অনুমোদন নেই তবু জনপ্রিয় অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল সেবা

অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল সেবাবাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)–এর অনুমোদন নেই, এরপরও ব্যক্তিগত কিছু মোটরবাইক ঢাকার রাস্তায় চলছে বাণিজ্যিকভিত্তিতে। যার পোশাকি নাম ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস।’ মোবাইল অ্যাপভিত্তিক এই সেবা রাজধানীতে হালে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিস হলো স্মার্টফোনের অ্যাপভিত্তিক একটা সেবা, যে সেবায় মোবাইলফোনে আগে থেকে একটি অ্যাপ ইনস্টল করা থাকছে। ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনে অ্যাপের মাধ্যমে মোটরবাইক ডাকলে দুয়ারে এসে উপস্থিত হচ্ছেন বাইকচালকরা। স্বল্প খরচে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। এসব মোটরসাইকেল ব্যক্তিগত হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হয়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ করছে। এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে রাস্তায় কোনও মোটরসাইকেল নামছে না। যেগুলো রাস্তায় চলছে, সেগুলোকে (বাড়তি উপার্জনের কথা বলে) নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে পাঠাও, স্যাম (এসএএম), চলো প্যাকেট ইত্যাদি নামে মোটরসাইকেল সেবা চালু রয়েছে। এছাড়া চলো বন্ধু নামে আরেকটি সেবা শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য কোনও অনুমোদন নেই। যারা কাজটি করছেন, তারা বেআইনিভাবে কাজটি করছেন।

রাজধানীতে চালু রয়েছে চলো প্যাকেট নামের একটি বাইক সেবা। এই সেবার মাধ্যমে ই-কমার্সের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী দেওয়ান শুভ বলেন, ‘সাড়া ভালো পাচ্ছি। আমাদের করপোরেট ক্লায়েন্ট তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, চলো প্যাকেটের নিজস্ব কিছু মোটরসাইকেল রয়েছে। রয়েছে কিছু ফ্রিল্যান্সার মোটরসাইকেল চালক। যারা যখন ফ্রি থাকছেন তা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। গ্রাহকদের প্যাকেট ডেলিভারিতে কোনও ধরনের ক্ষতি হলে (চুরি হলে, ছিনাতাই হলে বা হারিয়ে গেলে) তাদের প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।’

দেওয়ান শুভ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিগগিরই আমরা স্মার্টফোনের অ্যাপভিত্তিক চলো বন্ধু নামে মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। আমাদের সবকিছু রেডি, এখন কেবল চালুর অপেক্ষা।’ তিনি জানান, ‘চলোর বন্ধুর প্রতি চালকের অবশ্যই বৈধ ড্রাভিং লাইসেন্স থাকবে ও যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই হেলমেট থাকতে হবে।’

চলো

বর্তমানে চালু রয়েছে স্যাম (শেয়ারে মোটরসাইকেল) নামের একটি মোটরসাইকেল সেবা। এর মূল প্রতিষ্ঠান ডাটাভক্স সেল লিমিটেড। এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ১ এপ্রিল চালু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির মোটরসাইকেলের সার্ভিস নিতে হলে গুগল প্লেস্টোরে গিয়ে অ্যাপটি (স্যাম-এসএএম) ডাউনলোড করে নিতে হবে।

মোটরসাইকেলভিত্তিক এই সেবাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিজেকে উদ্ধৃত না করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল সার্ভিসগুলোর কোনও অনুমোদন নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে এর একটা সুফল প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরাতে নীতিমালা অবশ্যই প্রয়েজন। ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া মোটরসাইকেলের লাইসেন্স নিয়ে তা বাণিজ্যিকভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ নেই। যারা কাজটি করছেন তারা বেআইনিভাবেই করছেন। তাই শৃঙ্খলাফেরাতে নীতিমালার কোনও বিকল্প নেই।      

এদিকে পাঠাও নামের একটি প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও কুরিয়ার সার্ভিস দেওয়ার জন্য ২০১৫ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। জানা যায়, ২০১৬ সালের মাঝামাঝির পরে যাত্রী পরিবহন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস হুসেইনের কাছে তার প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ এই প্রতিবেদককে তিনি তার পিআর এজেন্সির (জনসংযোগকারী প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে বলেন, আপনার কোনও কিছু জানার থাকলে আমার পিআর এজেন্সি জানান। তারা আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আপনাকে জানাবে।

জানা গেছে, রাজধানীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কয়েক শত মোটর বাইক রয়েছে যেগুলো যাত্রী পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। আর বাইক চালকরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করে যাত্রী সার্ভিস দিয়ে থাকে। এজন্য প্রতিটি রাইডের (একবার যাত্রী পরিবহন করলে) আয় থেকে নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১৫-২০ শতাংশ অর্থ চালকরা দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে চলো প্যাকে, স্যাম ও পাঠাওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো চালকদের মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখিয়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যুক্ত করছে। আর সময় সাশ্রয়ী বলে এই সার্ভিসটি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

/এমএনএইচ/আপ-এসএমএ/