ঢাকার শিক্ষার্থীদের ৮০ ভাগই ইন্টারনেটসহ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে: জরিপ

গণমাধ্যম সাক্ষরতা যাচাই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকঢাকা মহানগরী ও টঙ্গীর ১৬টি বিদ্যালয়ের ওপর জরিপ করে সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮০.৩ শতাংশই ইন্টারনেটসহ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। তাদের সংবাদ গ্রহণ করার মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক ৩২.৩ শতাংশ, ইউটিউব ২২.৬ শতাংশ, সংবাদপত্র ৩৫.৪ শতাংশ, টেলিভিশন ৪৯.৫ শতাংশ, রেডিও ৬.৪ শতাংশ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ১৯ শতাংশ এবং অন্যের মুখ থেকে শোনা ৩৮.৭ শতাংশ। এসব বিদ্যালয়ের ৫০০ ছাত্রছাত্রীর ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়।

সোমবার সকালে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য  জানানো হয়। ঢাকা মহানগরীর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের গণমাধ্যম সাক্ষরতা যাচাই জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড-এর সহায়তায় বৈঠকটি আয়োজিত হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শতকরা ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭২ ভাগ শিক্ষার্থীর ফেসবুক এবং ৪৭.৫ ভাগ শিক্ষার্থীর ইউটিউব অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

গোলটেবিল বৈঠকে অবাধ তধ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মাধ্যমিক স্কুলপর্যায়ে গণমাধ্যম সাক্ষরতা কার্যক্রম চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই অবাধ বিচরণকে কাজে লাগিয়ে তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এ লক্ষে সরকার, গণমাধ্যম, শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন সাকমিড-এর ডেপুটি ডিরেক্টর সৈয়দ কামরুল হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাকমিড-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আফিয়া পিনা এবং গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর সহযোগী প্রফেসর ড. সরকার বারবাক কামাল।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত এক দশক ধরে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। এরই মধ্যে জনগণ তার সুফল পেতে শুরু করেছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ- বর্তমানের কিশোর এবং তরুণরা কোনও পূর্বপ্রস্ততি ছাড়াই ইন্টারনেটের মতো ব্যাপক একটি জগতে প্রবেশ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। তারা বলেন, এই জরিপের ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের তথ্য ও সংবাদের সংবেদনশীলতা, সংবাদ বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার এবং ইন্টারনেট জগত সম্পর্কে পরিচিতি হতে সক্ষম হবে।

এই গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, সাকমিড ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করেছে। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণির ’আইসিটি’ বিষয়বস্তুর পাশাপাশি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা অবগত থাকলে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশপ্রেমিক ও উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। এর ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি দক্ষ, কর্মমুখী ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের কাজ ত্বরান্বিত হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন ‘শিক্ষার্থীদের জীবনকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে এবং তাদের সুবিবেচনা বোধকে জাগাতে হবে। তথ্য নিতে গিয়ে যাতে অতথ্য তাদের মধ্যে প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাকমিড-এর বোর্ড সদস্য নজর-ই-জিলানী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মান্নান। বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর মিডিয়া স্ট্যাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান ড. জুড উইলিয়াম হেনিলো, জাতীয় কারিকুলাম ও টেক্সট বুক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) প্রফেসর এ কে এম রেজাউল হাসান, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের এডুকেশনাল টেকনোলোজি এক্সপার্ট মো. রফিকুল ইসলাম সুজন, ইউনেস্কোর এডুকেশন বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক মনিনুর রশিদ, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি কে এম শহীদুল হক, ব্র্যাক কর্মকর্তা মোফাকখারুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র অনুষ্ঠানে মতামত প্রদান করেন।