স সাইটে ই-শপের জন্য পণ্য সরবরাহ করে এই সেবার আওতায় আসবেন।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা ই-শপ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দেশের প্রতিটি জেলায় এই ই-শপ তৈরি করা হবে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষও ই-কমার্সের আওতায় আসবে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের ফলে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার তরুণের কর্মসংস্থান হবে।  কর্মসংস্থানের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেও  জানান তিনি।  
জানা যায়, ইয়াং বাংলার পুরস্কার পাওয়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে ১ হাজার তরুণকে বেছে নেওয়া হবে। তাদের মধ্যে ৫০০ জন পুরুষ, ৫০০ জন নারী। তারাই হবেন ই-শপ কর্মসূচির উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে ই-শপ চালাবেন। যে যে জেলার বা এলাকার তাদের সেই জেলার জন্য নির্বাচন করা হবে।উদ্যোক্তারা জেলার অলিতে গলিতে ঘুরে পণ্য সংগ্রহ করে ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী সরবরাহ করবেন বলে জানা গেছ।
আরও পড়তে পারেন: জামায়াত নেতাদের ফাঁসির বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে পাকিস্তান
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক জেলার মানুষ অন্য এলাকার ই-শপ থেকেও পণ্য অর্ডার করতে পারবেন। অর্ডার পেলে এক এলাকার ই-শপ সংশ্লিষ্ট এলাকার ই-শপের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবে। একই নেটওয়ার্ক হওয়ায় কোনও ধরনের ঝামেলা হওয়ার শঙ্কাও কম বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।
আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইসিটি বিভাগ প্রতিটি জেলায় ই-শপ গড়ে তুলতে লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন, সেন্টারের ফার্নিচার, ডেকোরেশন, কম্পিউটার (২টি), ইন্টারনেট সংযোগ দেবে। আর ই-শপ সেন্টারের জন্য জায়গা, ঘর দেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইয়াং বাংলা কমিউনিটির সদস্যরা।
সাদেকা হাসান সেঁজুতি জানান, এখন সার্ভে করে দেখা হবে কোন এলাকায়, কারা কী ধরনের পণ্য তৈরি করেন। কৃষকরা কী উৎপাদন করেন, ওই এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কী কী পাওয়া যায়, সংগ্রহ করার পদ্ধতি। তিনি বলেন, গত মার্চ থেকে সার্ভে শুরু করা হয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা মার্চ মাসের মধ্যেই ই-শপ চালু করব।তিনি উল্লেখ করেন, এটি এক বছরের একটি প্রকল্প। এই সময়ের মধ্যে ই-শপ চালু করতেই হবে।

 /এমএনএইচ/এমএসএম /