কেন জনপ্রিয় হচ্ছে না মোবাইলের ‘ভয়েস মেসেজ’ সেবা

ছবি: অনলাইন থেকে নেওয়াদেশের সব মোবাইলফোন অপারেটর চালু করেছে সেবাটি, কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে ফোনে না পেলে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে পরামর্শও দেওয়া হয় গ্রাহককে ‘ভয়েস মেসেজ’ পাঠানোর জন্য। কিন্তু তারপরও জনপ্রিয় করা যায়নি মোবাইল ফোনে ভয়েস মেসেজ তথা মেইল সেবা। কেন এই সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে না তা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি’র প্রধানও জানেন না বলে জানালেন। তবে সেবাটি জনপ্রিয় করা গেলে গ্রাহকরা আরও ভালো মানের সেবা (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) পেতেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘একটি ফোন কল করে যখন কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পাওয়া সম্ভব হয় না তখন গ্রাহক আরেকটি বা একাধিক কল করে থাকেন। একের পর এক কল করার ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কে চাপ পড়ে। ফলে অন্য আরেকজন এই নেটওয়ার্ক জ্যামের কারণে নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারেন না। যদি কল করে কারও মোবাইল ফোনে পৌঁছানো সম্ভব না হয় তাহলে গ্রাহক ভয়েস মেসেজ সেবা ব্যবহার করতে পারেন। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যখন মেসেজটি পাবেন তখন তিনি ফিরতি কল করবেন বা ভিন্ন কোনও উপায়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন।’
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মূলত পদ্ধতিটির সঙ্গে পরিচিত না হওয়া, সঙ্গে সঙ্গেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পেতে চাওয়া, যথাযথ প্রচার না থাকার কারণে এই সেবাটি গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে না। প্রায় এক বছর হলেও এখনও ভয়েস মেসেজ সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যাও সন্তোষজনক নয় বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মোবাইলে ভয়েস মেইল সেবা সেবা চালু হয়। ভয়েস মেইল এমন একটি সেবা, যার মাধ্যমে গ্রাহক যে কাউকে কথা রেকর্ড করে পাঠাতে পারবেন। এসএমএস এর মতোই গ্রাহক ভয়েস মেইল পাবেন। ওইদিন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদের মোবাইল ফোনে ভয়েস মেইল পাঠিয়ে এ সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর রমনায় বিটিআরসি ভবনে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
সেবাটি চালু উপলক্ষে তখন ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘ভয়েস মেইল সেবা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দেশে এটি চালু রয়েছে। আমাদের দেশেও এই সেবা চালু ছিল। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো। আমার বিশ্বাস, জনগণ এই সেবা ব্যবহারে এগিয়ে আসবে।’

ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে মোবাইল ফোন অপারেটর রবির মাধ্যমে এই সেবা চালু হচ্ছে। আগামীতে বাংলালিংক এবং টেলিটকের গ্রাহকরাও এই সেবা ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। একই অনুষ্ঠানে রবির প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, রবির ১২ লাখ গ্রাহক ভয়েস মেইল সেবা ব্যবহার করছেন। এজন্য অতিরিক্ত কোনও চার্জ নেই। ভয়েস কলের সমানই ভয়েস মেইল সেবার চার্জ নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ভয়েস মেসেজ সেবাটা জনপ্রিয় করতে পারছি না। অথচ এটা দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে, সব অপারেটর চালুও করেছে। অপারেটরগুলোর জন্য এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহক সাড়া সেভাবে পাচ্ছি না।’

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বারবার ফোন করলে নেটওয়ার্কের ওপর চাপ পড়ে। আমরা বুঝি। মাসে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে গ্রাহক এই সেবা নিতে পারেন। বিদেশে এটা মোবাইল ফোনে একটা বাধ্যতামূলক ফিচার।’

যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় কি হয়, কাউকে ফোন করা হলো দেখা গেল তিনি ব্যস্ত আছেন বা অন্যকোনও কাজে আছেন। মোবাইল বলছে, ‘আই অ্যাম নট এভেইলেবল। লিভ ইওর মেসেজ।’ কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তার সুবিধাজনক সময়ে মেসেজ দেখে ফোনদাতাকে কল করতে পারেন। আমি গ্রাহকদের কোনওভাবেই কনভিন্স করাতে পারছি না। এই সেবা নিলে গ্রাহকদের বারবার ফোন করতে হয় না।’

নিজেকে উদ্ধৃত না করে একজন নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত মোবাইলে কলারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করে। এটা একটা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও বটে। ফলে ভয়েস মেসেজ সেবা গ্রাহক সহজে নিতে চায় না।’

তিনি আরও বলেন, “এই সেবাটি নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রচারও সেভাবে চোখে পড়ে না। ফলে নতুন এই বিষয়টি নিতে গ্রাহক আগ্রহ বোধ করেন না। মোবাইলে অনেকে শোনেন, ‘এত টাকার/পয়সার বিনিময়ে ভয়েস মেসেজ পাঠাতে পারবেন।’ বিষয়টি অনেকের কাছে ঝামেলার বা বোঝার ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনে রাখতে হবে, সবাই প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ নাও হতে পারেন। এসব কারণে সেবাটি জনপ্রিয় হচ্ছে না।”

তবে তার মতে, সেবাটি জনপ্রিয় করা গেলে গ্রাহকই ভালোমানের সেবা পেতে পারবেন। কাউকে হয়তো একবারই কল করেই পেয়ে যাবেন। নেটওয়ার্ক ফ্রি থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারও আরও সহজ হবে।