বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচির ৪০ শতাংশ নারী সফল

প্রশিক্ষণ কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠানদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সামিনা আক্তার রিপা রসায়নবিদ্যায় স্নাতক করার পরে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাড় হয় না, এদিকে সংসারে আর্থিক সহযোগিতার দায়িত্ব এসে পড়ে। দু’চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। এই সময়ে একদিন খবরের কাগজের মাধ্যমে জানতে পারেন বাড়ি বসে বড়লোক প্রকল্পের খবর। অনলাইনে নিবন্ধন করে কম্পিউটারের বেসিক ও অ্যাডভান্স কোর্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে টিএমএসএস-এ সুযোগ পান মাসব্যাপী আউটসোর্সিং করার করার। এসইও, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ডাটা এন্ট্রি কোর্স করে নিজেকে যোগ্য করে তোলেন। পরে ওডেস্কে (বর্তমানে আপওয়ার্ক) যোগাযোগ করে কাজ শুরু করেন। তার প্রথম আয় ছিল ২৪০ ডলার।
তিনি জানান, বর্তমানে তার মাসিক আয় ৫০০-৭০০ ডলার। তিনটি মেয়ে সামিনা আক্তার রিপার সঙ্গে কাজ করেন, যাদের প্রত্যেককে তিনি মাসে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দেন। নিজে স্বাবলম্বি হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও স্বাবলম্বি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। 
শুধু সামিনা আক্তার রিপা নন, এরকম আরও অনেকে আছেন যারা বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বি হয়েছেন। শুধু নারীদের জন্যই এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে সরকারের
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। জানা গেছে, বাড়ি বসে বড় লোক প্রকল্পের সাফল্যের হার ৪০-৪৫ শতাংশ। প্রশিক্ষণ শেষে টিএমএমএস থেকে একটি প্রতিবেদন আইসিটি বিভাগে পাঠানো হয়। পরে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই হারকে যুক্তিযুক্ত বলে মূল্যায়ন করা হয়।

জানা গেছে, বাড়ি বসে বড়লোক কর্মসূচিটি ২০১৩ সালের পরে শুরু হয়। প্রকল্প শেষ হয় ২০১৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে। ১৮ মাসের কর্মসূচি ছিল এটি। সরকারের আইসিটি বিভাগের এই উদ্যোগে কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহযোগী হয় টিএমএসএস (ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ)। সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক বছরে ছয় কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ করে সরকার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছাড় করা হয় দুই কোটি ছয় লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয় ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এক বছর মেয়াদের এ কর্মসূচিতে দেশের ৬৪ জেলার ২৭৬ উপজেলার ১২ হাজার ৪২০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি উপজেলার ৪৫ জন নারীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও আরও বেশি নারীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণের ছিল দুটি পর্ব, বেসিক ও অ্যাডভান্সড। দুই দিনের বেসিক প্রশিক্ষণে যারা ভালো করে তাদেরই পরে ৫ দিনের অ্যাডভান্সড প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অ্যাডভান্সড প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল গ্রাফিকস ডিজাইন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।

টিএমএসএস এর পরিচালক (আইসিটি) নিগার সুলতানা জানান, আমরা মেয়েদের প্রথমে ২ দিনের বেসিক প্রশিক্ষণ দিই। যারা ভালো করে এবং কম্পিউটার বিষয়ক কিছু জ্ঞান রয়েছে তাদেরই ৫ দিনের অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ দিই। তিনি জানান, প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু এখনও চালু রয়েছে হেল্প ডেস্ক। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা এখনও যদি কোনও সমস্যায় পড়ে তাহলে হেল্প ডেস্কে যোগাযোগ করে সমাধান নিতে পারে। তিনি বলেন, দেখা গেছে আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ না নিয়েও অনেকে ফোন করে সমস্যার সমাধান চান। আমরা তাদের প্রয়োজন মাফিক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি।