‘আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পেরেছি’

পুরস্কার নিচ্ছেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালপ্রথমবারের মতো নানা আয়োজনে পালিত হলো জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) দিবস। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভিন্ন খাতে অবদানের জন্য ১৩টি ক্যাটাগরিতে ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরস্কার ২০১৭’ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তিনি বলেন, ‘বিজয়ের এ মাসে দিবসটি ঘোষণা করা হয়েছে যা সত্যিই আনন্দের। ২০০৮ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় তখন এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তখন আজকের দিনের আলোচিত কিছু বিষয় যেমন: ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে, ফাইবার অপটিক ক্যাবল, ইকোসিস্টেম বিষয়গুলো সম্পর্কে তেমন জানাশোনাও ছিল না। সেই প্রত্যয় বা রূপকল্প সত্যিকার অর্থেই কাজ করছে এবং গত নয় বছরের পথ চলায় আমাদের আজকের যে অবস্থান সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি কতটুকু অবদান রাখছে সেটা প্রকাশ্যই দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমানে আমাদের গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। প্রযুক্তি সেবাকে যে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা এগিয়ে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বিগত নয় বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি এবং দেশের সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করছে।’
আইসিটিতে অবদানের জন্য এ অনুষ্ঠানে লেখক, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা হয় যা মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনও দেশে আছে। আমাদের দেশে একটা অসাধারণ তরুন প্রজন্ম আছে, আমরা তাদেরকে ব্যবহার করতে চাই। ফেসবুক, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সার্ভিসগুলো আমাদের দেশের জন্য বানাতে উদ্যোগ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানাই। এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমাদের তরুণদের সে সক্ষমতা আছে।’
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবায় অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে। আনিসুল হকের দুই কন্যা সম্মাননা গ্রহণ করেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রযুক্তি পাতার প্রধান মুহম্মদ খান, চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফরিদুর রহমান পান্থ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার উপ-প্রধান প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান।

এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল সেবায় অবদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, সফটওয়্যার ইনোভেশন ক্যাটাগরিতে লিডস করপোরেশন লিমিটেড ও লিডসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আবদুল আজিজ, আইসিটির মাধ্যমে নাগরিক সেবায় অবদানের জন্য ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া এবারের তথ্যপ্রযুক্তি পুরস্কার পেয়েছেন। আইসিটি শিক্ষায় অবদান এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের উৎকর্ষতার বিবেচনায় শিক্ষা ক্যাটাগরিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কৃষকদের তথ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর; আইসিটির মাধ্যমে নাগরিক সেবায় অবদানের জন্য স্থানীয় সরকার ক্যাটাগরিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

আইটি খাতের ক্ষেত্রে ‘শ্রেষ্ঠ রপ্তানিকারকের’ পুরস্কার পেয়েছে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড; দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড ‘সেরা অনলাইন ব্যাংকিং সেবা’ এবং সেবা এক্সওয়াইজেড আইটি খাতের ‘সেরা স্টার্টআপ’ -এর পুরস্কার পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ও আইসিটি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করেন টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক।   

এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ র‌্যালি। বিকেলে আলোচনা সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট ফর আইসিটি। এছাড়া দিবসটি উদযাপনে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ইয়াং বাংলার আয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সহযোগিতায় ৪১টি জেলার ১২৩টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে অনলাইন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।