উন্মুক্ত হলো স্টিফেন হকিংয়ের পিএইচডি থিসিস

স্টিফেন হকিংইন্টারন্যাশনাল ওপেন একসেস সপ্তাহকে সামনে রেখে সোমবার ইন্টারনেটে উন্মুক্ত হলো বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ের পিএইচডি থিসিস। এর নাম ‘প্রপার্টি অব এক্সান্ডিং ইউনিভার্স’।
১৯৬৬ সালে সম্পন্ন করা স্টিফেন হকিংয়ের এই থিসিস এতদিন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অব স্কলারলিতে ছিল। ওপেন একসেস সপ্তাহ উপলক্ষে এটি উন্মুক্ত হওয়ায় এখন যে কেউ ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন।
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি অফিস অব স্কলারলি কমিউনিকেশন সোমবার এক বার্তায় জানিয়েছে, অধ্যাপক স্টিফেন হকিংয়ের অনুমতি নিয়েই তার পিএইচডি থিসিস সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। এখন থেকে এটি ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের ওপেন একসেস সংগ্রহশালা ‘অ্যাপোলো’তে পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে স্টিফেন হকিং বলেন, ‘আমার পিএইচডি থিসিস ওপেন একসেসের মাধ্যমে উন্মুক্ত হওয়ার ফলে আশা করছি, সারাবিশ্বের অনেকেই এটি পড়তে ও এ বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে। পৃথিবীর যে কেউ শুধু আমার থিসিসটি পড়তেই পারবে তা নয়, বরং নিজেদের নানা গবেষণায়ও কাজে লাগাতে পারবে।’
বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী উল্লেখ করেন— ‘একজন তরুণ পিএইচডি গবেষক হিসেবে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে কাজ করতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। এখানেই স্যার আইজ্যাক নিউটন, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ও আলবার্ট আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কাজ করেছেন।’
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি অফিস অব স্কলারলি কমিউনিকেশনের উপ-প্রধান ড. আর্থার স্মিথ বলেন, ‘পিএইচডি থিসিস গবেষণা ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক হতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই ওপেন একসেস ভিত্তিক গবেষণায় উৎসাহী হয়ে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও মেডিসিন বিষয়ে দারুণ সব থিসিস গবেষণা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। ফলে অনেকে এসব বিষয়ে আরও উন্নত গবেষণা করতে পারবেন।’

ড. আর্থার স্মিথ উল্লেখ করেন, ‘চলতি মাস থেকেই ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির সব পিএইচডি গবেষকের থিসিসের ডিজিটাল কপি জমা নেওয়া হবে। যারা ওপেন একসেসে নিজেদের থিসিস উন্মুক্ত করতে রাজি হবেন তাদের কাজগুলো একইভাবে উন্মুক্ত করা হবে। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই বিশেষ করে নোবেল পাওয়া ৯৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে থিসিস জমা দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’

নিজের ফেসবুকে পেজে থিসিস উন্মুক্ত হওয়ার খবর জানান স্টিফেন হকিংঅ্যাপোলোর লাইব্রেরি সার্ভিসের পরিচালক ড. জেসিকা গার্ডনার বলেন, ‘৬০০ বছরের পুরনো ইতিহাস সমৃদ্ধ ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি। এখানে এখন পর্যরন্ত ২০ হাজার ডিজিটাল তথ্য, ১৫ হাজার গবেষণা নিবন্ধ, ১০ হাজার মূল্যবান গবেষণা সংক্রান্ত ছবি, দুই হাজার ৪০০ থিসিস রয়েছে।’

জানা যায়, আইজ্যাক নিউটন ও চার্লস ডারউইনের মতো বিজ্ঞানীদের মূল গবেষণার কপিও অ্যাপোলোর লাইব্রেরিতে আছে। এগুলো ডিজিটাল করা হচ্ছে বলে জানান ড. জেসিকা। তার আশা, অধ্যাপক হকিংয়ের মতো এ গবেষণাপত্রগুলোর একসেসও সবার জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।

শারীরিকভাবে ভীষণরকম অচল ও মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত স্টিফেন হকিং ২০০৯ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির সারাবিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘লুকাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথমেটিক্স’ থেকে অবসর নেন। এ পদে এর আগে স্যার আইজ্যাক নিউটনও দায়িত্ব পালন করেন। 
থিসিসের কথা হাতে লিখে জানিয়েছেন স্টিফেন হকিংহলিউডে ২০১৪ সালে হকিংয়ের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয় ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’ নামের একটি ছবি। এতে তার ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা পুরস্কার জেতেন ব্রিটিশ তারকা এডি রেডমেইন।  
আন্তর্জাতিকভাবে ‘ওপেন একসেস উইক’ শুরু হয়েছে সোমবার (২৩ অক্টোবর)। এবারের স্লোগান ‘ওপেন ইন অর্ডার টু…’। তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক এই আয়োজন চলবে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত।

* উন্মুক্ত হওয়া স্টিফেন হকিংসের পিএইচডি থিসিস পাওয়া যাবে https://doi.org/10.17863/CAM.11283 অথবা https://cudl.lib.cam.ac.uk/view/MS-PHD-05437/1 ঠিকানায়।

সূত্র: ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট