বায়োমেট্রিক সিমে ভুল এক শতাংশেরও কম!

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিবায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল সিমে এরর (ভুল বা অশুদ্ধ) ১ শতাংশেরও কম বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেন, ‘টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের এররের ক্ষেত্রে যেখানে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় ২-৩ শতাংশ, সেখানে আমাদের বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের এরর স্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে নিচে রয়েছে। যদিও এতে তৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করছি, কিভাবে এররের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যায়।’ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তারানা হালিম বলেন, ‘জিএসএমএ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন) বাংলাদেশের বায়োমেট্রিক সম্পন্নের কাজটিকে সফল কেস স্টাডি এবং উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ায়।’ তিনি আরও জানান, ‘এবার সিটিও (কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন অর্গানাইজেশন) সম্মেলনে ৫-৭ মাসের মধ্যে প্রায় ১২ কোটি সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সফল করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।’

তারানা হালিম আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়াও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে চায় কিন্তু তাদের দেশের মোবাইল অপারেটররা সহযোগিতা না করার সেদেশের সরকার বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হতে পারছে না। মালয়েশিয়া আমাদের কাছে সিম নিবন্ধনের এই মডেলটি নিতে আগ্রহী।’

টেলি প্রতিমন্ত্রী জানান, একটি গ্রুপ বরাবরই চেয়েছে সরকারের এই উদ্যোগটি ব্যর্থ করতে কিন্তু তারা সমর্থ হয়নি। সরকার কাজটি সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করেছে। কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের (জালিয়াত চক্রের) সিম নিবন্ধন থাকায় তাদের সহজে চিহ্নিত করা গেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে বিকাশের টাকা হাতিয়ে নেওয়াদের চিহ্নিত করা, নিহত জঙ্গিদের পরিচয় উদঘাটনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সুফল দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সম্প্রতি মোবাইলফোনের মাধ্যমে বিশিষ্টজনকে হুমকি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারানা হালিম বলেন, ‘যারা এ ধরনের হুমকি পেয়েছেন, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। যে মোবাইলফোন নম্বর থেকে হুমকি এসেছে, তা বায়োমেট্রিক ডাটাবেজে রক্ষিত ডাটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে বের করা সম্ভব কে বা কারা এই কাজ করেছে।

বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের ফলে পাওয়া সুফল এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হুমকি ধমকির বিষয় এবং ডটবাংলা ডোমেইনের হালনাগাদ খবর জানাতে মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিমসহ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, এনটিএমসি, এনআইডি ডাটাবেজ কর্তপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। এ সময় এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাবেন তারা।

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করার পরও এখনও এ ধরনের ঘটনা (জালিয়াতি, হুমকি-ধমকি) ঘটে যাওয়া এবং সে বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তারানা হালিম বলেন, ‘মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা এখনও সচেতন না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’ তিনি সিম নিবন্ধন কালে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের আঙুলের ছাপ দেওয়া সময় ডিভাইসে ভেসে ওঠা নম্বরটি নিজের কিনা মিলিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন। বারবার এই কাজ করা হলে তিনি বারবার নিজের নম্বরটি মিলিয়ে দেখবেন। নিজে না বুঝলে যিনি বোঝেন তাকে সঙ্গে নেবেন। তাহলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের অন্যের নামে নিবন্ধন (বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে) হওয়া সিম না কেনার পরামর্শ দেন। ওই সিম কিনলে মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ভয়ঙ্কর বিপদে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি বাজারে অন্যের নামে নিবন্ধন হওয়া সিম বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যিনি এই কাজটি করছেন তিনি যে কী ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছেন, তা তিনি কল্পনাও করতে পারবেন না।’ যারা এই কাজ করছে তিনি তাদের এই বিপজ্জনক পথ পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

 আরও পড়ুন: ‘১০০ অ্যাপ ভালো করছে, ৪০০ পর্যবেক্ষণে’

/এমএনএইচ/