তিনি বলেন, ‘সরকারের এই মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া বা পরিকল্পনা করার সময় নেই। আগামী মেয়াদে আমরা সরকার গঠন করতে পারলে এই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষ প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান (কলসেন্টার, ডাটা এন্ট্রি, হার্ডওয়্যারের কাজ) ইত্যাদির জন্য পৃথক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তির বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করা হবে তারা যেন হিজড়াদের কর্মসংস্থানে মানবিক হয়। তাদের নতুন জীবন দিতে তারা যেন এগিয়ে আসে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সরকার হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় ট্রাফিক পুলিশে তাদের চাকরি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পরে আর এগোয়নি। দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী (২০১২ সালের হিসাব) দেশে হিজড়ার সংখ্যা ১২ হাজারের মতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সংখ্যাও সঠিক নয়। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষিত মাত্র ২ শতাংশের কিছু বেশি।
বাংলদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)-এর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আমরা তাদের কলসেন্টারে কাজ দেওয়ার ব্ষিয়ে চেষ্টা করছি। তবে সময় লাগবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছি। গবেষণায় কলসেন্টারে হিজড়াদের কাজ করার বিষয়ে যেসব সমস্যা হতে পারে তা সমাধানের একটা উপায় বের করা হবে।’
হিজড়াদের নিয়ে সামাজিক ট্যাবুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হিজড়াদের কলসেন্টারে কাজ দেওয়ার আগে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। কারণ, কলসেন্টারে ফোন করে কেউ হিজড়ার কণ্ঠস্বর শুনলে বিব্রত হতে পারে, কথা নাও বলতে চাইতে পারে। আগে এগুলো বদলাতে হবে। তা না হলে আমরা যে উদ্দেশ্যে ওদের কর্মসংস্থানে উদ্যোগী হবো, সেটা নাও হতে পারে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘হিজড়াদের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো তাদের কণ্ঠস্বর। এটা কীভাবে স্বাভাবিক করা যায় সে বিষয় নিয়েও আমরা ভাবছি। তাদের এই কণ্ঠস্বর নিয়ে কলসেন্টার চালানো মুশকিল হবে।’ তার পরামর্শ হলো, ডাটা এন্ট্রির কাজ হিজড়ারা যেকোনও ধরনের সমস্যা ছাড়াই করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণদান কালে হিজড়াদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে ‘হিজড়া ক্যারিয়ার’-এর চেয়ে ক্যারিয়ার আরও ভালো হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, হিজড়াদের ‘ব্রেইন’ খুবই প্রখর, শারীরিক সক্ষমতাও যেকোনও পুরুষ বা নারীর তুলনায় অনেক বেশি। প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে তারা। এ ধরনের বিশেষায়িত কাজ হিজড়াদের নতুন জীবন দিতে পারে। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের হার্ডওয়্যারভিত্তিক যেকোনও কাজ, যন্ত্রাংশ সংযোজন, প্ল্যান্টের কাজ, গ্রাফিকস ডিজাইন, সিকিউরিটি পণ্য ও সেবা তৈরিতে তারা দক্ষতা দেখাতে পারবে।