যে কারণে র‍্যামের বাজারে আগুন

 র‍্যামদেশীয় বাজারে প্রযুক্তি পণ্য র‌্যামের দাম বেড়ে গেছে তরতর করে। ছয় মাস ধরেই একটু একটু করে এর দাম বাড়ছিল, সম্প্রতি তা হয়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। র‌্যামের সংকট তৈরি হওয়া ও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকাই এর কারণ। সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, বাজার থেকে স্মার্টফোন প্রতিষ্ঠানগুলো (বিশেষ করে আইফোন) মেমোরি ও চিপ কিনে স্টক করে ফেলায় ঘাটতি পড়েছে র‌্যামের।

ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই র‌্যামের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপের ক্ষেত্রে। আবার অনেকের ভাষ্য, ‘র‌্যামের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো একেক সময় একেক দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকে। তারা স্মার্টফোনের র‌্যামের দিকে ঝোঁকায় বাজারে কম্পিউটারের র‌্যামের সংকট দেখা দিয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যাদের ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ আগেই মজুত করা ছিল তারা কম দামে বিক্রি করতে পারলেও নতুন আমদানির বেলায় সংকট তৈরি হবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ক্রেতাদের ওপরে। কম্পিউটার আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

বাজারে এ-ডাটা র‌্যামের আমদানিকারক গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল ফাত্তাহ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে র‌্যামের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কী কারণে দাম বেড়েছে সে বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ছয় মাস আগে কিছু র‌্যামের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৮০০ টাকায়। আর ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকার র‌্যাম এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। দাম বৃদ্ধির এই হারকে আশঙ্কাজনক অভিহিত করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন— এতে করে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের দাম বেড়ে যাবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ-ডেটা র‌্যামও ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ দামে (৮ গিগা র‌্যাম ৭ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ৭০০ টাকায়) বিক্রি হচ্ছে। আর ৪ গিগার র‌্যাম বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। ট্রান্সসেন্ড ব্র্যান্ডের ৮ গিগা (ডিডিআর-৪) র‌্যামের দাম ৭ হাজার ৭০০ টাকা।

অন্যদিকে টিম ব্র্যান্ডের ৪ ও ৮ গিগার (ডিডিআর-৪) র‌্যাম বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৫০০ ও ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। এই দুই ব্র্যান্ডের র‌্যাম কিছুদিন আগেও অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানা যায়।

এ দুটি ব্র্যান্ডের র‌্যামের বাংলাদেশের অনুমোদিত পরিবেশক ইউসিসি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সারোয়ার মাহমুদ খান বলেন, ‘সরবরাহ ঘাটতির কারণে র‌্যামের দাম বেড়েছে। বছরের এই সময়ে নতুন নতুন মডেলের মোবাইল ফোন বেশি আসে বাজারে। ফলে র‌্যাম উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগ সেদিকে। আমরা ধরে নিয়েছি এ কারণে সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে। কোনও প্রতিষ্ঠানের র‌্যাম উৎপাদন ড্রপ করলে অন্য কোম্পানি দাম র‌্যামের দাম বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণে এবার র‌্যামের দাম বেড়ে থাকতে পারে।’

দেশে টুইনমস, কিংস্টোন, কোরশেয়ার ও প্যাট্রিয়ট র‌্যামের অনুমোদিত পরিবেশক স্মার্ট টেকনোলজিস। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘র‌্যামের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিশ্চিতভাবেই ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপের দাম বাড়বে। ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের পুরনো মজুদ এখনও থাকায় বাজারে এ দুটি আইটেমের দাম এখনও বাড়েনি। নতুন পণ্য এলেই দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়বে।’

স্মার্ট টেকনোলজিসের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) জানান— ৪ গিগার টুইনমস, কোরশেয়ার, প্যাট্রিয়ট ও কিংস্টোন (ডিডিআর-৪) র‌্যামের দাম যথাক্রমে ৪ হাজার ৩০০ ও ৪ হাজার ৪০০, প্যাট্রিয়ট ৪ হাজার ৩০০ ও ৪ হাজার ৩০০ টাকা। আবার এসব ব্র্যান্ডের ৮ গিগা র‌্যামের দাম ৭ হাজার ৭০০ থেকে ৭ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছুদিন আগেও এসব র‌্যাম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।

এদিকে, র‌্যামের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে নকল র‌্যাম। নকল র‌্যামের দাম আসল র‌্যামের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ক্রেতারা না বুঝে ও না চিনে নকলের প্রতি ঝুঁকছেন। নতুন র‌্যাম যুক্ত করার পর কম্পিউটার আগের মতো চলছে না, গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে, কখনও হ্যাং করছে, কাজের মাঝে হঠাৎ আপনাআপনি রিস্টার্ট নিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব হচ্ছে কম্পিউটারে নকল র‌্যাম লাগানোর ফলে। কারণ নকল র‌্যাম কম্পিউটারে ব্যবহার করা হলে এ ধরনের সমস্যা হয়।

সম্প্রতি বাজারে নকল ও কপি র‌্যামের সরবরাহ বেড়ে গেছে ব্যাপকহারে। অতি সম্প্রতি তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, নকল র‌্যামের কারণে অচল হয়ে পড়তে পারে শত শত কম্পিউটার।

প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ— দেশের প্রয‌‌‌ুক্তি বাজারে ট্রান্সসেন্ড, এ-ডাটা, টুইনমস, টিম ব্র্যান্ডের র‌্যাম রয়েছে ও অনুমোদিত পরিবেশক থাকলেও এগুলো কপি হচ্ছে। অন্যদিকে ডাইনেট, টি-র‌্যাম নামের স্বল্প পরিচিত ব্র্যান্ডের র‌্যামও রয়েছে বাজারে। এর পাশাপাশি বাজারে পাওয়া যায় নন ব্র্যান্ডের কিছু র‌্যাম। ‌

দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা চীন ও হংকং থেকে নন ব্র্যান্ডের র‌্যাম কিনে দেশের বাজারে ছাড়ছেন বলে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ রয়েছে, চীন ও হংকংয়ের বাজারে পাওয়া যায় নামহীন বিভিন্ন ধরনের র‌্যাম। ওই নাম-পরিচয়হীন ব্র্যান্ডের র‌্যামের উৎপাদকরা ক্রেতার দেওয়া নাম বসিয়ে (প্রিন্ট) দিচ্ছে র‌্যামের গায়ে।

এমনকি নামি ব্র্যান্ডের র‌্যামের আমদানিকারকদের নিরাপত্তা সূচক ট্যাগও তৈরি করে বসিয়ে দেওয়া হয় মোড়কের গায়ে। এসব কারণে কোনোভাবেই আসল-নকল চেনার উপায় থাকে না।

আসল র‌্যামের সঙ্গে নকল বা কপি র‌্যামের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এতে ব্যবহার করা হয় লো-কোয়ালিটি বা ডাউন গ্রেডের চিপ। এর পিসিবি বোর্ডও থাকে নকল।

ইউসিসি’র প্রধান নির্বাহী সারোয়ার মাহমুদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদক) র‌্যাম তৈরি করে। তাদের কাছে যে কোনও নামের র‌্যাম দিতে বললে এর ওপর ওই নাম প্রিন্ট করে দেয়। এসব র‌্যাম নিম্নমানের। এর চেয়েও নকল চিপ ও পিসিবি বোর্ড দিয়ে তৈরি করা র‌্যামগুলো নিম্নমানের। এসব পণ্যই বাজার দখল করে নিচ্ছে।’