‘৫ বছর ধরে প্রমোশন নেই, ইনক্রিমেন্ট নেই, ৫ মাস বেতন পাই না’

সিটিসেল‘৫ বছর ধরে আমাদের কারও প্রমোশন হয় না। ৫ বছরে কারও ইনক্রিমেন্টও হয়নি। বারবার বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ। সামনে সুদিন এলে সব দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের খাতিরে আমরা সব মেনে নিয়েছি। গত ৫ মাস ধরে (বেশির ভাগের ৪ মাস, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ৫ মাস) বেতন পাই না। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। কিভাবে যে একেকটি দিন পার করছি তার খোঁজ কেউ নেয়নি। হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে তো আমরা পথে বসে যাব। আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া তো আর কোনও পথ খোলা ছিল না।’ কথাগুলো বললেন মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মনিরা শারমীন।  
সাত দফা দাবি আদায়য়ে সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। অপারেটরটির প্রধান কার্যালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বকেয়া বেতন পাওনাসহ সাত দফা দাবিতে এদিন বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধন মনিরা শারমীনও অংশ নেন। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব যে, আমাদের বাঁচানোর খাতিরে কোম্পানিটিকে বাঁচান। যদি তা না-ও হয় তাহলে আমরা যেন বাঁচতে পারি, আমাদের বাঁচার একটা ব্যবস্থা করে দিন। সেটা কর্মসংস্থান হোক বা এমন কোনও ক্ষতিপূরণ যা দিয়ে অন্তত আমরা একটা মুদি দোকান দিয়ে বসতে পারি। যাতে আমাদের বাচ্চারা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। আমরাও যেন সম্মানজনক একটা জীবন ফিরে পেতে পারি।

মনিরা শারমীন জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে সিটিসেলে কর্মরত। তিনি মনে করেন, একটি বন্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি জননেত্রী, দেশের মা। আমরা আপনার সন্তান। আমাদেরকে বাঁচান।’  

সিটিসেলের কর্মীরা নিজেদের করণীয় ঠিক করতে পিবিটিএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (পিবিটিএলইইউ) এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

সাত দফা দাবিতে সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধনইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল করিম বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি সাতটি। চার মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান, ঈদের বোনাস প্রদান, প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা প্রদান, গ্র্যাচুইটি প্রদান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ বছরের পূর্ণাঙ্গ বেতন-ভাতা প্রদান, কেটে নেওয়া করের সনদ প্রদান অথবা সমপরিমাণ অর্থ ফেরত এবং এলএসএ বোনাস প্রদান।
আশরাফুল করিম বলেন, সরকারঘোষিত সময় সীমা আগামী ২৩ আগস্ট শেষ হবে। এর আগে ২২ আগস্টের মধ্যে আমাদের সব দাবি মেনে নিতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনি বিকল্প কর্মসংস্থান ও বকেয়া বেতন-ভাতা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ারও আবেদন জানান।
তিনি আরও জানান, সিটিসেলে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ৪৭৭ জন। আর অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ২০০ জন। মানববন্ধনে প্রধান কার্যালয়ের সবাই অংশ নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে থেকে কর্মীরা আসতে পারেননি। আমরা অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, ৪ মাস ধরে বেতন পান না। হাত খালি। বাস ভাড়াটুকু যোগাড় করতে পারলেই তারা এসে আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে সিটিসেল কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন তারা আজ (বুধবার) সচিবালয়ের গিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির সঙ্গে কথা বলবেন। ফিরে এসে আমাদের জানাবেন পরবর্তী কার্যক্রম।
জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির সঙ্গে সিটিসেলের বৈঠকটি হয়নি।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সিটিসেলের এক কর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে এখানে বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। আমাদের ৪ মাসের বেতন বাকি। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তাদের অনেকে বাড়িভাড়া সময় মতো দিতে না পেরে বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ তার পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছেলে-মেয়ের স্কুলের বেতন বাকি। অনেকে ভালো স্কুল থেকেও সন্তানকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। এরচেয়েও লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে, যা বলার মতো নয়। সবই এই প্রতিষ্ঠানটির কারণে। আজ আমরা যে দাবি তুলেছি তা যদি মিটিয়ে দেওয়া হয় তাহলেও কোনওমতে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন পাওয়া যাবে।’        

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল বন্ধের (লাইসেন্স বাতিল) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রাহকদের অপারেটর বদলের জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে দিন গণনা শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, সিটিসেল কর্তৃপক্ষের কাছে লাইসেন্স ফি এবং তরঙ্গ ফি বাবদ ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

/এইচএএইচ/এইচকে/

আরও পড়ুন: সাত দফা দাবিতে সিটিসেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন