পড়ন্ত ডাক বিভাগকে টেনে তুলছে পোস্ট ই-সেন্টার কর্মসূচি

পোস্ট ই-সেন্টার কর্মসূচিপড়ন্ত ডাক বিভাগকে টেনে তুলতে জোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারি বরাদ্দ না বাড়িয়ে বরং সীমিত সম্পদ দিয়েই এর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ইমেজ বাড়ানো গেলে ডাক বিভাগ ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব।

ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, চিঠির সংখ্যা দিন দিন কমছে, কমছে প্রচলিত পদ্ধতিতে মানি-অর্ডার বা টাকা পাঠানো, সুদের হার কমায় আমানতও কমেছে ডাকঘর সঞ্চয়ী ব্যাংকে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফসি) চালু হওয়ায় ডাকঘরে মোবাইলে টাকা পাঠানোর সংখ্যাও কমে যাওয়ায় ডুবতে বসেছে ডাক বিভাগ। দেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘরকে সচল রাখাও বড় ধরনের দায় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশাল খরচের বিপরীতে আয় কমে যাওয়ায় ডাক বিভাগের সংকট দিন দিন বাড়ছে। মূলত আয় বাড়ানোর বিভিন্ন সেবাভিত্তিক প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ডাক বিভাগ ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে।

এদিকে ডাক বিভাগকে সক্রিয় এবং মনিটর করতে সপ্তাহে একদিন করে ডাক বিভাগে অফিস করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, ডাক বিভাগে অফিস করা গেলে যাবতীয় কার্যক্রম মনিটর করা সহজ হবে।

বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সফলভাবে মোবাইল সিম নিবন্ধন শেষে তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতের ৪টি প্রকল্পকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, টেলিটকের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন এবং ডাক বিভাগের উন্নয়ন। সময় নির্দিষ্ট না করলেও তিনি বলেছেন, অগ্রাধিকার না দিলে আসলে ডাক বিভাগকে টেনে তুলে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। ডাক বিভাগের অনেক সম্পদ ও জায়গা (স্পেস) রয়েছে। এসব ব্যবহার করেই এর উন্নয়ন সম্ভব।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার সব ধরনের ভাতা গ্রামীণ ডাকঘর ও পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এরইমধ্যে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সহযোগিতায় টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাইলট ভিত্তিতে পোস্টাল ক্যাশকার্ডের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। পরে অবশ্য আরও কয়েকটি জেলা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এজন্য ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই প্রকল্পের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে।

তারানা হালিম জানিয়েছিলেন, ডাক বিভাগ ডিজিটাইজড করার পদক্ষেপ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে আরও নতুন কিছু উদ্ভাবনী প্রকল্প হাতে নেব। তিনি জানান, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড (ডাক বিভাগের ডেবিট কার্ড) দিয়ে যেন সব ব্যাংকের এটিম বুথ থেকে টাকা তোলা যায়, আমরা সে পদেক্ষেপই নিতে যাচ্ছি।

গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৬টি পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। এক মাস আগের তথ্য অনুযায়ী দেশে চালু মোট পোস্ট ই-সেন্টারের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০৬টি। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ এবং ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে ৮ হাজার ৫০০টি পোস্ট ই-সেন্টার চালু করবে সরকার। আইএসপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রমটি শুরুতে ম্যানুয়ালি সম্পন্ন হলেও চলতি বছর থেকে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়ার কথা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এম. রায়হান আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পোস্ট ই-সেন্টার চালু হয়েছে। ডাক বিভাগের উন্নয়নের নিয়ামক হিসেবে এটি কাজ করবে। তিনি জানান, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ভাতা প্রদানের পাইলট প্রকল্প চালু হয়। পরে সংশ্লিষ্ট উপজেলাসহ দেশের ৫টি জেলায় পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ৬ লাখ মানুষকে ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের সঙ্গে এই প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি মোতাবেক বিধবা ভাতাও পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে বিরতণ শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি)’ প্রকল্পের আওতায় পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার প্রায় ৬ লাখ উপকারভোগীর ভাতা বিতরণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে ডাক বিভাগের একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক ভাতা পাচ্ছে উপকারভোগীরা।


/এইচএএইচ/এজে/