‘ফিল্ম তৈরির আগে যদি টিকিট বিক্রির চিন্তা মাথায় থাকে তাহলে ভালো ফিল্ম নির্মাণ করা সম্ভব নয়। ফিল্ম তৈরি শেষ হলেই টিকিট বিক্রির চিন্তা করতে হবে। টিকিটের টাকা দিয়েই পরবর্তী ফিল্মের ফান্ড তৈরি হবে।’ বৃহস্পতিবার ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয় দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ‘ধন্যবাদ’ নামক অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন অস্কারজয়ী বাংলাদেশি নাফিস বিন জাফর।
শুরুতেই নাফিস বলেন, ‘আজ আমি আমার ফিল্ম ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলবো। হয়তো আমার গল্প শুনে কেউ কেউ উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। আমার যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে আমি একা ছিলাম। আর এখন আমার সঙ্গে ৫০০ লোক কাজ করছে। সিনেমা তৈরি একার কাজ নয়। এটি একটি টিম ওয়ার্ক।’
নাফিস আরও বলেন, ‘অ্যানিমেশন ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হয়। যেহেতু আমি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী তাই আমার এ সম্পর্কে ধারণা ছিল। বাকিটা আমি কাজ করতে করতে শিখেছি। শুরুতে যে কাজ করতে আমার এক মাস লেগেছে, পরবর্তীতে সেই একই কাজ আমার করতে কয়েক মুহূর্ত লেগেছে।’
আমি ছিলাম একা, শুরুও করেছিলাম একা উল্লেখ করে নাফিস বলেন, ‘আর এখন আমি টিমকে নেতৃত্ব দিই। সবাইকে ম্যানেজ করাই আমার কাজ। আমার স্বপ্ন আমি অন্যদের সহযোগিতায় পূরণ করছি। যার ফলশ্রুতিতে আমি দু’বার অস্কার পেয়েছি। অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে তেমনি লাগে গণিত, জ্যামিতি, ভিজুয়াল ইফেক্টস। এটা আসলে একটা গল্প বলার মতো। দৃশ্যগুলোকে সফটওয়্যারে সাজাতে হয়। এজন্য স্টোরি টেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি তরুণদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা যদি এই সেক্টরে কাজ করতে চান তবে থিয়েটারে কাজ করুন। নাটকে কাজ করুন। প্রথমে ছোট গল্প তৈরি করুন, শর্ট ফিল্ম বানান। প্রয়োজনে টিভিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন। এসব কাজ করতে করতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কোন কাজটা ভালো লাগে। একটা নাটক কিংবা ছবিতে শুধু ক্যারেক্টার ছাড়াও পেছনে অনেক কিছু থাকে। সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। না হলে ভালো ফিল্ম মেকার হওয়া যাবে না।’
নাফিস বিন জাফর আরও বলেন, ‘গ্রাফিকস বা অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করতে হলে তিনটি বিষয় একজন মানুষের মধ্যে থাকতেই হবে। এগুলো হলো প্রচণ্ড ধৈর্য, ইচ্ছেশক্তি ও কাজের প্রতি ভালোবাসা। এগুলো না থাকলে কোনওভাবেই ভালো করা যাবে না।’
ধন্যবাদ অনুষ্ঠান চলাকালে পুরো হল অব ফেম ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। বেশিরভাগই ছিলেন তরুণ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব নাফিস বিন জাফর ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় গুছিয়ে বলেন। এক দর্শকের জবাবে নাফিস বলেন, ‘তোমার কাজ ৫০ ভাগ মানুষ পছন্দ করবে, ৫০ ভাগ মানুষ করবে না। এতে থেমে গেলে চলবে না। যে ৫০ ভাগ মানুষ তোমার কাজ পছন্দ করেনি তাদের জন্য তোমাকে আরও মনোযোগী হয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে তুমি একদিন সফলতা পাবেই।’
অপর এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে নাফিস বলেন, ‘কোন সফটওয়্যার বেস্ট এটা না ভেবে বরং ভাবা উচিত তুমি কোন সফটওয়্যারে ভালো করবে। যেটাতে কাজ করে তুমি আত্মবিশ্বাসী সেটাতে তোমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা কর। নিজেকে প্রশ্ন কর সেরা কাজটা করতে পেরেছ কিনা। যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে পৃথিবীর কেউ তোমাকে আটকাতে পারবে না।’
সন্ধ্যায় একই স্থানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনফারেন্স। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল থেকে চারটি বাসে করে শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান স্থলে আনা হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলপর্যায় থেকে প্রোগ্রামিংয়ে উৎসাহী করতেই এই আয়োজন বলে জানান বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।