এমএনপি এলো, সুবিধা মিলবে?

মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটিভয়েস কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, কল ড্রপ, দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েস কলের নিম্নমান, গ্রাহকসেবার অসন্তুষ্টি থেকে মুক্তি মিলতে পারে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবায়। নম্বর বদল না করে অপারেটর পরিবর্তনের এই স্বাধীনতা গ্রাহককে দিতে অক্টোবরের প্রথম দিন থেকে চালু হলো এই সেবা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতদিন মোবাইল নম্বরের মালিকানা ছিল সংশ্লিষ্ট অপারেটরের। এমএনপি সেবা চালুর পরে নম্বরের মালিকানা এখন গ্রাহকের। গ্রাহক চাইলে তার নম্বর না বদলে যেকোনও সময় (নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে) অপারেটর বদল করে ভালো মানের সেবার খোঁজ করতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্টরা এ-ও বলছেন, সব অপারেটরের সেবার মান তথা ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ একই রকম বা ভালো নয়। ফলে যে অপারেটরেই যাওয়া হোক না কেন, সবার সেবার অবস্থা একই রকম। তবে অপারেটরগুলোকে টিকে থাকতে হলে এখন গ্রাহক সংখ্যা নয়, ভালোমানের সেবা দিয়েই টিকে থাকতে হবে।

জানতে চাইলে টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রাহককে ভালো সেবা না দিয়ে কোনও অপারেটরই টিকে থাকতে পারবে না। নম্বর একই থাকায় গ্রাহকই বারবার অপারেটর বদল করবে।’ এই সেবা চালুর ফলে গ্রাহকের আরও ভালো মানের সেবা পাওয়ার পথ তৈরি হলো বলে তিনি মনে করেন।     

 নিজের পরিচয় উদ্ধৃত না করে একজন তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী বলেন, একটি নম্বর আমি ১৮-২০ বছর ধরে ব্যবহার করছি। বর্তমানে এই নম্বরই আমার পরিচয়। এই নম্বরে ফোন করে অনেকেই আমাকে খুঁজে পায়। সমস্যা হলো, অপারেটরটির সেবা খারাপ হওয়ার পরও আমাকে মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ নতুন অপারেটরে গেলে আমাকে নতুন নম্বর নিতে হবে, সবাইকে জানাতে হবে। এটা একটা জটিল কাজ, সম্ভবও নয়। কিন্তু এমএনপি সেবা চালু হওয়ায় যে অপারেটর আমাকে ভালো সেবা দেবে আমি সেই অপারেটরের সেবা গ্রহণ করবো। নম্বর বদল না হওয়ায় আমাকে কোনও ধরনের ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে না। তিনি মনে করেন, এটাই একজন মোবাইল গ্রাহকের এখন সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা।  

জানা গেছে, এমএনপি সেবা চালুর প্রথম দিনেই কাস্টমার কেয়ারগুলোতে গ্রাহকের ভালো সাড়া দেখা গেছে। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক সূত্র জানায়, গ্রাহকের সাড়ায় তারা সন্তুষ্ট। নতুন গ্রাহক এসেছে। একই সঙ্গে কিছু গ্রাহক ছেড়েও গেছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাংলালিংকের করপোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের সিনিয়র ব্যবস্থাপক আংকিত সুরেকা বলেন, ‘বাংলালিংক সাফল্যের সঙ্গে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী এমএনপি সেবা চালু করেছে। আজ (সোমবার) বিকাল পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি গ্রাহক অন্য অপারেটর থেকে আমাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চেষ্টা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আজ সেবাটি চালু হওয়ার প্রথম দিন, তাই এই ক্ষেত্রে কিছু কারিগরি সমস্যা থাকতে পারে।’

যেভাবে এমএনপি সিম মিলবে

কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে নতুন সিম তুলতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৫ মিনিট। কাস্টমার কেয়ারকর্মীরা গ্রাহককে জানাবেন, তিনি নতুন সিম পাবেন কিনা। কারণ হিসেবে জানানো হয়, প্রথমেই গ্রাহকের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ (আঙুলের ছাপ) মিলিয়ে দেখা হবে। সেখানে কোনও গরমিল থাকলে গ্রাহককে জানানো হবে। এছাড়া যদি কোনও পোস্টপেইড গ্রাহকের বিল বকেয়া থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট অপারেটর সবুজ সংকেত পাঠাবে না কাস্টমার কেয়ারে। ফলে কোনও বিল বকেয়া থাকলে তা আগে পরিশোধ করে যেতে হবে। পোস্টপেইডে যদি আগের কোনও ডিপোজিট থাকে, তাহলে গ্রাহক ওই ডিপোজিট ফেরত পাবেন। তবে প্রি-পেইড গ্রাহকের সিমে যদি কোনও ব্যালেন্স (টাকা) থাকে বা ইন্টারনেট প্যাকেজ থাকে, তাহলে সেই টাকা খরচ করেই এমএনপি সেবা নেওয়াই উত্তম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সেবা নিতে হলে গ্রাহককে ৫০ টাকা ফি দিয়ে (ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলিয়ে ১৫৭ দশমিক ৫০ টাকা) আবেদন করতে হবে। গ্রাহককে নতুন একটি সিম দেওয়া হবে। গ্রাহক সঙ্গেসঙ্গেই ওই সিম ব্যবহার করতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নতুন সিম চালু হয়ে যাবে। আর আগের সিমটি বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রাহক তার মোবাইলে ‘নো সার্ভিস’ দেখলে তিনি মোবাইল সেট থেকে পুরনো সিম খুলে নতুন সিম সেট করবেন। নতুন সিম মোবাইলে সক্রিয় হলে নতুন যে সিম (ভিন্ন অপারেটরের) নেওয়া হয়েছে সেই অপারেটরের নাম দেখাবে। এমএনপি সেবা চালু করলে তিন মাসের (৯০ দিন) আগে অন্য কোনও অপারেটরে বা আগের (পুরনো) অপারেটরে ফেরত যাওয়া যাবে না। ৯০ দিন পরে গ্রাহক অন্য অপারেটরে যেতে চাইলে সে অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নতুন সিম নিতে পারবেন। নতুন সিম নেওয়ার পর গ্রাহককে ব্যালেন্স রিচার্জ নতুন সিমেই করতে হবে।

তবে সমস্যা হলো পোস্ট পেইড থেকে প্রি-পেইডে বা প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যাওয়া যাবে না।